আবারো একতরফা নির্বাচনের শঙ্কা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:জোরাল হচ্ছে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের শঙ্কা। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। একতরফা ওই নির্বাচন ছিল সঙ্ঘাতময়। রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের একাদশ সংসদ নির্বাচনের ঢামাডোল তৈরি হওয়ায়, প্রতিপক্ষ দুই রাজনৈতিক শিবির আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত বাদানুবাদ চলছে। এ উত্তেজনা সেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই।

নির্বাচনের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার আরো দুর্বল মনে করছে। আন্দোলন করে বিএনপির দাবি আদায়ের ‘সক্ষমতা’ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। একই সাথে দলটি ভাবছে, অস্তিত্বের স্বার্থেই এবার আর নির্বাচন বয়কট করতে পারবে না বিএনপি। নির্বাচন বয়কট করলে দলটির নিবন্ধনও ঝুঁকিতে পড়বে। অন্য দিকে আওয়ামী লীগের এ ধরনের চিন্তার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে তারা মাঠে নেমেছেন। এ দাবিকে ইস্যুতে পরিণত করে সামনের দিনগুলোতে কঠোর অবস্থান নেয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা। উপযুক্ত সময়ে আন্দোলনের ছক কষছে দলটি। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এখন বারবারই বলছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। বিএনপিকে বাদ দিয়েও কোনো নির্বাচন এ দেশে হবে না। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, বিএনপি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সঙ্কটময় সময় পার করছে। অনেক চেষ্টার পরও দীর্ঘ দিন ধরে দলটি সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। সাংগঠনিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছে দলটি। শুধু সংবাদ সম্মেলন আর ঘরোয়া কিছু কর্মসূচি নিয়ে এখনো সরব রয়েছে বিএনপি।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির প্রতি খানিকটা নমনীয় হচ্ছে সরকার। যাতে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তারই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই বিএনপির কারাবন্দী সিনিয়র নেতাদের অনেকেই জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি বড় ধরনের কোনো বাধা ছাড়াই বিএনপিকে করতে দেয়া হয়েছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপিসহ বিরোধী জোটকে নির্বাচনে নিয়ে আসতেই সরকারের এমন কৌশলী অবস্থান বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের তকমা থেকে সরকার এখনো বের হতে পারেনি। দেশে-বিদেশে এখনো বিতর্কিত হয়ে আছে বিরোধী জোটের অংশগ্রহণবিহীন ওই নির্বাচন। সেই অপবাদ থেকে বের হতে এবারের নির্বাচনে বিএনপিকে আনার সব ধরনের চেষ্টা করবে সরকার। কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও নির্বাচনে বিএনপিকে চাইবে আওয়ামী লীগ। তবে যত রকম ছাড় দেয়াই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই বিএনপিকে আসতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়ার চিন্তা বা সম্ভাবনা আপাতত নেই। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে না এলে বিএনপির নিবন্ধন হারানোর হুমকিও দেয়া হবে। যদি এ সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচন বর্জন করে তবে বিএনপিকে বিভক্ত করে হলেও একটি অংশকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করা হবে। এ চেষ্টাও কার্যকর না হলে শেষ পর্যন্ত আবারো বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনের দিকে যাবে সরকার।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম সম্প্রতি জাতীয় সংসদে দেয়া এক বক্তৃতায় বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসা না আসাতে কিছু যায় আসে না। তাদের জন্য নির্বাচন বসে থাকবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনও তাদের জন্য বসে থাকেনি। তবে তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসতে বাধ্য হবে। না হলে এ দেশ থেকে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি হারিয়ে যাবে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে, এমন ঝুঁকি নিয়ে বিএনপি বোকার মতো নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে হয় না। আমি নিশ্চিত, তারা নির্বাচনে আসবে।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারির জবাবে তিনি বলেন, সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তেমনি সংবিধান ও নির্বাচন কারোর জন্য অপেক্ষা করবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যেমন কারও জন্য থেমে থাকেনি।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ আরো বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। নির্বাচন বয়কট করেই তারা তখন বসে থাকেনি। ওই নির্বাচন প্রতিহত করতে আন্দোলন করেছিল। নির্বাচনের দিনসহ এর আগে ও পরে টানা হরতাল ও অবরোধে পুরো দেশ অচল হয়ে পড়েছিল। এর পরের বছরও একই দাবিতে টানা তিন মাস আন্দোলন করেছিল বিএনপি জোট। এখন একাদশ সংসদের নির্বাচনের আবহ তৈরি হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নতুন করে সোচ্চার হয়েছে।
জানা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার অবস্থানে দলটি অটল রয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে দলটি অংশ নেবে না এমন ভাবনাই জোরাল হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্য নতুন করে আন্দোলনের পথকেই বিস্তৃত করছে।
সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। তবে এ মুহূর্তে নয়। নির্দলীয় সহায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরার পর তারা প্রধানমন্ত্রীকে এ নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাবেন। একই সাথে আলোচনা ও দলীয় সমাবেশে এ দাবিতে জনমত গঠন করা হবে। সরকার চূড়ান্তভাবে দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানালে কিংবা এ ইস্যুতে আলোচনায় কোনো আগ্রহ না দেখালে কর্মসূচিতে যাবে তারা। এ কর্মসূচির ডাক কখন দেয়া হবে তার সম্ভাব্য একটি টাইমলাইনের আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছেÑ নির্বাচনের কমপক্ষে ছয় মাস আগে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে বিএনপি। জানা গেছে, দলটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের যে রূপরেখা তুলে ধরবে, তার মূল স্পিরিট হচ্ছেÑ নির্দলীয় সরকার অথবা সর্বদলীয় সরকার। এ ক্ষেত্রে ওই সরকার কিভাবে গঠিত হবে, তার বিস্তারিত তুলে ধরবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকার নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। যদি আবারো তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো গায়ের জোরে নির্বাচনের নামে তামাশা করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তাহলে জনগণ আর বরদাশত করবে না।
তিনি বলেন, সরকার সমঝোতার পথে না হাঁটলে বিএনপি রাস্তায় নেমেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনের দাবি আদায় করবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সরকারবিরোধী বিএনপি জোট যদি শেষ পর্যন্ত নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকে তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।

Check Also

উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলব: পরিদর্শন বইয়ে প্রধানমন্ত্রী

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।