তত্ত্বাবধায়কের সময় নেয়া ১২শ কোটি টাকা ফেরতের রায় কাল

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে গ্রহণ করা ১২শ কোটি টাকা ফেরত চেয়ে করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানী শেষ হয়েছে।এবিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার(এসকে)সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে এই আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া এই ১২০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে ২০১০ ও ২০১১ সালে পৃথক পৃথক নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সব আবেদন আজ একত্রে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদেশের জন্য এই দিন ধায্য করেন আপিল বিভাগ।
জানা যায়, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তৎকালীন টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্টস (টিএফআই) কর্মকর্তারা প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করেন।এ টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ০৯০০ নম্বর হিসাবে জমা হয়।
জানা গেছে, ১/১১ সরকার ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল জেমস ফিনলের কাছ থেকে আদায় করে ১১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ওই টাকা ১৬টি পে-অর্ডার বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের কনসোলিটেড ফান্ডে প্রথম জমা দেওয়া হয়। এরপর ২২ এপ্রিল একই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৫টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে আরও ১২০ কোটি ২৪ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়। একই প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমে দেড় বছর ধরে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের সংশ্লিষ্ট হিসাবে টাকা জমা হয়েছে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় ছাড়াও ‘অজানা’ উল্লেখ করেও চার দফায় প্রায় ৪৭ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে কয়েক দফায় বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করা হয়েছে ওই সময়।
২০০৭ সালের ২৮ মে থেকে ২০০৮ সালের ১১ জুন পর্যন্ত বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে ২৫৬ কোটি টাকা নেওয়া হয়। ২০০৭ সালের ১৯ জুন থেকে একই বছরের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত মিসেস পারভীন হক সিকদার বাধ্য হয়ে সিকদার গ্রুপের পরিচালক ও সদস্যদের পক্ষ থেকে ৯টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে মোট ৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করেন বলে জানা গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আরও যাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের ৩০ কোটি, এমজিএইচ গ্রুপ ২৪ কোটি, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ২০ কোটি, কবির স্টিল সাত কোটি, ব্যবসায়ী নুর আলী ৪০ কোটি ৫০ লাখ, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন ৩২ কোটি ৫০ লাখ, সাগুফতা হাউজিং দুই কোটি ৫০ লাখ, হোসাফ গ্রুপ ১৫ কোটি,পারটেক্স গ্রুপ ১৫ কোটি, স্বদেশ প্রোপার্টিজ ৯ কোটি, ইসলাম গ্রুপ ৩৫ কোটি, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ৮ কোটি, ব্যবসায়ী রেজাউল করিম ১৭ কোটি, আবু সুফিয়ান ১৪ কোটি, শওকত আলী চৌধুরী ৬ কোটি, আশিয়ান সিটি ১ কোটি, পিংক সিটি ৬ কোটি ৪১ লাখ, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন ১৯ কোটি ৪৫ লাখ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর ১৫ কোটি, ওয়াকিল আহমেদ ১৬ কোটি, এবি ব্যাংক ফাউন্ডেশন ৩২ কোটি, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ, এলিট পেইন্ট ২৫ কোটি ৪৪ লাভ, এবি ব্যাংক ১৯০ কোটি, কনকর্ড রিয়েল এস্টেট ৭ কোটি, জনৈক মালিক চার কোটি এবং ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর আলীর কাছ থেকে ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।