নাসিক নির্বাচনে অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে : রিজভী

ক্রাইমবার্তা রিপোট:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে এখন চলছে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং বৈধ অস্ত্র জমা নিয়ে নির্বাচনী পরিবেশকে শান্তিপূর্ণ করতে বিএনপির পক্ষ থেকে তিনি জোর দাবী জানান।

আজ সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বাচনী তফশীল ঘোষণার শুরু থেকেই গডফাদারদের দাপট প্রদর্শনের ভঙ্গি ক্রমেই বিস্তারলাভ করছে। সুতরাং আমি আবারও আমার দলের পক্ষ থেকে নাসিক নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত করতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, আগামী ২২ ডিসেম্বর নাসিক নির্বাচন। কিন্তু ভোটগ্রহণের আগেই যেন নাসিক নির্বাচনের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত না হয় সেদিকে নির্বাচন কমিশনকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

নির্বাচন যাতে প্রতিযোগিতামূলক, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ এবং ভোটার’রা যাতে নির্বিঘেœ ভয়ভীতিহীনভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করতে পারে সেটি যেন বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিদায়ের প্রাক্কালে নিশ্চিত করতে পারে সেদিকে দেশবাসী তাকিয়ে আছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি অভিযোগ সর্বত্র উচ্চারিত হয়ে আসছে। এতে যদি ন্যুনতম গ্লানিবোধ কমিশনের হয়ে থাকে তাহলে নাসিক নির্বাচন নিরপেক্ষ করার জন্য কমিশন উদ্যোগী হবে। এবং সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জের দলবাজ প্রশাসনকে সরিয়ে দিয়ে নিরপেক্ষ প্রশাসন বসাতে হবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমানে দেশের সাধারণ জনগণ, স্কুল-কলেজের মেয়েদের অভিভাবক, সমাজের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধারাও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন শাসকদলের সন্ত্রাসীদের হাতে। জমি দখল, প্রাণনাশের হুমকি, শাররীক ও মানষিক নির্যাতন ছাড়াও ক্ষমতাসীনদের হাতে নির্মমভাবে খুন হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসব ঘটনায় আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ জড়িত থাকায় কোন বিচার পাননা ভুক্তভোগীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই এসমস্ত নারকীয় ঘটনা ঘটছে। সংঘটিত কোনো ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হলে দায় এড়াতে নামেমাত্র গ্রেফতার কিংবা দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েই খালাস। বিচারহীনতার কারনে এসব জঘন্য ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশ জুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে ঝিনাইদহের শৈলকূপার একটি বিভৎস ঘটনা। কতটা নিষ্ঠুর ও হিং¯্র হলে এমনটা করা সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। একজন প্রৌঢ় মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মম প্রহারের জলজ্যান্ত দৃশ্যটি ভিডিওতে দেখা গেছে-একটি দোকানের সামনে চেয়ারে বসে থাকা প্রৌঢ় মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার আহমেদ মিজানের ওপর অতর্কিতে লাঠিসোঠা ও ধারালো অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমন চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ বরগুনার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এক মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে মারধর করেছে। মহান স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে পেটানো হয়।
রিজভী বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা প্রেসকাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানকে পিটিয়ে আহত করে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বাহারুল ইসলাম । ২০১৪ সালের জুন মাসে সোনাগাজী উপজেলা সদরে ভাতের প্যাকেট না পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা নুরুল আফসার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা ও এক পুলিশকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
২০১৬ সালের এপ্রিলে আখাউড়ায় মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় যুবলীগ নেতা জনি শিকদার নূরুল ইসলাম শিকদার (৭০) নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে । ডিসেম্বর ২০১৫, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শাহনেওয়াজ শাহানশাহর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া যায়। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় পুলিশের উপস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বসতবাড়িতে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্ছিত হন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা।
রিজভী বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে গালভরা বুলি আওড়ায়, যারা নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে রাজনৈতিক ব্যবসা করে, তারা যে মূলত: স্বাধীনতা বিরোধী ও অগণতান্ত্রিক শক্তি তার প্রমান উল্লিখিত ঘটনাসমূহ। স্বাধীনতাত্তোর তাদের শাসনকালে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের প্রথম শাসনকাল সমাপ্ত হয়। যারা একদলীয় শাসন টিকিয়ে রাখতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাইকারী হারে গ্রেফতার, ক্রসফায়ারে হত্যা, পুলিশী নির্যাতনের শিকারে পরিণত করে গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করে তারা যে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া অন্য যে কোন উদ্দেশ্য নেই, সেটি আজ দেশবাসীর কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রধান উপাদানই হচ্ছে-রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের নিশ্চয়তা। দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে গণতন্ত্রকে অদৃশ্যলোকে পাঠানোই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। সুতরাং তাদের সকল কর্মকান্ডই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে-রাজনৈতিক বিরোধী শক্তিকে নির্মূল, অন্যের সম্পত্তি দখল, রাষ্ট্রীয় কোষাগার তসরুপ। বাক-ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে হরণ করে গহীন নিস্তব্ধতা সৃষ্টি করাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

 

Check Also

হাফিজের কাছ থেকে রাজনীতিতে উৎসাহ না পেয়ে চলে যান সাকিব

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনীতির বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।