কোথাও বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে জীবন দিয়ে বিচারের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেল হযরত আলী। —— বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

ক্রাইমবার্তা রিপোট:গাজীপুর সংবাদদাতাঃ বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, বিচার হীনতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। আইনের শাসনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ এখনো আসেনি। আইনের শাসন থেকে আমরা অনেকটা দূরে আছি। যে কারনে কোথাও বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে জীবন দিয়ে বিচারের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেল হযরত আলী। সোমবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কর্নপুর সিটপাড়া গ্রামের শিশু মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতনের বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়া হযরত আলীর বাড়ী পরিদর্শনে এসে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আছে, সে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ সমস্ত অসহায় নিঃস্ব মানুষদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, তাদের মানবিক অধিকারগুলো তাদেরকে দিতে হবে। মানবিক অধিকার তার জন্মগত অধিকার। এ অধিকার তাকে দিতে হবে এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, সরকারের দায়িত্ব।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আইনের শাসনের প্রতি আমাদের বিশ্বাসহীনতার কারণেই আজকে হযরত আলীকে এবং তার মেয়েকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জাস্কর বিষয়।
তিনি বলেন, হতদরিদ্র হযরত আলীর পরিবার দীর্ঘদিন যাবত একটি প্রভাবশালী চক্র দ্বারা নির্যাতিত। ওই চক্র জমি জায়গার লোভে তাদের ওপর বারবার অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। অসহায় দরিদ্র পরিবারটি বারবার নির্যাতিত হয়েও বিচার পায়নি। এদের মানবিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় জনগন, জনপ্রতিনিধি ও নির্যাতিত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে প্রতিয়মান হয় যে, প্রতিপক্ষের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে বিচারহীনতার কারনেই হযরত আলী তার মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
তিনি আরও বলেন, হালিমার অভিযোগটি পুলিশ আমলে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিলে এই অনভিপ্রেত ও দু:খজনক ঘটনার সূত্রপাত হতো না। হালিমার অভিযোগটি শ্রীপুর থানা পুলিশ শুধুমাত্র জি.ডি করেই ক্ষান্ত রয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় মেয়েকে নিয়ে জীবন দিয়ে বিচারহীনতার প্রতিবাদ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেল হযরত আলী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের হালিমাকে নিরাপত্তা, আইনী সহায়তাসহ তাকে পুনর্বাসিত করার সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে। তাকে আর ভিক্ষা করে খেতে হবে না এমন আশ্বাসও দেন তিনি।
এর আগে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেহেনা আকতার, শ্রীপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান, অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই বাবুল এর সাক্ষাতকার গ্রহন করেন। এছাড়া তদন্তকালে কমিশন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন।হালিমা কমিশনের চেয়ারম্যান কে জানান ফারুক তার মেয়েকে যৌন নির্যাতন করেছে রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করেছে। চক্রটি তার গরু নিয়েগেছে। অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই তার স্বামী আত্মহত্যা করে। এসময় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) শরীফ উদ্দিন, সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলাম, সাজ্জাদুর রহমান, গণসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ, ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রায়হানুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মন্ডল বুলবুল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম রেজা প্রমূখ।
উল্লেখ্য, গাজীপুরে শিশু মেয়ের ওপর পাশবিকসহ নানা নির্যাতনের বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে শ্রীপুর ইপজেলার কর্নপুর সিটপাড়া গ্রামের হালিমার স্বামী হযরত আলী (৫৫) ও তার শিশু কন্যা (পালিত) আয়েশা (৭) গত শনিবার সকালে আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার ঘটনা ঘটে। এঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় শ্রীপুর মডেল থানা পুলিশ ইউপি সদস্য আবুল হোসেন ও তার ছেলে মিঠুনকে আটক করে। পরে আবুল হোসেনকে রেলওয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। রবিবার ঢাকা রেলওয়ে থানায় নিহতের স্ত্রী হালিমা বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে শ্রীপুরের গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল হোসেনসহ ৭জনকে আসামী করে মামলা [নং-১৮(৪)১৭] দায়ের করেন। নিহতদের ময়না তদন্ত শেষে সোমবার সকালে নিজ বাড়ীতে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় হযরত আলী ও তার কন্যা আয়েশাকে। 6
শ্রীপুরে ট্রেনের ঝাপ দিয়ে বাবা-মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনায়
ইউপি সদস্যের রিমান্ড ॥ পুলিশের তদন্ত কমিটি গঠণ ॥
গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে শিশু মেয়ের ওপর পাশবিকসহ নানা নির্যাতনের বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে বাবা ও মেয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ইউপি সদস্য আবুল হোসেনকে দুই দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। ঢাকা সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তাওহীদ আল আজাদ গ্রেফতারকৃত আবুল হোসেনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে ওই ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বে কোন অবহেলা আছে কি-না তা তদন্ত করতে গাজীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, শ্রীপুরের গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রেফতারকৃত মেম্বারের কাছে স্থানীয় কর্ণপুর ভিটিপাড়া গ্রামের হযরত আলী তার সাত বছরের শিশু প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী আয়েশাকে পাশবিক নির্যাতন, গরু চুরি ও বসত ঘরের জায়গা জোরপূর্বক দখলের সু-বিচার না পাওয়ায় শনিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুরে ট্রেনের নীচে ঝাপ দিয়ে শিশু মেয়েকে নিয়ে তার বাবা আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ওই দিনই শ্রীপুর মডেল থানা পুলিশ গোসিঙ্গা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার আবুল হোসেনকে আটক করে কমলাপুর রেলওয়ে থানা পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন নিহতের স্ত্রী হালিমা বেগম ওই মেম্বারসহ সাত জনের বিরুদ্ধে কমলাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ সোমবার বিকেলে ঢাকা সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালতের বিচারক তাওহীদ আল আজাদ আবুল হোসেনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে গাজীপুর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর আব্দুল মোমিন জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে ট্রেনের নীচে ঝাপ দিয়ে স্থানীয় কর্নপুর সিটপাড়া গ্রামের দরিদ্র হালিমার দিনমজুর স্বামী হযরত মাহমুদ (৫৫) ও তাদের শিশু মেয়ে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী আয়েশা আক্তারের (৭) আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বে কোন অবহেলা আছে কি-না তা তদন্ত করতে গাজীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ গোলাম সবুর এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি সোমবার গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন- শ্রীপুর সার্কেলের সিনিয়র এএসপি শাহিদুল ইসলাম ও গাজীপুর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর আব্দুল মোমিন।
উল্লেখ্য, গাজীপুরে শিশু মেয়ের ওপর পাশবিকসহ নানা নির্যাতনের বিচার না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে শ্রীপুর ইপজেলার কর্নপুর সিটপাড়া গ্রামের হালিমার স্বামী হযরত আলী (৫৫) ও তার শিশু কন্যা (পালিত) আয়েশা (৭) গত শনিবার সকালে আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার ঘটনা ঘটে। এঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় শ্রীপুর মডেল থানা পুলিশ ইউপি সদস্য আবুল হোসেন ও তার ছেলে মিঠুনকে আটক করে। পরে আবুল হোসেনকে রেলওয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। রবিবার ঢাকা রেলওয়ে থানায় নিহতের স্ত্রী হালিমা বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে শ্রীপুরের গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল হোসেনসহ ৭জনকে আসামী করে মামলা [নং-১৮(৪)১৭] দায়ের করেন। নিহতদের ময়না তদন্ত শেষে সোমবার সকালে নিজ বাড়ীতে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় হযরত আলী ও তার কন্যা আয়েশার।

 

Check Also

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।