শাপলা চত্বর ট্রাজেডির চতুর্থ বার্ষিকী আজ। ঢাকাসহ ৫ জেলায় হেফাজতের বিরুদ্ধে ৮৩ মামলা ॥ থেমে আছে ৬৮ মামলার তদন্ত

শাপলা চত্বর ট্রাজেডির চতুর্থ বার্ষিকী আজ

ঢাকাসহ ৫ জেলায় হেফাজতের বিরুদ্ধে ৮৩ মামলা ॥ থেমে আছে ৬৮ মামলার তদন্ত

শুক্রবার ০৫ মে ২০১৭ |

ঢাকাসহ ৫ জেলায় হেফাজতের বিরুদ্ধে ৮৩ মামলা ॥ থেমে আছে ৬৮ মামলার তদন্ত

* ১৫ মামলায় দেয়া হয়েছে চাজর্শিট

* বাগেরহাটের এক মামলার বিচারে সকল আসামী খালাস

* রাজধানীর ৫৩ মামলার মধ্যে চারটির চার্জশিট ॥ ৪৯টির তদন্ত চলছে বলে পুলিশের দাবি

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : নারী নীতি বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা যুথবদ্ধ হয়ে গড়ে তোলেন “হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ”। ওই সময়ে তারা আলাপ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছাতে না পারলেও ঠিক তিন বছর পরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে ‘হেফাজতে ইসলাম’।

রাজধানীর শাহবাগে কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ (গজাম)। এর কয়েক দিন পর ১৪ ফেব্রুয়ারিতে রাজপথে নামে হেফাজত। ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-কে অবমাননা এবং ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগ তুলে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের নাস্তিক হিসেবে অভিহিত করে হেফাজত। সংগঠনটির আমীর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর আহ্বানে ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকার শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করেন এর নেতাকর্মীরা। এতে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক আলেম-উলামা ও শিক্ষার্থীসহ লক্ষাধিক অনুসারী অংশ নেন। ওই সমাবেশে আল্লামা শফী নারী নীতিমালা বাতিল ও ধর্মদ্রোহী নাস্তিক-মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান পাসসহ ১৩ দফা দাবি পেশ করেন। এ দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে একই বছরের ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হয়। ওই দিন সারাদেশ থেকে হেফাজতভুক্ত ধর্মভিত্তিক দল ও কওমী মাদ্রাসার আলেম-উলামা ও শিক্ষার্থীরা ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন।

ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ কর্মসূচি শেষে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক। এর আগে দিনভর পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় মতিঝিল, পল্টন ও আশপাশ এলাকায় ফুটপাতের শত শত দোকান, ফুটপাতের পাশের লোহার বেষ্টনী এবং আশপাশের অনেক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযানের মুখে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ ঘটনায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ২২ কর্মীসহ ৩৯ জন নিহত হন বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়। হতাহতের তথ্য নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে হেফাজত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ওই অভিযানের পর হাজার হাজার মানুষকে হত্যার কথা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পরে কোনো নাম দিতে পারেনি হেফাজতে ইসলাম। তবে এই ঘটনায় সে সময় ভীষণ চাপে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার এবং দেশের পাঁচ মহানগরে নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরে যায় সরকার সমর্থকরা। শাপলা চত্বর থেকে উচ্ছেদের পরদিন দুপুর পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে চলে যাত্রাবাড়ী, কাঁচপুর, নায়াণগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের এলাকায়। কাঁচপুর এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত হয়। এসব ঘটনায় হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

হেফাজতের ১৩ দফা দাবি কেন্দ্রিক ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক ঘটনার চার বছর পূর্তি হচ্ছে আজ শুক্রবার। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মতে, সেই দিনটি তাদের “শাপলা চত্বর ট্রাজেডি” হিসেবে স্মরণীয় থাকবে। তারা প্রতি বছর এই দিনটিকে শোক হিসেবে পালন করবে।

শাপলা চত্বরের ওই ঘটনার পর কয়েকটা মাস হেফাজতে ইসলাম নানা কর্মসূচিতে মাঠে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত নয়। গত কয়েকদিন আগে তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে সরকার প্রধানের দেখা সাক্ষাৎ পরবর্তী কতিপয় দাবি দাওয়া নিয়ে নানামুখী আলাপ আলোচনা শুরু হওয়ায় ওই সংগঠনটিকে নিয়ে নানা ধরনের কথাবার্তাও বাজারে চলমান। এ অবস্থার মধ্যেই ঘুরে এলো চার বছর আগের সেই ৫ মে। এ বছর সে দিনটি স্মরণে কোন প্রকার কর্মসূচি দেয়নি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো নিয়েও কোন সক্রিয়ভাব সংশ্লিষ্টদের মাঝে দেখা নেই।

জানা গেছে, ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ওই কর্মসূচি কেন্দ্রিক অপ্রীতিকর ঘটনায় দায়ের করা ৬৮টি মামলার এখন আর তদন্তই হচ্ছে না। এসব মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশেরও এখন আগ্রহ নেই।

যদিও গত ২১ এপ্রিল সকালে রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামি পার্টি আয়োজিত ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ’ শীর্ষক এক আলোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের তান্ডবের ঘটনায় করা মামলাগুলো স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদের স্বীকৃতির সঙ্গে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।

গত ১১ এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন কওমি মাদ্রাসার শীর্ষ আলেমরা। তাদের একটি বড় অংশ আবার ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতের সঙ্গে জড়িত।

ওই অনুষ্ঠানে কওমি সনদের স্বীকৃতির দাবি ছাড়াও আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে করার মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। তবে কওমির সবচেয়ে বড় ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে আলেমদের দাবি মেনে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন তিনি। পরে এ বিষয়ে দুই জনের মধ্যে কথাও হয়।

