বর্তমান সংসদেই ইসির আইন চাই: এরশাদ

এইচ এম এরশাদ
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে একটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে করে এইচ এম এরশাদ এ দাবির পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন-পদ্ধতি সংস্কারে তাঁর প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

১৯ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও সংবাদ সম্মেলন করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ১৩ দফা প্রস্তাব দেন। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে যে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন চায় না কেন? এর জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সংসদের ১৫৪ জন সাংসদ বিনা ভোটে নির্বাচিত এবং বাকি ১৪৬ জন নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ৫ শতাংশ ভোটারের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এই অনির্বাচিত সংসদ যদি কোনো আইন বা বিধি প্রণয়ন করে, তার নৈতিক ভিত্তি হবে খুবই দুর্বল এবং তা অনেক রাজনৈতিক দলসহ দেশবাসীর কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে যেতে পারে।
২৩ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সমঝোতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন প্রণীত হলে তাঁরা অভিনন্দন জানাবেন।

আজ সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, সংবিধানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগসংক্রান্ত আইন প্রণয়নের কথা বলা থাকলেও এ-সংক্রান্ত কোনো আইন নেই। তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইনি কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে এবং বর্তমান সংসদেই এই আইন পাস করতে হবে। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ-প্রক্রিয়াকে যদি আমরা একটি আইন কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে পারি, তাহলেই কেবল কমিশন নিয়োগ বিতর্কমুক্ত হতে পারে।’

বর্তমান নির্বাচন-পদ্ধতির পরিবর্তন চেয়ে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা চলমান নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন চাই। নির্বাচন-পদ্ধতির সংস্কার ছাড়া দেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আশা করা যায় না। এ পদ্ধতির কারণে হয় অর্থের দাপট নতুবা মাস্তানের দাপট জয়ী হয়, পরাস্ত হয় সততা ও যোগ্যতা। এর ফলে সংসদে সৎ, বিজ্ঞ এবং ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে আসতে পারছেন না। বর্তমানে ব্যবসায়ীদের হার এখন ৬০-৬৫ ভাগে পৌঁছে গেছে।’

ভোটের আনুপাতিক হারে আসনবণ্টন:
এরশাদ বলেন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে রাষ্ট্র পরিচালনা হয় দলীয় শাসন ব্যবস্থায়। তাই সংসদ নির্বাচনও দলের ভিত্তিতে হতে পারে। অর্থাৎ, সংসদীয় আসনের ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে এবং ভোটারেরা সরাসরি দলকে ভোট দেবেন, কোনো প্রার্থীকে নয়। প্রতিটি দল প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে আসন পাবে। তবে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের কাস্টিং ভোটের মধ্যে ন্যূনতম ভোট পাওয়ার সীমা থাকবে।

প্রস্তাবে বলা হয়, প্রতিটি দল নির্বাচনে তাদের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেবে। নির্বাচনী ইশতেহারের মতো এই প্রার্থী তালিকা তারা দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করবে। তারপর দলগুলো নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবে। সারা দেশে যে দল বেশি ভোট পাবে, সে দল বেশি সাংসদ পাবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলো জমা দেওয়া প্রার্থী তালিকা থেকে ক্রমিক অনুসারে অথবা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে সাংসদ মনোনীত করবে। যদি কোনো দল কাস্টিং ভোটের ৫০ ভাগ পেয়ে যায়, তাহলে তারা ১৫০ আসন পাবে। আবার যদি কোনো দল কাস্টিং ভোটের ১ ভাগ ভোট পায়, তাহলে সে দল তিনজন সাংসদ পাবে। প্রাপ্ত ভোটের ভগ্নাংশের সুবিধা পাবে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত দল। এ পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ওই আসনের মোট কাস্টিং ভোটের ৫০ শতাংশের চেয়ে ১ ভোট বেশি পেলেই স্বতন্ত্র সদস্য নির্বাচিত হতে পারবেন।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে উপনির্বাচনের প্রয়োজন হবে না। কোনো দলের সাংসদ পদত্যাগ বা মৃত্যুবরণ করলে ওই দলের প্যানেল থেকেই দল শূন্য আসনে প্রার্থী মনোনীত করবে। বর্তমানে বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, গ্রিস, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানিতে সমানুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচিত করার বিধান আছে।

এর আগে এরশাদ ২০১১ সালের মে মাসে ভোটের আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের প্রস্তাব করেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, ‘আমি উপলব্ধি করেছি, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে, তাতে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও বিতর্কহীনভাবে নির্বাচন হওয়া অসম্ভব। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। সব মহল যদি মুক্ত মনে এ প্রস্তাব গ্রহণ করে, তাহলে হয়তো আমরা আশার আলো দেখতে পাব।’

সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ কোনো প্রশ্ন নেননি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, মাঈদুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন খান, সৈয়দ আবু হোসেন প্রমুখ।

Check Also

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে: স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।