সাতক্ষীরা শহরে কোন ব্যাটারি চালিত ভ্যান চলবে না – জেলা প্রশাসক

ক্রাইমবার্তা রিপোট:নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা শহরে ভ্যান-রিস্কা চলবে তবে পৌর এলাকায় কোন ব্যাটারি চালিত ভ্যান চলবে না – জেলা প্রশাসক হঠাৎ করেই সাতক্ষীরা শহর থেকে উধাও হয়ে গেছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান। নানা অজুহাত এবং সমন্বয়হীনতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শহর দাপিয়ে বেড়ালেও গত কয়েকদিন ধরে প্রশাসনের কঠোর অভিযানে আড়ালে চলে গেছে এসব অবৈধ ভ্যানগুলো। অতীতেও এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেলেও সমন্বয়হীনতার ফলে অবৈধ যানবাহন বিরোধী পদক্ষেপগুলো থমকে যায় এবং ধারাবাহিকতা হারায়। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করায় শেষ পর্যন্ত অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। তবে এবার বিকল্প যানবাহন হিসেবে প্রধান সড়কে চলছে লেগুনা সার্ভিস, রিক্সা-ভ্যান, ইজিবাইক ও অন্যান্য যানবাহন। অভিযান অব্যাহত থাকায় ইতিমধ্যে অনেক ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালকরা ব্যাটারি ও মটর খুলে চালানো শুরু করেছে। সামরিকভাবে জনসাধারণের চলাচলে একটু বিঘœ ঘটলেও তা দ্রুত সমাধান হবে বলে আশাবাসী প্রশাসন।10
এদিকে যানজট রোধে শুধুমাত্র ব্যাটারি চালিত ভ্যানের ওপর অভিযান চালালে তা কাক্ষিত ফল দেবে বলে অধিকাংশজন মনে করেন না। শহরের এক পা ভ্যান চালক জানান, আমরা অবশ্যই এ অভিযানকে স্বাগত জানাতে চাই। দুর্ঘটনা রোধে এ অভিযানটি কম-বেশি ফলপ্রসু হবে। সর্বোপরি প্রশাসনকে তদবির না শোনা এবং প্রভাবশালী ও ওপর মহলের চাপ সহ্য করার দৃঢ় মানসিকতা থাকতে হবে। ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান চলাচল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহলে তবে ঝুঁকিপূর্ণ এ অবৈধ যানটি বিদ্যুতের অপচয়ের একটি বড় মাধ্যম। অবৈধ এ যানবাহনটি বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের মধ্যে সমন্বয় দরকার বলে মনে করেন শহরবাসী।
অবৈধ এ ব্যাটারি চালিত ভ্যান বন্ধ করায় একটি মহল এর বিপক্ষে অবস্থান করলেও সাধারণ নাগরিকদের মাঝে ফিরে এসেছে সস্তির নিঃশ্বাস। ব্যাটারি চালিত এসব অবৈধ যানবাহন ছোট-বড় দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অভিনন্দন জানিয়েছে সচেতন শহরবাসী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। তবে বিকল্প ব্যবস্থা ও মূল্য তালিকা নির্ধারণ করার জোর দাবী জানান তারা।
সাতক্ষীরা জেলা মাহিন্দ্রা থ্রি হইলার চালকলীগের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ব্যাটারি চালিত ভ্যান বন্ধ হওয়ার পর থেকে শহরের যানযট কিছুটা নিরসন হয়েছে। তবে সামরিকভাবে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এটা কিছুদিন পর স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
এব্যাপারে বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ইঞ্জিন থাকলেও নিরাপত্তা এবং অন্যান্য দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাটারিচালিত ভ্যান যান্ত্রিক যানবাহন নয়। সাতক্ষীরায় ব্যাটারি চালিত এসব অবৈধ যানবাহন বন্ধে বিগত ২ বছর ধরে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অজুহাত দেখিয়ে তারা সময় নেয়। প্রতি মাসে আইন শৃংখলা বিষয়ক মিটিং ব্যাটারি চালিত ভ্যান বন্ধের ব্যাপারে কথা বলেন বক্তারা। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে পর্যাপ্ত ৪ হুইলার না থাকলে আমরা ৩ হুইলার চালু করবো। দুর্ঘটনাও ঘটার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য এর বৈধতা দেওয়া হয়নি।’
সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের প্রাক্তণ অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ব্যাটারিচালিত ভ্যান যারা চালাচ্ছে এরা অধিকাংশ মধ্যবিত্তের শ্রেণির মানুষ। তবে কিছু গরিব মানুষও আছে যারা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এটা তৈরি করেছে। এছাড়া কিছু মানুষ আছে যারা ১০/১৫ ব্যাটারি চালিত ভ্যান তৈরি করে ভাড়ায় চালাচ্ছে। ব্যাটারি চালিত এসব ভ্যানের চার্জ দেওয়ায় প্রচুর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। দিন দিন এটা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে রাস্তায় ব্যাটারি চালিত ভ্যানে-ভ্যানে এক্সিডেন্ট হচ্ছে। এখন এটা বন্ধ করতে হলে ব্যাটারি চালিত ভ্যানগুলো দিয়ে মালামাল বহন করা যেতে পারে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের কোন ভ্যান চালক পৌর এলাকায় ভ্যান চালাতে পারবে না। তাহলে কিছুটা সমাধান হবে বলে আমি মনে করি।