ওই বৈঠকের পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয় সরকার হেফাজতের সঙ্গে আপস করেছে কি না।

হেফাজত নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উঠা দাবি মেনে নিয়ে এসব মামলা তুলে নেয়া হবে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব মামলা প্রত্যাহারের প্রশ্নই উঠে না। তিনি বলেন, ‘হেফাজতের সাথে সরকারের কোন আপস হয়নি। হেফাজতের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে সেগুলে আইন অনুযায়ী চলবে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বর্তমানে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সুসম্পর্ক তৈরি হওয়ায় এসব মামলার আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। হেফাজতের নেতারাও এ ব্যাপারে আশাবাদী।

ওই ঘটনায় সে সময় ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় মোট ৮৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে পুলিশ ১৫টি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে। ইতোমধ্যে বাগেরহাটে একটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। এতে সব আসামী খালাস পেয়েছেন।

হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলছে। তিনি আশা করেন, মামলাগুলো শিগগিরই প্রত্যাহার করা হবে।

অবশ্য এখন পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত না হলেও হেফাজতের বিভিন্ন দাবির ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্কের কারণেই কি মামলার তদন্ত এগোচ্ছে না এবং এজাহারভুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ওই ঘটনার পর হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অনেকে গ্রেফতার হন। অনেক আসামী জামিনে আছেন। আবার তাঁদের বিরুদ্ধে সাক্ষীও পাওয়া যায় না। এসব কারণে অভিযোগপত্র দিতে দেরি হচ্ছে।

হেফাজতের ওই দু‘দিনের ঘটনায় পাঁচ জেলায় মোট ৮৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে রাজধানীতে ৫৩টি মামলা হয়। এসব মামলায় হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের আসামী করা হয়। ৮৩ মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামী করা হয় বলে পুলিশ সদর দপ্তর জানায়। তবে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীকে কোনো মামলাতেই আসামী করা হয়নি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ৮৩টি মামলার মধ্যে রাজধানী ঢাকার কলাবাগান থানায় দুটি, রমনায় একটি, শেরেবাংলা নগর থানায় একটি, বাগেরহাটে ছয়টি, নারায়ণগঞ্জে পাঁচটিসহ মোট ১৫টি মামলায় ২০১৪ সালে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের আসামী করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

এরপর হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাস, বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ ৮৮ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। অবশ্য পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে করা সব মামলাই মিথ্যা। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের সমাবেশ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। ওই ঘটনায় করা মামলায় কিছু লোক জামিনে রয়েছেন, অন্যরা স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, রাজধানীতে করা ৫৩টি মামলার মধ্যে চারটি মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বাকি ৪৯টি মামলার তদন্ত চলছে। এসব মামলায় প্রায় আড়াই শ নেতার নামসহ অন্তত ৪০ হাজার লোককে আসামী করা হয়। আসামীদের অনেকেরই নাম ঘুরেফিরে প্রায় সব মামলায় রয়েছে।

তদন্তে সম্পৃক্ত থাকা কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে ঘটনার পর হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাসসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা ওই সহিংসতার জন্য হেফাজতের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোটসহ কয়েকটি দলের নেতাদের দায়ী করে বক্তব্য দেন। একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীও দেন। ৫ মে এক পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়াকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল।

ঢাকার বাইরে আরও মামলা

ঢাকার ঘটনার পরদিন ৬ মে হেফাজতে ইসলামের ডাকা সড়ক অবরোধে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হন। এ ঘটনায় হাটহাজারী থানার পুলিশ হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ৫৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৪-৫ হাজার ব্যক্তিকে আসামী করা হয়। আসামীরা সবাই স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী এবং হেফাজতের সমর্থক। এই মামলার তদন্ত শেষ হয়নি বলে হাটহাজারী থানার পুলিশ জানিয়েছে।

ঢাকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই দিন ও পরদিন বাগেরহাটে হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে হেফাজতের দুজন কর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় ফকিরহাটে চারটি ও বাগেরহাট সদর থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ। এতে হেফাজত, জামায়াত ও স্থানীয় বিএনপির ৮৮ জন নেতা-কর্মীসহ ১০-১২ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করা হয়।

বাগেরহাটের জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, হেফাজত, জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের আসামী করে ছয়টি মামলায় ইতিপূর্বে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। ফকিরহাট থানায় করা একটি মামলার রায়ে প্রায় ৪০০ আসামী খালাস পান। সাক্ষীর অভাবে তাঁরা খালাস পান বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর-শিমরাইল এলাকায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ-বিজিবির সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাতটি মামলা হয়। এসব ঘটনায় পুলিশ সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছয়টি মামলা করে। সহিংস ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এক বাসমালিকও আরেকটি মামলা করেন। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ইতিমধ্যে পাঁচ মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বাকি দুই মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।

গত চার বছরেও এ-সংক্রান্ত মামলাগুলোর সুরাহা হয়নি। উপরন্তু হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে আলোচনা রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলার ক্ষেত্রে সরকার এখন শৈথিল্য দেখাচ্ছে। যাঁদের তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাঁরা শৈথিল্য দেখাচ্ছেন। তোড়জোড় করে হেফাজতের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছিল, আবার সবকিছু থমকেও গেল। মানুষ এসব ভালোভাবে নেয়নি।        সংগ্রাম

Check Also

এনএসআইয়ের গোপন তথ্যে ১৯৯ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার: জরিমানা সাতক্ষীরা সদরের খবর,

এনএসআইয়ের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৯ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধারের পর জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার (২৭ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।