রাজাপুরের সেই সাহসী শারমিনের এসএসসি জয়

ক্রাইমবার্তা রিপোট:রহিম রেজা, রাজাপুর (ঝালকাঠি) থেকে11
নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউমেন অব কারেজ-২০১৭’ পুরস্কারে ভূষিত ঝালকাঠির রাজাপুরের সেই সাহসী শারমিন আক্তার এবার এসএসসিও জয় করলো। এত নির্যাতনের মুখেও এ গ্রেডে পাস করে আরও একবার সৃষ্টি করেছে অনুকরণীয় দৃস্টান্ত। শিক্ষা জীবন শেষ করে শারমিন হতে চায় একজন আইনজীবী। পাশে দাড়াতে চায় অসহায় নারীদের। বৃহস্পতিবার সারাদেশে এসএসসি পরীক্ষার ফালাফল প্রচার হয়। দুপুর ১২ টা বাজার আগেই নিজের স্কুল ঝালকাঠির রাজাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ফলাফল জানতে আসে সে। প্রতিক্রিয়ায় শারমিন আক্তার বলেন, আমার এসএসসি পরীক্ষাই দেয়া হত না, যদি না আমি মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করতাম। পরীক্ষার ফলাফল যা হোকনা কেন হাসি মুখে মেনে নেবো। তবে আমার ওপর নির্যাতন নেমে না আসলে অনেক ভাল ফলাফল করতাম, দৃঢ়তার সাথে বলেন শারমিন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্কুলকতৃপক্ষ ফলাফল শিট বের করতে থাকে। স্কুলের শিক্ষক ও শুভাকাঙ্খিরা শারমিনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। অবশেষে ফলাফল হাতে আসে। শারিনের রোল নম্বর ২৩৫২৩৭। মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়েছে। প্রধান শিক্ষক গাজী গোলাম মোস্তফাও যেন অপেক্ষা করতে পারছিলেন না। চশমা চোখে পড়েই খুঁজতে শুরু করলেন। পরক্ষনেই ইয়েস বলে চিৎকার করে উঠলেন প্রধান শিক্ষক । জানা গেল ৪ পয়েন্ট ৩২ অর্থাৎ জিপিএ পয়েন্টে পাশ করেছে শারমিন। আর সেই সময় পাশে অপেক্ষান শারিমসহ সবাই লাফিয়ে উঠলো। ফলাফল পাওয়ার পর শারমিন শারমিন বলেন, অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। এ ফলাফলে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে এখন থেকে আরও অনেক বেশি বেশি পড়াশুনা কবরো। আগামীতে একজন আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। আর আইনজীবী হয়ে দেশ ও দেশের নির্যাতিত নারীদের পাশে দাড়ানোই হবে আমার একমাত্র ইচ্ছা, বলেন শারমিন। রাজাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী গোলাম মোস্তফা জানান, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০১৫ সালের আগস্টের শুরুর দিকে ৩২ বছরের এক পাত্রের সাথে শারমিনের বিয়ে ঠিক করে তার মা। বাল্য বিয়েতে রাজী না হওয়ায় খুলনায় নিয়ে তাকে পাত্রের সাথে এক ঘরে আটকে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে আসেন শারমিন। পালিয়ে রাজাপুরে আসার পরও মা আর সেই যুবকের নির্যাতন সহ্য করতে হয় তাকে। শেষে এক সহপাঠীর সহযোগিতায় রাজাপুর থানায় মা আর ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করে শারমিন। তখন থেকেই আমার ওর পাশে দাড়াই। আন্তর্জাতিক পুরস্কারের পর শারমিন জয় করলো এসএসসি পরীক্ষাকে। এত নির্যাতন, এত ঝড়-বিপত্তির পর এ ফলাফল সত্যিই প্রশংসার, বলেন প্রধান শিক্ষক গাজী গোলাম মোস্তফা। উল্লেখ্য, অসীম সাহসিকতা ও অদম্য ইচ্ছার স্বীকৃতি হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘ ইন্টারন্যাশনাল ইউমেন অব কারেজ- ২০১৭’ পুরস্কারে ভূষিত হন শারমিন আকতার। গত ৩০ মার্চ মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের কাছ থেকে এ সম্মাননা ক্রেস্ট নেন অদম্য শারমিন আকতার।

