গুম হওয়া নেতাকর্মীর পরিবারের মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি

ক্রাইমবার্তা রিপোট:নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও আসামিদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখী করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন, ঠিক তদ্রুপ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া শত শত বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবারের দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা এবং অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমানে দেশে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, এখানে নি:শব্দে ক্রন্দনও করা যায় না। কান্নার আওয়াজেও বিপদ ঘটতে পারে।

আজ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন রুহুল কবির রিজভী। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, গত কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ৭ খুন মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও রায় কার্যকর নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে, তবুও এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপিসহ সারাদেশের মানুষ। এ রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের নানারকম বক্তব্য গণমাধ্যমে আসছে। আজকে সাধারণ মানুষসহ অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, সেসময়ের আওয়ামী লীগ প্রধানসহ নেতাকর্মীদের বক্তব্য। সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশেই আলোচিত এই ৭ খুন মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। শুধু তাই নয়, র‌্যাবের আলোচিত উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের গ্রেফতারও করা হয় উচ্চ আদালতের নির্দেশেই। তখন সরকার প্রধান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতারা উচ্চ আদালতের কত সমালোচনাই না করেছিলেন।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে র‌্যাব-১১ ছিল কসাইখানা। সাত খুন ছাড়াও র‌্যাব ১১ এর অধীনে কমপক্ষে ১১ জন নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। দায়সারাভাবে তদন্ত চাপা পড়ে আছে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও খবর বেরিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের তৎকালীন হেডকোয়ার্টারটি রীতিমতো কসাইখানায় পরিণত হয়েছিল। সরকারের এক প্রভাবশালী নেতার আত্মীয় হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাউকে পাত্তা দিতেন না। তার ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে তাদের সহযোগীরা সেসময় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তাদের কাছে মানুষ খুন করা ছিল অনেকটা পাখি শিকারের মতো। তাই আলোচিত এ সাত খুন নয়, এর আগেও তারা কমপক্ষে ১১ ব্যক্তিকে প্রথমে গুম, পরে নৃশংসভাবে প্রায় একই কায়দায় খুন করে লাশ গায়েব করে দেয়। র‌্যাব-১১ এর আওতাধীন এলাকা ছিল নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলা। সে কারণে ওই সময় এসব জেলায় গুম-খুনের যেসব ঘটনা ঘটে, তার সঙ্গে র‌্যাবের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করেন।
রিজভী বলেন, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর লাকসাম থেকে তিনি কুমিল্লা যাওয়ার পথে বিএনপির সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন কবির পারভেজ র‌্যাবের হাতে অপহরণের শিকার হন। পৌর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিনও ছিল সাথে। পথে র‌্যাবের লোকজন তাদের তিনজনকে তুলে নেয়। কিন্তু সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন কবির পারভেজকে আটকে রেখে জসিম উদ্দিনকে ছেড়ে দেয় র‌্যাব। হিরু ও পারভেজের পরিবার আদালতের দিকে চেয়ে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও তাদের খোঁজ মেলেনি।
২০১৪ সালের ১৮ মে আদালতের শরণাপন্ন হয় পরিবারের সদস্যরা। তারা র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গুমের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আসামী করা হয়। এজাহারে সাক্ষী করা হয় র‌্যাব এর এক সদস্যকে। কারণ জসিম উদ্দিনকে ওই র‌্যাব সদস্য থানায় সোপর্দ করেন। স্পর্শকাতর এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় লাকসাম থানা পুলিশ। কিন্তু যথারীতি র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতা নেই মর্মে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেয়া হয়। এই প্রতিবেদন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন হুমায়ুন কবির পারভেজের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রানু। তিনিও আদালতে নারাজি পিটিশন দেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর র‌্যাব-১১’র হাতে নির্মমভাবে খুন হন লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. ফয়েজ আহমেদ। পোশাক পরিহিত র‌্যাব সদস্যরা ডা. ফয়েজ আহমেদকে গ্রেফতারের জন্য তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তাকে বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে আটক করে র‌্যাব। কিন্তু কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে ডা. ফয়েজ আহমেদকে তারই বাড়ির ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তারেক সাঈদের নির্দেশে তার ওপর (ডা. ফয়েজ) কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। এরপর বাড়ির ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান ডা. ফয়েজ আহমেদ। এমনিভাবে নারায়ণগঞ্জের সেই ৭ খুনের সাথে জড়িত র‌্যাবের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে চলে গুম-খুনের রাজত্ব।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ ৭৪-৭৫ থেকে গুমের রাজত্ব শুরু করলেও বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীকে গুম করে পূণরায় গুম-খুন-অপহরণে মেতে ওঠে। আজো বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর খোঁজ মেলেনি। বিগত কয়েক বছরে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য চৌধুরী আলম, বিএনপি নেতা সুমন, ছাত্রনেতা মুন্না, জাকিরসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে গুম করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আজো তাদের কোনো হদিস নেই। তাদের পরিবারের স্বজনরাও এখনো চোখের জলে বুকভরা আশা নিয়ে তাদের প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। এখনও প্রতিদিন গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিভিষিকা এক ভয়াবহ রুপ লাভ করেছে। তাই আমি নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও আসামীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখী করার জন্য মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন, ঠিক তদ্রুপ ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া শত শত বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবারের দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা এবং অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে জোরালো আহবান জানাচ্ছি।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।