কর্মসূচি ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা বিএনপির

ক্রাইমবার্তা রিপোট:দীর্ঘ বিরতির পর নতুন করে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। রাজনীতি ধীরে ধীরে নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতার দিকে মোড় নেয়ায় দলটির হাইকমান্ড এ ধরনের চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা গেছে। নবগঠিত নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখা, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার দাবিতে সোচ্চার হওয়া এবং দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মামলাকে ঘিরে নানা গুঞ্জনকে মোকাবেলা করতেই নতুন কর্মসূচিতে নামার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আলাপকালে দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নয়া দিগন্তকে বলেছেন, বিদ্যমান বাস্তবতা ও সরকারের মোটিভ বিবেচনায় এনে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে দলের চেয়ারপারসনকে। তিনিও এ বিষয়ে চিন্তা করছেন। ইতোমধ্যে দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। দলের ওই নেতা বলেন, বিএনপিকে এখন থেকেই প্যাকেজ কর্মসূচিতে যেতে হবে। কর্মসূচির ধরন হবে প্রথম দিকে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে জনসমাবেশ, তারপর ক্রমান্বয়ে কর্মসূচি দাবি আদায়ে রূপ নেবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এক নেতা নির্বাচন কমিশনসহ খালেদা জিয়ার মামলার কথা উল্লেখ করে মাঠের কর্মসূচিতে জোর দেয়ার পরামর্শ দেন। এ নিয়ে নানা আলোচনা হয়।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বকশীবাজারের বিশেষ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। মামলা নিষ্পত্তির দ্রুততা দেখে কেউ কেউ ধারণা করছেন, সরকার দ্রুত এই মামলা শেষ করতে চায়। আর এতে বিএনপি প্রধানকে সাজাও দেয়া হতে পারে। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, মামলা শেষ হতে আরো অনেক সময় লাগবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার যে কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপিকেও তার পাল্টা কৌশল গ্রহণ করে এগোতে হবে। আগামী দিনে কী ধরনের কৌশল বিএনপিকে নিতে হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে বিএনপি বসে থাকবে না।
নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি ক্ষুব্ধ অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে আস্থায় নিতে পারছে না দলটি। তবে দলের নীতিনির্ধারকেরা এ-ও মনে করছেন, কমিশনকে তারা মেনে না নিলেও এটা আর বদল হবে না। এ জন্য বিএনপি সিইসির কর্মকাণ্ডকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। এ ছাড়া এ বছরই স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি নির্বাচন হবে। এসব নির্বাচন সফল করতে ইসি কী যোগ্যতা দেখায়, তা তারা দেখবেন। যদি সেখানে ইসি নিরপেক্ষতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়, তাহলে বিষয়টি নিয়ে রাজপথে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করবে দলটি।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, কেবল একটি নির্বাচন কমিশনই (ইসি) নিরপেক্ষ নির্বাচনের গ্যারান্টি নয়, দলীয় সরকারের বদলে নির্বাচনকালীন একটি ‘সহায়ক সরকার’ থাকতে হবে, যারা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে।
জানা গেছে, দলের একটি হাইপ্রোফাইল কমিটি সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে কাজ করছে। দল ও দলের বাইরের থিংক ট্যাংকদের সাথে কথা বলে ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়া এগিয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখা এবং সহায়ক সরকারের দাবিÑ এ দু’টি ইস্যুকেই কর্মসূচির মাধ্যমে একসাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় বিএনপি। বিএনপির কাছে তথ্য রয়েছে, ২০১৮ সালের শুরুতে নির্বাচন দিতে পারে সরকার। সে ক্ষেত্রে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকেই মাঠপর্যায়ের কর্মসূচিতে নামতে চায় তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেও সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দল পুনর্গঠনে জড়িত নেতাদের দ্রুত সারা দেশের কাজ গুছিয়ে আনতে বলা হয়েছে। মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে চলছে। ইতোমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, মহিলা দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রদল, কৃষকদল, তাঁতিদলসহ অন্য কমিটিগুলোরও কাজ চলছে। ঢাকা মহানগরীতে গতি আনতে দুই ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দ্রুতই ঘোষণা করা হবে উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটি।
সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজও শুরু করেছে দলটি। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দল থেকে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল, ওই তালিকার ওপর ভিত্তি করেই কাজ করা হচ্ছে। সব দুর্বলতা ও ভুলত্রুটি শুধরে সুনির্র্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামতে চায় বিএনপি।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।