পুলিশ আমাদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারবে না: ধর্ষকদের উল্লাস

ক্রাইমবার্তা রিপোট: বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ধর্ষিতা ধর্ষকদের হাতে পায়ে পর্যন্ত ধরেছে রেহাই পাওয়ার জন্যে। এক পর্যায়ে তারা পুলিশকে অভিযোগ করবে এমনও বলেছে। জবাবে ধর্ষকরা তাদের নিয়ে উল্লস করে বলেছে পুলিশি তাদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারবে না। বনানীতে ধনীর দুলাল ধর্ষকদের খপ্পরে পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া মেয়ে দুটি ধর্ষিতা হয়ে যদিও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে কিন্তু পুলিশ ধর্ষকদের আদৌ গ্রেফতার করতে পারবে কি না সে নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে নাগরিক মহলে। কারণ ধর্ষকরা উঁচুতলার বাসিন্দা, তাদের অভিভাবকরা অভিজাত শ্রেণীর এবং পত্রিকায় আসছে গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছে ধর্ষকদের গ্রেফতার করতে কিন্তু তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।12
ধর্ষণ করার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ওই দুটি মেয়ে ধর্ষকদের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্যে। যাতে তারা চলে যেতে পারে। কিন্তু ধর্ষকরা তাদের টাকার জোর ও প্রভাব সৃষ্টির ক্ষমতার কথা বড়াই করে বলেছে। পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারবে না এও শুনিয়ে দিয়েছে।
ধর্ষিতা মেয়েদের একজন জানান, ধর্ষক আহমেদ শাফাত তাকে বলেন, পুলিশকে যদি আমি টাকা দেই তাহলে তারা কিছুই করবে না। এ ধর্ষণ মামলার মূল আসামী শাফাত এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে মেয়েটিকে গালমন্দ করতে থাকে এবং তাকে আটকে রেখে দুইবার ধর্ষণ করে। এসময় তার বন্ধু নাইম আশরাফ অন্য মেয়েটিকে বলপূর্বক বনানীর ওই হোটেলের আরেকটি রুমে আটকে রাখে ও তাকেও ধর্ষণ করে।
গত ২৮ মার্চ এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষিতারা জানান, তারা মদ্যপ অবস্থায় ছিল। আমাদের হত্যার হুমকি দেয়। ধর্ষণের সময় তারা ভিডিও করে এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে ধারণকৃত ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে। শাফাকাতের জন্মদিন উপলক্ষে পার্টিতে যোগ দিতে রাত ৯টায় বনানীর ওই হোটেলে মেয়ে দুইটি ও তাদের বন্ধুরা যান। তাদের দুজন বন্ধুকে শাফাত ও তার বন্ধুরা মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর বন্দুকের মুখে মেয়ে দুটিকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মদ পানে বাধ্য করা হয়। এর আগে তাদের মোবাইল ফোন দুটি কেড়ে নেওয়া হয়।
পরের দিন শাফাত ধর্ষিতা দুই মেয়ের একজনকে ১৮ বার ফোন করে। কিন্তু তার ফোন ধরেনি মেয়েটি। মেয়ে দুইটির বন্ধু শাদমান সাকিফ যিনি তাদের শাফাতের কাছে নিয়ে গিয়েছিল তিনি ঘটনার তিনদিন পর যোগাযোগ করে এ ঘটনা কাউকে না জানানোর পরামর্শ দেয়। এরপর সাফাত মেয়ে দুটিকে ফের হুমকি দিয়ে টেলিফোনে জানায়, ‘ মনে করো না, আমরা তোমাদের ছেড়ে দেব। আমরা যখন যেখানে আসতে বলব্,আসতে হবে। তা না হলে ধর্ষণের চিত্র ভাইরাল করে দেওয়া হবে’।
দুটি মেয়ে তাদের পরিবারকেও ৪১দিন ধরে বিষয়টি জানায়নি। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা শেষ পর্যন্ত বনানী থানায় ধর্ষণ অভিযোগে মামলা করতে চাইলে দীর্ঘ বিলম্বের পর শনিবার রাতে পুলিশ মামলা গ্রহণ করে। ৫ ধর্ষণের আসামির মধ্যে শাফাত, তার বন্ধু নাইম ও শাদমান সাকিফ অন্যতম। বাকিরা হচ্ছে শাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল ও অজ্ঞাতনাম এক দেহরক্ষী।
পুলিশ ওই পাঁচ আসামী ও তাদের স্বজনদের বাড়ি তল্লাশী চালিয়েও কাউকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে এজন্যে ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানানো হয়েছে। মামলাটি স্পর্শকাতর ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা শেখ নাজমুল আলম।
শাফাতের বাবা ও বিশিষ্ট জুয়েলারি ব্যবসায়ী দিলদার আহমেদ সেলিম জানান, তার ছেলে ব্লাকমেইলের শিকার। পুলিশ তার বাসায় এসেছিল। তবে তার ছেলে যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজি রিয়াজুল হক এক বিবৃতিতে বলেছেন্,এ ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। সোমবার ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ১৫ দিনের মধ্যে কমিটি এ ঘটনার ওপর একটি প্রতিবেদন দেবে। তবে ধর্ষকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে ও বহাল তবিয়তেই রয়ে গেছে। ডেইলি স্টার থেকে অনুবাদ

Please follow and like us:

Check Also

বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ৮ জলদস্যু গ্রেফতার

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ অপহরণে যুক্ত ৮ জলদস্যুকে আটক করেছে সোমালিয়ার পুলিশ। রোববার জাহাজটিকে মুক্তি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।