কেন ভোটে আগ্রহ কমছে ভোটারদের

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ভোটে যেন আগ্রহ নেই ভোটারদের। সংসদ থেকে স্থানীয়- সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতির হার কম। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর অনাস্থা, সুস্থ রাজনীতির অভাবকে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার বড় কারণ বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক ভোটার ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসেনি। এবার কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৬৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৫ দশমিক ১৩ শতাংশ।

 এবার গত নির্বাচনের চেয়ে ১১ দশমিক ২ শতাংশ কম ভোট পড়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরেয়ে আনতে পারলে ভোটাররা আবার ভোট কেন্দ্রে যাবেন বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা। তিনি বলেন, ভোটার যখন নিজের ভোট দেয়ার পর ভোটটি সঠিকভাবে ভোট বাক্সে পড়েছে কিনা বা ভোটটি গণনা করা হবে কিনা তার মধ্যে এ ধরনের সংশয় কাজ করে তখন সেই ভোটার কেন ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসবে। আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে দিনে দিনে ভোটাররা ভোট দানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। স্থানীয় সরকার বিশেজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণা থেকে এক রকমের উদাসীনতা জাতিগতভাবে আমাদের পেয়ে বসেছে । যার প্রভাব পড়ছে নির্বাচনে। ভোট মানুষের অধিকার। অথচ এখন একজন ভোটার মনে করেন আমার ভোট দিয়ে কি লাভ। নিজের কাজ ফেলে ভোট দিতে গিয়ে দেখা যায় বরং ক্ষতি। আমি যাকে ভোট দিচ্ছি তার প্রভাব তো ফলাফলে পড়ছে না। নির্বাচনে যে প্রার্থীরা আছে তাদের কাউকেই হয়তো ভোটাররা পছন্দ করছেন না। এরকম একাধিক কারণে ভোটাররা নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়ছেন। এটা শুধু কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নয় সব নির্বাচনই ভোটার উপস্থিতির একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোও কোনো ভালো সংগঠন হিসেবে কাজ করে না। এখন রাজনৈতির দলের লোকেরাই দলের সঙ্গে নেই। ধীরে ধীরে মানুষ রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে পুরো সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে হবে। আস্থা জিনিসটি এমন এটি জোর করে জনগণের মধ্যে আনা যাবে না। এজন্য গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করতে হবে। সুস্থ রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার ব্যাপারে ভোটারদের মধ্যে আস্থা নেই। যেহেতু বিগত স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো খুব সহিংসতাপূর্ণ হয়েছে তাতে মানুষের ভোটের প্রতি এক ধরনের অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। ভোট এখন অবিশ্বাসের জায়গায় চলে গেছে। সবাই হয়তো ভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখবো আমার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। যেহেতু বিগত নির্বাচনগুলো খারাপ হয়েছে সেহেতু নতুন নির্বাচনের প্রতি মানুষের এখনো বিশ্বাস জন্মায়নি। এ কারণে গতবারের কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চেয়েও এবার ভোট কম পড়েছে। সামনের নির্বাচনগুলো যদি বর্তমান কমিশন ভালো করতে পারে মানুষ আস্তে আস্তে আবার ভোটের ওপর আকৃষ্ট হবে। উন্নত দেশগুলোতে যেমন ভোটারদের ভোট দানে সারা বছর ধরে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তেমনি আমাদের দেশেও এ ধরনের ক্যাম্পেইন চালানো প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনকেও প্রচারণা চালাতে হবে যে ভোট ভালো হবে, ভোটারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং ভোট দিবেন।

 

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।