রাজাপুরে নির্যাতনে প্রতিবন্ধী গৃহবধূর প্রসব হওয়া সেই নবজাতক মারা গেছে!!
রহিম রেজা, রাজাপুর (ঝালকাঠি) থেকে
ঝালকাঠির রাজাপুরের পালট গ্রামে শ^শুরবাড়ির লোকজনের মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতনে সিমা বেগম (৩০) নামে অন্তঃসত্ত্বা শারীরিক প্রতিবন্ধী গৃহবধূর ৬ মাসের সন্তান প্রসব হওয়ার ২দিন পর বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় নবজাতক শিশুটি মারা গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই প্রতিবন্ধী গৃহবধূ রাজাপুরের সোহাগ ক্লিনিকে ডাক্তারী পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য গেলে এ সন্তান প্রসব করেছিলো। বুধবার সন্ধ্যায় সিমার ভাই শফিকুল ইসলাম পলাশ বাদি হয়ে শ^শুর-শাশুড়িসহ ৬ জনকে আসামী করে রাজাপুর থানায় মামলা করেছেন। তবে পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বর্তমানে ওই প্রতিবন্ধী গৃহবধূ মুমূর্ষু অবস্থায় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, গৃহবধূর অবস্থাও অপরিবতিত আছেন। প্রতিবন্ধী গৃহবধূ সীমা বেগমের ভাই শফিকুল ইসলাম পলাশ অভিযোগ করে জানান, গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে সীমার শ^শুর রহমান, শাশুড়ি ফিরোজা বেগম ও দেবর কাসেম, আবুল ও জসিম মাহমুদার প্রতিবেশী আঃ খালেক সিকদারের মেয়ে বিদেশ ফেরত মাহমুদা বেগমের বসতগৃহে গিয়ে মারধর করে গলার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। পরে এ ঘটনা সীমা মিমাংসার জন্য শ^শুরবাড়ির লোকজনকে বললে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বশুর রহমান বটি দিয়ে কুপিয়ে ডান হাত জখম করে। এরপর শাশুড়ি ফিরোজা বেগম ধাক্কা দিয়ে ঘরের মেঝে ফেলে দিয়ে পড়নের পোষাক টেনে হেচড়ে ছিড়ে ফেলে এবং পঙ্গু পায়ের পাতা ধরে টেনে হেছড়ে ঘরের বাহিরে বের করে ফেলে দেয়। এমতাবস্থায় দেবর কাসেম, আবুল হোসেন ও জসিম রান্নার জন্য রাখা স্বমিল থেকে আনা কাঠ দিয়ে অমানুষিকভাবে এলোপাথারি পিটিয়ে ও লাথি মেরে অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধী সীমা পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৫০/৬০ জায়গায় ফুলা জখম করে। পরে সিমা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে বলেন কিন্তু অর্থাভাবে ওই দিন সীমার চিকিৎসা হয়নি পরে সীমার বাবার পরিবারের সহয়োগীতায় ২ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্মরত চিকিৎসক সীমার শারীরিক অবস্থার ও পেটের সন্তানের অবস্থা নিরুপনের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে বললে সীমা রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাফির জন্য গেলে সেখানে অন্তঃসত্ত্বা সীমা সন্তান প্রসব করে ফেলে। প্রতিবন্ধী গৃহবধূ সীমা বেগমের ভাই শফিকুল ইসলাম পলাশ অভিযোগ করে জানান, ১০ বছর পূর্বে সীমার বিয়ে হওয়ার পর থেকেই বহুবার সীমাকে নির্মমভাবে মারধরসহ বিভিন্ন সময় মানুষিক নির্যাতন করে আসছিলো। ৩ সন্তানের জননী সীমার স্বামী গাছ ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। তাদের ৩টি সন্তানও রয়েছে। স্বামী শহিদুল গাছ ব্যবসার কাজে বাড়ির বাহিরে গেলেই শ^শুরবাড়ির লোকজন সীমাকে নিযার্তন করতো বলেও অভিযোগ সীমার বাই পলাশের। রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার টিএইচও মাহাবুবুর রহমান জানান, ওই গৃহবধূ গর্ভাবস্থায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় অপরিপক্ক অবস্থায় সন্তান প্রসব হয়েছে। প্রতিবন্ধী গৃহবধূ ও নবজাতকের অবস্থার আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শেবাচিমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অভিযুক্তদের মতামত পাওয়া যায়নি। রাজাপুর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, এ ঘটনায় মামলা হচ্ছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Check Also

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে: স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।