ক্রাইমবার্তা রিপোট: বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, কিছু স্বার্থান্বেষীদের লোভের কারণে এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে বুড়িগঙ্গাকে দখল করা হচ্ছে, এমনকি সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এর সাথে জড়িত। তাই শুধুমাত্র কথার কথা বা প্রতিশ্রুতি নয়, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীকে রক্ষার জন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।
বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন, নদী বাঁচাও আন্দোলন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর উদ্যোগে আজ শুক্রবার এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে সৈয়দ আবুল মকসুদ এসব কথা বলেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, নদী পাড়ের হাজার হাজার জনগণ আজ বুড়িগঙ্গার পাশে দাঁড়িয়েছে শুধু বুড়িগঙ্গাকেই রক্ষার জন্য নয়। এটা তাদের জীবন-মরণ সমস্যা। রাজধানীবাসীর বেঁচে থাকা ও অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হবে। বুড়িগঙ্গার আজকের এই দুর্দশা একদিনে হয়নি, দীর্ঘ প্রায় দু’যুগেরও বেশি সময় থেকে একদিকে বেপরোয়া দখল, অন্যদিকে দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা আজ মৃতপ্রায়। বিভিন্ন সময়ে সরকার থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও কার্যকর তেমন কিছুই হয়নি।
বুড়িগঙ্গাকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে অপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয় খাত থেকে অর্থ এনে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদী রক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর আহবান জানান তিনি।
আজ সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ‘হাইকোর্টের রিট নং ৩৫০৩/২০০৯ মোতাবেক সকল নির্দেশনা বাস্তবায়ন কর!; বুড়িগঙ্গার দূষণ-দখল রোধ, নাব্যতা ও জীববৈচিত্র রক্ষা কর!’ দাবিতে পাগলা থেকে বছিলা পর্যন্ত ১৩টি নির্ধারিত স্থানে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সদরঘাট, শ্যামবাজার (লালকুঠি) ঘাট, শহীদ বুদ্ধিজীবী ব্রীজ (বছিলা ব্রীজ), কামরাঙ্গীচর ব্রীজ, জিঞ্জিরা ফেরিঘাট, শোয়ারীঘাট, বাবুবাজার ব্রীজ, ইসলামবাগ, লালবাগ, বুড়িগঙ্গা ১নং ব্রীজ (পোস্তগোলা), ফরিদাবাদ, শ্যামপুর, পাগলাঘাটে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ১০টায় সদরঘাট টার্মিনালের পাড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বাপা’র সহসভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বাপা’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব মিহির বিশ্বাস, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লাবলু, গণতন্ত্রী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুর রহমান বাবু, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার সাদত, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি শহীদ মাহমুদ শহিদুল্লাহ, পুরান ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের আশরাফ আমির উল্ল্যাহ, আদি ঢাকাবাসী ফোরামের জাবেদ জাহান ও মো: ইমরান হোসেন, নাজিরা বাজার পঞ্চায়েত কমিটির আলী হোসেন, বাপা’র জাতীয় পরিষদ সদস্য নাজিম উদ্দিন, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের মারুফ হোসেন, সুজনের ক্যামেলিয়া চৌধুরী।
সমাবেশে বিআইডব্লিউটি-র সিপিবি’র সভাপতি আবুল হোসেন, পুরান ঢাকার প্রায় ২৫টির বেশি সংগঠন বিশেষ করে ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, ওল্ড ঢাকা ক্লাব, বোধ ফাউন্ডেশন, বাঙ্গাল আবু সাঈদ স্মৃতি সংসদ, বেগম বাজার-মেীলভী বাজার বণিক সমিতি, কে এল জুবলী স্কুল ও কলেজ, নাজিরা বাজার কাজী আলাউদ্দিন রোড পঞ্চায়েত কমিটি, সিক্কাটুলী মুসলিম যুব সংঘ, সিক্কাটুলী পুকুর রক্ষা কমিটি, পুরান ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরাম, আদি ঢাকাবাসী ফোরাম, হোসনীদালান পঞ্চায়েত কমিটি, খাজা দেওয়ান সমাজকল্যাণ সমিতি, ঢাকা সমিতি অংশ নেয়।
অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, আমরা চাই, হাইকোর্টের এই নির্দেশনা সরকার সঠিকভাবে পালন করে বুড়িগঙ্গা ও ঢাকার চারপাশের নদীসহ সারাদেশের নদী রক্ষার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
মিহির বিশ্বাস বলেন, নদী রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট আন্তরিকতা, হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে এবং নদী টাস্কফোর্সের সভায় বিভিন্ন সময়ে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের এ সকল সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সাধারন জনগণ নদীকে ফিরে পেতে চায়, অথচ সামান্য কযেকজন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির জন্য নদী রক্ষা করা যাচ্ছে না। আমরা আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবারও বিষয়টি নজরে আনবেন এবং তার হস্তক্ষেপে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীসমূহ রক্ষা পাবে। দেশের নদ-নদী-জলাধারগুলোকে যে কোনো উপায়ে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী। আমাদের অস্তিত্ব ও বেঁচে থাকার প্রয়োজনে নদীকে বাঁচাতে হবে।