বিএনপির মূল ফোকাস খালেদা জিয়ার ১৩ দফা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:বিএনপির সাথে বৈঠকের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ। বিকেল সাড়ে ৪টায় বঙ্গভবনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সাথে সংলাপে বসবেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে নতুন ইসির গঠন কাঠামো নিয়ে গত ১৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার ১৩ দফা প্রস্তাব নিয়েই মূলত আলোচনা করবে বিএনপি। রাষ্ট্রপতি চাইলে একটি নিরপেক্ষ ইসি গঠনে সার্চ কমিটির প্রধান এবং এর সদস্যদের জন্য ১০টি নাম প্রস্তাব করতে পারে দলটি।

কাজী রকীবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি। ওই কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে যেভাবে ইসি গঠন করা হয়েছিল, এবারো একই পদক্ষেপ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। ইসি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত শোনার জন্য গত ১২ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় বিএনপিকে, ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং ২২ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদকে ডাকেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
বর্তমান ইসির বিতর্কিত ভূমিকার কারণে নতুন কমিশন গঠনকে সামনে রেখে কয়েক মাস ধরেই আলোচনা চলছে। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে নানা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে। বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া গত ১৮ নভেম্বর একটি অনুষ্ঠানে ইসি গঠন ও শক্তিশালীকরণে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। খালেদা জিয়ার ওই প্রস্তাবের শিরোনাম ছিলÑ ‘নির্বাচন কমিশন গঠন এবং শক্তিশালীকরণ’। প্রস্তাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিটি দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে কিভাবে রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটি গঠন করবেন, তারও প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো, স্বাধীনতার পর প্রথম সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে, এমন সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি বাছাই কমিটি গঠন করবেন। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছেÑ রাষ্ট্রপতি সর্বজনশ্রদ্ধেয় সৎ, নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ এবং নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি করবেন। এ কমিটির আহ্বায়ক হবেন অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মক্ষম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি (জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে), যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসরের পর সরকারের কোনো লাভজনক পদে ছিলেন না।
চার সদস্য হচ্ছেনÑ আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সৎ ও দলনিরপেক্ষ সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সৎ ও দলনিরপেক্ষ অধ্যাপক অথবা দলনিরপেক্ষ শ্রদ্ধেয় একজন বিশিষ্ট নাগরিক এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় দলনিরপেক্ষ দক্ষ জ্যেষ্ঠ নাগরিক। এই বাছাই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে দুইজন এবং কমিশনার পদে আটজন সৎ, দলনিরপেক্ষ, মেধাবী, দক্ষ, বিতর্কিত নন এমন ব্যক্তির সুপারিশ করবেন রাষ্ট্রপতির কাছে। সেই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি একজন প্রধান বিচারপতি ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন।
জানা গেছে, বিএনপির আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তুও এই প্রস্তাব। তবে রাষ্ট্রপতি যদি সার্চ কমিটির জন্য কারো নাম চান, তাহলে প্রস্তাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু নামের তালিকা দেয়া হতে পারে। তবে আলোচনার কোনো পর্যায়েই বিএনপি নির্বাচন কমিশনারদের কোনো তালিকা দেবে না।
জানা গেছে, বৈঠকে খালেদা জিয়া লিখিত বক্তব্য দিতে পারেন, যাতে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান থাকবে। জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে বিএনপি ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপতি কতটা আন্তরিকতা দেখান, তার ওপর নির্ভর করে অন্য পদক্ষেপগুলো নেবেন তারা।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার যেহেতু চূড়ান্ত, তাই তারা সেদিকেই তাকিয়ে থাকবেন।
রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই সংলাপে জনগণের প্রত্যাশা হচ্ছে, একটি নিরপেক্ষ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, যা সরকারের আবরণীয় বা তাদের সোনার খাঁচার মধ্যে পোষা একটা পাখি হবে না। এটা সত্যিকার অর্থেই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হবে, যে প্রতিষ্ঠান সরকারের রক্তচক্ষু অথবা তাদের অশুভ ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে জনগণের ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করবে।
আজকের সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো প্রথম তালিকায় ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে রয়েছেনÑ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব:) মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল শনিবার এ ১০ সদস্যের তালিকার সাথে আরো তিনজনের নাম সংযুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। এরা হচ্ছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে বিকেল ৩টায় বঙ্গভবনের উদ্দেশে প্রথমে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবেন। সেখান থেকে প্রতিনিধিদলের সদস্যদের নিয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছবেন বিকেল ৪টার পর।

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।