দ্বিতীয় ধাপে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি আজ থেকে কার্যকর

ক্রাইমবার্তা রিপোট:3_128996   আজ পহেলা জুন থেকে দ্বিতীয় ধাপে গ্যাসের বাড়তি দাম কার্যকর হচ্ছে। ফলে এখন থেকে দুই চুলা ৯৫০ টাকা এবং এক চুলার জন্য ৯০০ টাকা বিল পরিশোধ করতে হবে। সিএনজিতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম দিতে হবে ৪০ টাকা। এ ছাড়া বাণিজ্যিকে প্রতি ঘনমিটারের দাম ১৭.০৪ টাকা। ক্যাপটিভ পাওয়ারে প্রতি ঘনমিটার ৯.৬২ টাকা, বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম ৩.১৬ টাকা, চা-বাগানে গ্যাসের দাম ৭.৪২ টাকা, সার কারখানায় ২.৭১ টাকা এবং শিল্পে ৭.৭৬ টাকা। এ ছাড়া গৃহস্থালি কাজে মিটার ব্যবহারকারীদের দাম দিতে হবে ১১.২০ টাকা। দ্বিতীয় দফায় মূল্য বৃদ্ধির আদেশ কার্যকর হওয়ায় বছরে সরকারের অতিরিক্ত আয় হবে ৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ভোক্তা পর্যায়ে দুই দফায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছিল। দুই ধাপে তারা ৮ খাতে গড়ে ২২.০৭ শতাংশ দাম বাড়ায়। প্রথম দফার দাম কার্যকর হলেও আদালতের রায়ে আটকে যায় দ্বিতীয় দফার (১ জুন) দাম। কিন্তু পহেলা জুন থেকে দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ মঙ্গলবার স্থগিত করে দিয়েছেন চেম্বার আদালত। ফলে মামলার আইনজীবীরা এবং বিইআরসি বলছে, এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়াতে আর কোনো বাধা নেই। তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মশিউর রহমান  বলেন, আজ থেকেই তারা দ্বিতীয় দফায় বাড়তি গ্যাসের দাম কার্যকর করবেন। বিইআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এ দাম কার্যকর করবেন বলে জানান।

জানা গেছে, প্রথম ধাপের মূল্য বৃদ্ধির ফলে গত ১ মার্চ থেকে আবাসিক খাতে দুই চুলার জন্য ৮০০ এবং এক চুলার জন্য ৭৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ৩ মাসের মাথায় আজ থেকে দাম আরও বাড়ল। ফলে এখন থেকে দুই চুলার জন্য ৯৫০ এবং এক চুলার জন্য ৯০০ টাকা দিতে হবে। অথচ মার্চের আগে এক চুলার জন্য ৬০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকা দিতে হয়েছিল। অর্থাৎ কয়েক মাসের ব্যবধানে এক লাফে গ্যাসের দাম বাড়ল ৩০০-৩৫০ টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সার, শিল্প, চা-বাগান, বাণিজ্যিক, সিএনজি ও গৃহস্থালিতে মিটার ব্যবহারকারীদের জন্যও একই হারে দাম বাড়ে।

বাণিজ্যিকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের জন্য ১১.৩৬ টাকা থেকে বেড়ে মার্চে হয়েছিল ১৪.২০ টাকা, আজ থেকে হচ্ছে ১৭.০৪ টাকা। সিএনজির দাম ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে মার্চে হয়েছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা। আজ থেকে হচ্ছে ৪০ টাকা।

ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারে দাম বেড়েছিল ৮.৯৮। আজ থেকে ৯.৬২ টাকা। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম মার্চ থেকে বেড়ে হয়েছিল ২.৯৯ টাকা আর আজ থেকে ৩.১৬ টাকা।

চা-বাগানে গ্যাসের দাম মার্চ থেকে বেড়ে হয়েছিল ৬.৯৩ টাকা আর ১ জুন থেকে হচ্ছে ৭.৪২ টাকা। সার কারখানায় মার্চে বেড়ে হয়েছিল ২.৬৪ টাকা এবং জুন থেকে হচ্ছে ২.৭১ টাকা। শিল্পে গ্যাসের দাম মার্চে বেড়ে হয়েছিল ৭.২৪ টাকা আর জুনে হচ্ছে ৭.৭৬ টাকা। এ ছাড়া গৃহস্থালি কাজে মিটার ব্যবহারকারীদের দাম বেড়ে মার্চে হয়েছিল ৯.১০ টাকা, ১ জুন থেকে হচ্ছে ১১.২০ টাকা।

জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় মূল্য বৃদ্ধির আদেশ কার্যকর হওয়ায় বছরে সরকারের অতিরিক্ত আয়ের ৮১ শতাংশ অর্থ যাবে সরকারি কোষাগারে। বাকি ১৯ শতাংশ অর্থ যাবে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্যাস কোম্পানির কোষাগারে। অন্যান্য কোম্পানির আয় দিয়ে সরকারের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করার পরও সরকার ৩ মাসের ব্যবধানে গ্যাসের দাম পরপর দুই দফায় বৃদ্ধির অযৌক্তিক আদেশ চাপিয়ে দেয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপরও। বেড়ে যাবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য।

শিল্পোদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্যাসভিত্তিক শিল্পে গ্যাসের দর বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা থাকা উচিত। এটি নিশ্চিত করা গেলে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নেয়া সহজ হয়। শিল্পে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম ৮.৩৬ থেকে বেড়ে ৯.৬২ টাকা হওয়ায় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখে পড়বে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ অর্থাৎ ক্যাপটিভ পাওয়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকের জন্য সুতা কিংবা বস্ত্র উৎপাদন লাভজনক হবে না বরং লোকসান গুনতে হবে।

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটর দিয়ে স্পিনিং মিলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়ে ৪ টাকা ২০ পয়সা। মূল্য বৃদ্ধির ফলে এখন দাম পড়বে সাড়ে ৯ টাকার বেশি। এতে প্রতি কেজি সুতার দাম ৪০-৫০ সেন্ট বেড়ে যাবে।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা আর এক চুলার বিল ৪০০ টাকা থেকে বড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল। বিইআরসির আইন অনুযায়ী কোনো সংস্থা এক বছরের মধ্যে মাত্র একবার দাম বাড়ানোর আবেদন করতে পারবে।

গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, এভাবে দফায় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বড় ধরনের অন্যায় ও অনিয়ম। তিনি বলেন, গণশুনানিতে খোদ বিইআরসির টেকনিক্যাল কমিটি কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনাকে অযৌক্তিক বলে মত দিয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নেয়া হয়নি। দ্বিতীয় দফায় দাম বাড়লে ফের গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে। এখন রমজান মাস। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে এ মাসেও একই হারে বাড়বে নিত্যপণ্যের দাম। শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।

গ্যাসের নতুন মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে একটি রিট করেন। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আজ থেকে দ্বিতীয় ধাপে কার্যকর হতে যাওয়া গ্যাসের নতুন মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন। গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের এ আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আবেদনটি আগামী ৫ জুন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বিইআরসির সিদ্ধান্ত অনুসারে আজ থেকে দ্বিতীয় দফার বর্ধিত মূল্য কার্যকর হতে বাধা নেই বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।