সম্পদ নয়, মনের ধনী বড় ধনী

: সম্পদের প্রতি লোভ মানুষের অন্তরের রোগ । ধন-সম্পদের আধিক্য মানুষকে অভাবমুক্ত করতে পারে না। প্রকৃত অভাবমুক্তি হচ্ছে আত্মার অভাবমুক্তি, অমুখাপেক্ষীতা এবং আত্মার প্রাচুর্য। অতএব মানুষের অন্তর যদি আল্লাহ প্রদত্ত সামান্য সম্পদ নিয়েই সন্তুষ্ট, তৃপ্ত ও আনন্দিত থাকে, তাহলে সে মানুষের নিকট অমুখাপেক্ষী। অন্তরের দিক দিয়ে সে অভাবমুক্ত এবং নিজের কাছে পরিতৃপ্ত। আর তাতেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি। পক্ষান্তরে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েও যে ব্যক্তি সব সময় আরো বেশি সম্পদের জন্য লালায়িত থাকে, সে প্রকৃত ধনী নয় সে তো অভাবী। সব সময় তাকে তৃপ্তহীনতায় ভুগতে হয়। রাতে তার ঘুম হয় না। দিন- রাত একটি চিন্তাই তাকে অস্থির করে রাখে।9
কী করলে কিভাবে করলে কোন পদ্ধতিতে করলে আমার অর্থভান্ডার আরো সমৃদ্ধ হবে? কোথায় কার কাছে যাওয়ার ফলে আমার সম্পদ বৃদ্ধি পাবে? এ প্রশ্নগুলো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তাকে ব্যস্ত করে রাখে। সে উত্তরের অন্বেষণে মাঠে অবতীর্ণ হয়। কখনো উত্তরের অন্বেষণেই ব্যস্ত থেকে কারো দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়। সম্পদের আধিক্যতা বা তার সফলতা তাকে ধরা দেয় না। কেউবা সফলতা পায়। কিন্তু নিজ চোখে সে সাফল্য দেখে যেতে পারে না। আবার অনেক লোক আছে যারা জীবদ্দশায় সে সফলতা বা অর্থসম্পদেধর প্রাচুর্য অর্জনে সক্ষম হয়। কিন্তু ততদিনে তার নৈতিক চরিত্র কোথায় যে হারিয়ে যায়, তা বলা কঠিন।
সম্পদপ্রিয় মানুষের সুদ-ঘুষ তার একান্তই সঙ্গী হয়ে যায়। জীবিকা উপার্জনের ঘৃণিত মাধ্যমগুলো তাকে জড়িয়ে ধরে। সে তাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। দুর্বল, অসহায়, গরিবদের উপর অত্যাচার চলতেই থাকে। আর তার অন্তর কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যায়। একসময় সে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয বিধান যাকাত দিতে অস্বীকার করে। স্রষ্টার সৃষ্টি হয়ে তাঁর বিধান যাচ্ছেতাই অমান্য করতে থাকে। এমনকি এক সময় স্রষ্টাকেও ভুলে যায়। অথচ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সম্পদ লাভের ক্ষেত্রে কঠিন হুশিঁয়ারি দিয়ে বলেছেন, “তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করো না। (সূরা বাকারা- ১৮৮)
তাই মনে রাখতে হবে, ইসলাম সম্পদের প্রাচুর্যকে ঢালাওভাবে প্রশংসা বা নিন্দা জানায়নি। ইসলাম তখনই অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্যকে প্রশংসনীয় বলে, যখন তা হৃদয় ও মনকে প্রাচুর্যবান করে তোলে। যখন শ্রমের চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পদ হয় না। অন্যথায় ভয়ঙ্কর বিপদ আসন্ন। কারণ সম্পদ উপার্জনের উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয়, তাহলে তা উপার্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে কখনোই বৈধতার বিবেচনাকে উপেক্ষা করা হবে না। কারো অর্জিত সম্পদ কখনোই বিলুপ্ত হবে না। তবে উদ্দেশ্যে বিচ্যুতি ঘটলে সম্পদ মানুষকে প্ররোচনা দিতে শুরু করে। ফলে সে বিভ্রান্ত হতে শুরু করে। সবশেষে সে সীমালঙ্ঘনে পতিত হয়।
তাই আসুন আমরা সবাই প্রকৃত অভাবমুক্তি অর্জনে চেষ্টা করি। সম্পদের সর্বপ্রকার অপকারিতা হতে বেঁচে থাকতে সচেষ্ট হই।

Please follow and like us:

Check Also

ঢাকায় প্রথম মহিলাদের ঈদের জামাত

বাংলায় মুসলমান সমাজে নারীদের প্রতিকূলতার ইতিহাস অনস্বীকার্য। নারীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, বিবাহ ও অন্যান্য ব্যাপারে ইসলামের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।