কালীগঞ্জে দুই মাস পর নিখোঁজ সাবেক ইউপি সদস্যের লাশ উদ্ধার ॥ নিহতের স্বামী যুবলীগ সভাপতি গ্রেফতার #

ক্রাইমবার্তা রিপোট:গাজীপুর সংবাদদাতা, ১১ জানুয়ারীঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে নিখোঁজের প্রায় দু’মাস পর এক যুবলীগ নেতার স্ত্রী সাবেক ইউপি সদস্যের গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয় একটি মসজিদের টয়লেটের সেপটিক ট্যাঙ্কি থেকে বুধবার বিকেলে লেপ দিয়ে পেঁচানো হাত-পা বাঁধা ওই লাশটি উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ নিহতের স্বামী ওই যুবলীগ নেতাকে আটক করেছে। নিহতের নাম নিহত নাসিমা আক্তার (৩৬)। সে কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মো. মাসুম আকন্দের নিখোঁজ স্ত্রী।24

কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলম চাঁদ ও স্থানীয়রা জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের সেনপাড়া গ্রামের সোবাহানের পালিত কন্যা নাসিমার সঙ্গে বেশ কয়েক বছর আগে প্রতিবেশী দুলাল মিয়ার বিয়ে হয়। এ সংসারে তাদের দু’টি সন্তান রয়েছে। ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে নাসিমা নাগরী ইউনিয়নের সাবেক ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য পদে নির্বাচিত হয়। স্বামী দুলালের ব্যবসায়িক পার্টনার স্থানীয় রাথুরা গ্রামের তোরাব আলীর ছেলে মাসুম আকন্দের সঙ্গে ইউপি সদস্য দু’সন্তানের জননী নাসিমার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে মাসুম ও নাসিমার মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এপর্যায়ে মাসুম প্রায় দু’বছর আগে নাসিমাকে বিয়ে করে। গত ৮নবেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত মাসুমের বাড়িতে পিঠা উৎসব হয়। এ রাতে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা সাবেক ইউপি সদস্য নাসিমা নিখোঁজ হয়। এঘটনায় কালীগঞ্জ থানা সাধারণ ডায়েরী করা হয়। নিখোঁজের প্রায় দু’মাস পর বুধবার দুপুরে স্থানীয় এক মহিলা শুকনো পাতা কুড়াতে গিয়ে রাথুরা দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকের কূয়ার ভেতরে লেপ দিয়ে পেঁচানো পঁচা-গলিত লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে পুলিশ বিকেলে ঢাকনা সরিয়ে ওই কূয়া থেকে লেপ দিয়ে পেঁচানো হাত-পা বাঁধা নাসিমার গলিত ও বিকৃত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পুলিশ এঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহতের দ্বিতীয় স্বামী মাসুম আকন্দকে আটক করেছে।

নিহতের স্বজনরা জানায়, নাসিমার স্বামী দুলাল ও তার বন্ধু মাসুম আকন্দ জমি ব্যাবসা করতো। দুলালের পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় মাসুমের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্বামীর পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য নাসিমা মাসুমের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করতে গিয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে নাসিমা প্রেমিক মাসুমকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। দ্বিতীয় বিয়ের পর নাসিমা একাধিকবার পালিয়ে প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে আসে। কিন্তু প্রতিবারই মাসুম ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নাসিমাকে নিয়ে যায়। ঘটনার রাতে মাসুম বন্ধুদের সহায়তায় নাসিমাকে হত্যা করে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকিতে লাশ ফেলার সময় মসজিদের ইমাম দেখতে পায়। এসময় বিষয়টি গোপন রাখার জন্য হুমকি দিলে ভয়ে ওই রাতেই মসজিদের ইমাম পালিয়ে যায়।

নাসিমার প্রথম স্বামী দুলাল মিয়া জানান, আমার অর্থ আত্মৎসাত করার জন্য নাগরী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মাসুম ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে ও মিথ্যা প্রলোভনের ফাদেঁ ফেলে আমার স্ত্রী দুই সন্তানের জননী নাসিমাকে জোর পূবর্ক তুলে নিয়ে বিয়ে করে। দ্বিতীয় বিয়ের পর নাসিমা কয়েকবার পুনরায় আমার বাড়ী চলে আসলে মাসুম ও তার লোকজন হুমকি দিয়ে নাসিমাকে পুনরায় তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। পরে নাসিমাকে হত্যা করে লাশ গুম করে এবং ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে বাড়ি থেকে নাসিমা পালিয়ে গেছে বলে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মাসুম এলাকায় প্রচার চালাচ্ছিল।

Please follow and like us:

Check Also

বাবার ইমামতিতে ছেলের জানাজা

চাঁদপুর শহরের হাজি মহসিন রোডের রেলওয়ে নূরানি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাও. আ ন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।