ব্যাংকে যাদের লাখ টাকা রয়েছে তারা যথেষ্ট সম্পদশালী : মুহিত

ব্যাংকে যাদের লাখ টাকা রয়েছে তারা যথেষ্ট সম্পদশালী : মুহিত
বিশেষ সংবাদদাতা225080_136
০২ জুন ২০১৭,
ব্যাংকে যাদের লাখ টাকা রয়েছে তাদেরকে যথেষ্ট সম্পদশালী বলে মনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তাই তিনি তাদের রক্ষিত লাখ টাকার ওপরে আবগারি শুল্কের হার দেড়গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর সদ্য ঘোষিত আগামী অর্থবছরের বাজেটকে পুরোটাই উজ্জ্বল বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেছেন, আমার মতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার বাস্তবায়ন হলেও বাড়বে না দ্রব্যমূল্য। প্রত্যেক বাজেটই উচ্চাভিলাসী, কোনো বাজেটেরই আকার আগের বাজেটের চেয়ে কম হয় না। এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট হলফ করে বলতে পারি।

এ বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। আর যারা বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন করা যাবে না তাদের কথা অবান্তর।

আজ শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়াতনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম প্রমুখ।

বাজেটে ব্যাংকের রক্ষিত টাকার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা একলাখ টাকা ব্যাংকে রাখতে পারেন, তারা আমাদের দেশের তুলনায় সম্পদশালী। তারা বাড়তি ভারটা বহন করতে পারবেন, সমস্যা হবে না।

প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে, বছরের যেকোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি লেনদেনের উপর আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হয়েছে।

নতুন বাজেটে আবগারি শুল্ক আরোপের সীমা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে বছরের যে কোনো সময় ২০ হাজার টাকা লেনদেনে শুল্ক আরোপ করা হতো, এখন এক লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনে শুল্ক আরোপ করা হবে না।

নতুন বাজেট প্রস্তাবে ২০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনে বিদ্যমান ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে বলে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এক লাখ টাকার লেনদেনে এখন ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করা আছে। এখন সেটা আর দিতে হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে মুহিত বলেন, যাদের টাকা এক লাখের উপরে থাকবে কেবল তাদের উপরই একটা কর ধার্য করেছি। বড়লোকের ক্ষেত্রে আমাদের করটা ছিল, কিন্তু যারা মিড লেভেলে ছিল তারা এর অন্তর্ভূক্ত ছিল না। একলাখ টাকার নিচে যারা আছেন, তাদের ভার থেকে মুক্ত করাই যথেষ্ট।

নতুন বাজেটে ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে হতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা, ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে হতে এক কোটি টাকা পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে দুই হাজার ৫০০ টাকা, এক কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হতে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত সাত হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১২ হাজার টাকা এবং পাঁচ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বিদ্যমান ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

দারিদ্র বিমোচনে সর্বাধিক বরাদ্দ
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এই বাজেটে দারিদ্র বিমোচনের জন্য ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জেন্ডার সমতায় ২৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে একটি কথা সামনে এসেছে বৈদেশিক সহায়তার আকার একটু বেশি ধরা হয়েছে।

মুহিত বলেন, গত কয়েক বছরে ধরে বিপুলভাবে আমরা বৈদেশিক সহায়তা আদায় করছি। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আশা করছি সামনে আমাদের বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়বো। এ বিষয় নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বাস্তবায়নকারি সংস্থাগুলোর সাথে বৈঠক করছে। কিন্তু এবার একটু রিভিউ বেশিই বাড়াতে হবে।

কর্মসংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর প্রবৃদ্ধি যদি এক শতাংশ বাড়ে, তাহলে দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। এই হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লে আমাদের কর্মসংস্থানের ঘাটতি থাকবে না।

ভ্যাটের বিষয়ে মুহিত বলেন, বাজেটে প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে দ্রব্যেমূল্য বাড়বে না। নতুন ভ্যাট আইন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্পর্শ করবে না।

তিনি দাবি করেন, আগে ৩০-৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার হলে তিন শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হতো। প্রস্তাবিত বাজেটে এই টার্নওভারের পরিমাণ করা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত। এর মানে টার্নওভারের পরিসীমা বাড়ানোর ফলে ক্ষুদ্র ও মধ্য শ্রেণির ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে হবে না। বড় ব্যবসায়ীদের চার শতাংশ হারে ভ্যাট দিবে। যা আগে বিভিন্ন স্তরে আরও বেশি দিতে হতো। এখন কম দিতে হবে, তাই দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না।

ব্যাকিংখাতে লুটপাট হচ্ছে!
ব্যাংক জালিয়াতির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক খাতে লুটপাট হচ্ছে। আগে সরকারি ব্যাংকগুলোতে হতো, এখন বেসরকারি ব্যাংকে হচ্ছে’ এই অ্যাজামশন (ধারণা) আমাদের মানতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ ব্যাংক খাতে জালিয়াতি, চুরিচামারি হয়ই। সব সময় হয়, সব দেশেই হয়। জালিয়াতি হয়তো বা কোথাও একটু বেশি হয়। আমাদের দেশে আগে একটু বেশিই হয়েছিল। এখন আমরা সেটা একটু কমাতে পেরেছি। ব্যাংক লুটপাট হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। তবে দুই-একটি ব্যাংকে সমস্যা আছে। সমস্যাগুলো সমাধানেরও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, বাজেটের কোথাও কোনো দূর্বলতা নেই, পুরো বাজেটই উজ্জ্বল। এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট হলফ করে বলতে পারি। এই বেস্ট বাজেটের জন্য যে পরিশ্রম করা দরকার আমি করেছি। বাজেট তৈরির সাথে যারা জড়িত ছিলেন তারও যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। বাজেটের কোথাও দুর্বলতা আছে বলে আমার মনে হয় না।

আর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তেলের দাম কমানো হয়নি। তেলার দাম কমানো হয়েছে। তবে যে পরিমাণ কমানোর দরকার ছিল, হয়তো সে পরিমাণ কমেনি। এ বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করবো না। কারণ বিষয়টি প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।

সঞ্চয়পত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমমন্বয় করা হবে। আগে অনেক দিন পর পর এ সুদের হার সমন্বয় করা হতো। কিন্তু এখন এটি প্রতিবছর অন্তত একবার সমন্বয় করা হবে। কারণ বাজারের সুদ হারের থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহারে অনেক বৈষম্য হওয়াটা যৌক্তিকতা নেই। তবে অল্প ব্যবধান থাকবে। তবে বাজারে সাত শতাংশ আর সঞ্চয়পত্রে ১১ শতাংশ হবে এটা ঠিক না।

তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোতে প্রণোদনা কখনো দেয়া হবে না। তবে রেমিট্যান্স পাঠানোতে যেসব খরচ হয় তা আর দিতে হবে না। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি।

মুহিত আরো বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের প্রভাবে চালের দাম বাড়েনি। হাওড় অঞ্চলে আগাম বন্যায় বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তবে চালের দামি খুব দ্রুত সাভাবিক হয়ে যাবে।

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ ১৪৩১পালিত 

শাহ জাহান আলী মিটন, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় উৎসবমুখর পরিবেশে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য তুলে ধরে নানা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।