আদিবাসীদের অভিনয় মনোনীত অস্কারে

ক্রাইমবার্তা বিনোদন ডেস্ক:অতি তুচ্ছ বলে যাদের মনে করে আধুনিক মানুষ, তাদের মধ্যে কী সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকতে পারে, তার ধারণাও আমাদের নেই। সারা পৃথিবীতে কত বড় বড় অভিনেতারা অস্কারের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন! সেখানে যারা কোনওদিন ফিল্ম দেখেনি, অভিনয় বস্তুটা কী ধরনের তাই জানে না, তাদের অভিনয় পেল অস্কারের মনোনয়ন! ব্যাপারটা একদমই মজা ভেবে নেবেন না! কেননা, সেই চলচ্চিত্র আবার বিদেশি ভাষার ছবি বিভাগে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম অস্কার মনোনয়ন। হ্যাঁ, ব্যাপারটা এমনই রোমাঞ্চকর।14

একটু বিশদে বলা যাক এবার। ছবির নাম ‘টান্না’। এই ছবির সেট তৈরি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে ২৩০০ মাইল দূরে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপ ভানুয়াটুতে। ছবির গল্পটাও নিতান্তই চেনা। প্রেমিক যুগলের প্রেমের গল্প। বাবা–মায়ের অবাধ্য হয়ে বিয়ে করা স্থির করে যারা। ভাবছেন, এতে আর নতুনত্ব কোথায়?
পরিচালকদ্বয় বেন্টলি ডিন আর মার্টিন বাটলার চমক দিয়েছেন অভিনেতা–অভিনেত্রী নির্বাচনে। হ্যাঁ, ভানুয়াটুর প্রাচীন জনগোষ্ঠীর আদিবাসীরাই এ ছবির মূল আকর্ষণ।
ছবি শুরুর গল্পটা বলা এখানে দরকার। ১০ বছর আগের কথা। বাটলার একটি তথ্যচিত্রের কাজের জন্য ডিনকে পাঠান ভানুয়াটুর ইয়াকেল গ্রামে। গ্রামীণ জীবনযাপন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ডিনকে আকৃষ্ট করে। পাশাপাশি এখানকার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি বরাবরই ডিনকে যেন এখানে বারবার ফিরে আসার কথা বলে। ডিন বুঝতে পারে আবার এই গ্রামে ফিরে আসা যায়। কিন্তু কীভাবে?

এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। ডিন আর বাটলার নিজেরা ফের ওই গ্রামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এবারে তাদের পরিকল্পনা ছিল অন্য। উদ্দেশ্য একটা ফিচার ফিল্ম। তবে তার জন্য প্রয়োজন ইয়াকেল গ্রামের গ্রামবাসীদের।

যৌথ উদ্যোগে একটা ছবি করার কথা বলা হয়েছিল সভ্যতার অনেক আলোকবর্ষ দূরে থাকা এই গ্রামবাসীদের। সিনেমা নামক শব্দটাই তাদের কাছে অচেনা। ফিল্ম দেখা তো বহু দূরের কথা। বলা ভাল, ফিল্ম বা চলচ্চিত্র তাদের কাছে অনেকটা গল্প–উপন্যাসের অলীক জগতের মতো। হবেই তো! বাইরে মানুষের তৈরি একটা অন্য জগৎ আছে জেনেও এই গ্রামীণ সম্প্রদায় পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যকে আঁকড়ে রেখেছে এই শতাব্দীতেও। আমরা যেখানে যুদ্ধের জন্য পরমাণু অস্ত্র বাদ দিয়ে সাম্প্রতিকতম জীবাণু অস্ত্র নিয়ে ভাবি। সেখানে তারা এখনও তীর–ধনুক দিয়ে শিকার করে। মোবাইল, ইন্টারনেট, অনলাইন লেনদেন তো বহু দূরের কথা, তারা এখনও বিদ্যুৎ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। ভাবতে অবাক লাগছে আপনার? এরা অভিনয় করল কীভাবে?

পরিচালকেরা ল্যাপটপে গ্রামবাসীদের বেশ কয়েকটা ফিল্ম বা ছবি দেখালেন নিয়মিতভাবে। বোঝালেন তাঁরা সকলে মিলে কী রকম জিনিস তৈরি করতে চাইছেন। ব্যাপারটা পছন্দ হতেই সাগ্রহে গ্রামবাসীরা অভিনয়ে রাজি হয়ে গেলেন। এখানে বলে রাখা দরকার যে পাশের গ্রামে এমন একজনকে পাওয়া গিয়েছিল যে অন্য একটা দ্বীপে স্কুলশিক্ষার দারুণ ইংরেজি জানে। তার মাধ্যমেই পরিচালকদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের ভাবের আদান প্রদান ঘটেছে।

আর এই ছবির গল্পটা একান্তই তাদের নিজেদের গ্রামের গল্প। বহুযুগ আগে এমনই একটা ঘটনা ঘটেছিল বৈকি! প্রেমিকযুগল চিরন্তন প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেছিল। ব্যস, সেই গল্পই দুই পরিচাক বেঁধে নিলেন চিত্রনাট্যের রূপে, যা এখন অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্যে এনে দিতে পারে অস্কারের মুকুট। ছবিটা নওভাল ভাষায় শ্যুট করা হয়েছে। ভানুয়াটুতে যে ১১০ টা ভাষায় কথা বলা হয়, তার মধ্যে এই ভাষা অন্যতম। সারা বিশ্বে এই ভাষায় মাত্র কয়েক হাজার মানুষ কথা বলে।

এই ব্যাপারে অন্যতম পরিচালক ডিনের পরিশ্রম না উল্লেখ করলেই নয়। ২০১৪ সালে ডিন পরিবার নিয়ে ইয়াকেল গ্রামে সাত মাস থেকে খুব কাছ থেকে গ্রামীণ মানুষদের ক্রিয়াকলাপ, ইতিহাস আর সংস্কৃতি পর্যবেক্ষণ করেন। আর তাতেই চিত্রনাট্যে এসেছে টানটান উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ। আর অভিনয় নিয়ে কী বলব! অস্কার জিতলে এই গ্রামবাসীরা যদি অন্য ছবির ডাক পায়, তাহলে সেটাই হবে অভিনয়ের সবচেয়ে বড় সমাদর!

Please follow and like us:

Check Also

বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ঈদের বিশেষ আয়োজন

ঈদের সময় দর্শকদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে প্রতি বছরই বাহারি আয়োজন করে দেশের প্রায় সবকটি টিভি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।