বিজিবির সাথে সংঘর্ষ : শ্রীমঙ্গলে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকে ধর্মঘট চলছে

ক্রাইমবার্তা রিপোট: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিজিবি সদস্যদের নির্বিচারে গুলি, হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকে পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলসহ পুরো জেলায় আজ শনিবার নজিরবিহীন ধর্মঘট চলছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ জনসাধারণসহ বেড়াতে আসা পর্যটকরা।

আজ শনিবার দুপুর ১২টায় শহরের ব্যস্ততম মৌলভীবাজার সড়কের চিত্র

আজ শনিবার দুপুর ১২টায় শহরের ব্যস্ততম মৌলভীবাজার সড়কের চিত্র

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসায়ী নেতাদের ডাকে অনিদিষ্টকালের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা গতকাল শুক্রবার রাতে স্থগিত করা হয়েছে। বিজিবি কর্মকর্তারা সেই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাটের ক্ষতিপূরণ দেয়ার এবং দোষী বিজিবি সদস্যদের শ্রীমঙ্গল থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আগামী শনিবার পর্যন্ত স্থগিত করা হয় তাদের ধর্মঘট।

ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ মো: লুৎফুর রহমান জানান, দিনব্যাপী স্থানীয় এমপিসহ জনপ্রতিনিধিদের ও ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মিটিং করেছেন। একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও একজন কর্নেলের নেতৃত্বে দফায় দফায় মিটিং করেন বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিটিআরআই) রেস্ট হাউজে। এসময় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনওসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, বিজিবি কর্মকর্তারা সেই অনাকাক্সিক্ষ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাটের ক্ষতিপূরণ দেয়ার এবং দোষী বিজিবি সদস্যদের শ্রীমঙ্গল থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আমরা শুক্রবার রাতে সমিতির কার্যালয়ে এক জরুরী সভার ডাক দেই। সেই সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী শনিবার পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। যদি ব্যবসায়ীদের ইজ্জত ফিরিয়ে দেওয়া না হয় তাহলে আমরা আবার আমাদের ধর্মঘটে চলে যাব।

অপরদিকে শহরের চৌমুহনা চত্বরে ট্রাক মালিক সমিতির ডাকে প্রতিবাদ সভা করছেন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দরা। তারা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ট বিচার দাবী করছেন। পাশাপাশি ভাংচুর করা গাড়ির ক্ষতিপূরণও দাবি করছেন।

অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ গতকাল শুক্রবার বিকেলে সমাবেশ করে বলেছেন, আগামী ৮ জানুয়ারির মধ্যে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে ক্ষমিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে ৮ জানুয়ারির পর থেকে পুরো সিলেট বিভাগে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে।

শহর ও শহরের আশপাশ সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পরিবহন শ্রমিকরা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান করে ধর্মঘট পালন করছেন এবং ধর্মঘটের পক্ষে খন্ড খন্ড মিছিল করছেন। ধর্মঘট পালন করায় শহরে ছোট-বড় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমনকি কিছু কিছু সড়কে রিকশা চলাচলও বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শহরের অর্ধেক দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রীমঙ্গলের হবিগঞ্জ সড়কে ছকিনা সিএনজি স্টেশনের সামনে শ্রীমঙ্গল স্ট্যান্ডের একটি হাই-লাক্স গাড়িকে ওভারটেক করা নিয়ে ড্রাইভারের সাথে বাকবিতন্ডা হয় বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যের। শ্রীমঙ্গল স্ট্যান্ডের গাড়িটি শহরের ভানুগাছ সড়কের পানসি রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড় করিয়ে রাখলে ড্রাইভারকে মারধর করেন বিজিবির সদস্যরা। পাশেই ট্রাক ও কার-লাইটেস স্ট্যান্ড থাকায় ড্রাইভাররা জড়ো হয়ে বিজিবির সদস্যদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বিজিবির উপর হামলা চালালে আহত হন দুই বিজিবি সদস্য। পরে বিজিবির সদস্যরা ক্যাম্পে গিয়ে ঘটনাটি বললে এক সাথে শতাধিক বিজিবি সদস্য অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে স্ট্যান্ডে এসে এলোপাতাড়িভাবে শতাধিক কার-লাইটেস ও ট্রাক ভাংচুর করে ড্রাইভারদের উপর আক্রমন করে। এসময় যে যেভাবে পারে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে বিজিবি সদস্যরা গুলি করলে শিশুসহ অন্তত ৬ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন অর্ধশত লোক। পরে তারা ভানুগাছ রোডের পানসি রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেন রেস্টুরেন্টের আসবাবপত্র ও ডেকোরেশন। সেখান থেকে স্টেশন রোড হয়ে হবিগঞ্জ রোড ও পরে কলেজ রোডে পথচারীদের লাঠিচার্জ করে ভাংচুর করে থানা জামে মসজিদ মার্কেটের বেশ কয়েকটি দোকানপাট। বিজিবি জোয়ানদের লাটিচার্জ থেকে রেহাই পাননি দোকানে বসে থাকা ব্যবসায়ী ও মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে বের হওয়া মুসল্লিরাও।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।