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাটারি চালিত ভ্যান বন্ধের ব্যাপারে জেলা আইন শৃংখলা মিটিং এ বছরের পর বছর আলোচনা হয়েছে। সাতক্ষীরার মানুষ চায় এখানে কিছু রিস্কার প্রবর্তন হোক। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু রিস্কা প্রদান করা হয়েছে। খুব শ্রীঘ্রই জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০০টি রিস্কা বিতরণ করা হবে। সম্প্রতি গত ১৪ মে আইন শৃংখলা কমিটির মিটিং সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ব্যাটারি চালিত ভ্যান শুধু মাত্র পৌর এলাকায় চলবে না কিন্তু পৌর এলাকার বাইরে চলমান থাকবে। এছাড়া পৌর এলাকায় রিস্কা বা পা ভ্যান তো চলবে। এব্যাপারে নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ আমার সাথে বৈঠক করেছে। সেখানে আমি বলেছি, ‘সকল জনগণ যদি চাই, এটা চলবে। তাহলে সেটা চলবে। কারণ জনগণের জন্যই তো আইন, আইনের জন্য জনগণ না। বেশিভাগ মানুষ যদি চাই তাহলে মিটিং সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আপনারা সবার সাথে কথা বলুন।’ সাতক্ষীরা একটি ছোট শহর এখানে লেগুনা, পা ভ্যান ও রিস্কাসহ অন্যান্য যানবাহন তো চলছে। সামরিক এ সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ব্যাটারি চালিত ভ্যান বন্ধ থাকলে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ বলেন, ব্যাটারি চালিত ভ্যান বন্ধ হওয়া উচিত। এটা দীর্ঘ দিনের সমস্যা। তবে জনগণের যাতে দুর্ভোগ না হয় সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ব্যাটারি চালিত ভ্যানগুলো বন্ধের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে। গত ১ বছর আগে তারা ৩ মাসের সময় নিয়েছিল। কিন্তু এটা তো কমছে না বরং নতুন নতুন ব্যাটারি চালিত ভ্যান আরো সংযোজন করা হচ্ছে। বর্তমানে এটি ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। অনেকে হয়ত বলছেন, এতে তারা বেকার হয়ে যাবে। এখানে বেকার হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ পা চালিত ভ্যান চলতে পারবে। আর ইঞ্জিন চালিত ভ্যানগুলো পৌরসভার বাইরে চালাতে পারবে, এতে কোন অসুবিধা নেই। সুতরাং, ইঞ্জিন বা ব্যাটারি খুলে তারা চালাতে পারবে এতে তো কোন বাধা বা নিষেধাজ্ঞা নেই। ইঞ্জিন বা ব্যাটারি চালিত ভ্যানে দেখা যায় নিয়ন্ত্রণ থাকেনা ফলে অহরহ এক্সিডেন ঘটে। যেটা আমাদের সদর হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, প্রতিনিয়ত ব্যাটারি চালিত ভ্যানের কারণে বহু মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকের হাত পা কেটে ফেলতে হচ্ছে, এমনিক মৃত্যু পর্যন্তও হয়ছে। আমরা আশাকরি আগামি ১ সপ্তাহের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। ইতিমধ্যে কিন্তু আমরা প্রচুর রিস্কা প্রদান করেছি এবং খুব দ্রুত জেলা পরিষদ থেকে ২০০টি রিস্কা প্রদানের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। আগে কিন্তু শহরে কোন রিস্কা দেখা যেতো না কিন্তু এখন শহরে অনেক রিস্কা দেখা যাচ্ছে। আসলে প্রথমে কোন সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গেলে ২/৪ দিন একটু বিঘœ ঘটে, এজন্য শহরবাসীকে একটু কষ্ট সহ্য করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানান তিনি। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, জনপ্রশাসন মানেই হলো জনগণের কল্যান, জেলা প্রশাসনও চায় জনগণের কল্যাণ। জনগণের অকল্যাণ হোক এমন কোন কাজ প্রশাসন বা আইশৃংখলা কমিটির কোন সদস্য করবে না। ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালকদের মানবিক কারণে এর আগে বিভিন্ন মেয়াদে সময় দেওয়া হয়েছিল এবার আর কোন ভাবেই এ অভিযান বন্ধ করার সুযোগ নেই।

 

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরায় ভিডিও কলে কথা বলা অবস্থায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা

সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ইরানী আফরোজ তানু (২৭) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।