এখন আমরা আর গৃহপালিত বিরোধী দল নই : এরশাদ

ক্রাইমবার্তা রিপোট:জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, সংসদে আমরা আগে কথা বলতাম। সরকারের সব কাজ সমর্থন দিয়ে যেতাম। মানুষ আমাদের গৃহপালিত বিরোধী দল বলতো। কিন্তু সম্মিলিত ঐক্যজোট গঠনের পর আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। মানুষ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। এখন আর আমরা গৃহপালিত বিরোধী দল নই। জাতীয় পার্টি সামনের সারির দল। জাতীয় পার্টি ছাড়া আগামী নির্বাচন সম্ভব নয়।

 

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত ঈদ পূণর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান জি.এম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, জাতীয় ইসলামী মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সেন্টু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আ.ন.ম শাহজাহান, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু, বাহাউদ্দিন বাবুল, আমানত হোসেন আমানত, যুগ্মমহাসচিব শফিকুল ইসলাম শফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ভুইয়া, মোস্তাকুর রহমান নাঈম, ফকরুল আহসান শাহজাদা, কেন্দ্রীয় নেতা বেলাল হোসেন, একেএম আসরাফুজ্জামান খান, হেলাল উদ্দিন, মিজানুর রহমান মিরু প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, আগামীতে জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় যাওয়ার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। জাপা ছাড়া নির্বাচন হবে না। আমরা ঠিকমত কাজ করতে পারলে ক্ষমতায় যাওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে।

এরশাদ বলেন, আমার মনে হয় দেশটা অভিশপ্ত। সিলেটের প্লাবনে লাখ লাখ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাওরে বন্যা হলো, লাখ লাখ টন চাল নষ্ট হলো। পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও সিলেটে পাহাড় ধসে মাটিচাপায় সেনা সদস্যসহ মারা গেলো ১৫৪ জন, বয়লার বিস্ফোরিত হয়ে নয়জন, অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে শুধু মৃত্যুর খবর আর লাশের খবর। সু-সংবাদ শোনা যাচ্ছে না কোথাও। খবরের কাগজ খুললে প্রতিদিন দেখি মৃত্যু, ধর্ষণ-মৃত্যু। সুশাসন কোথাও দেখি না। রক্তাক্ত বাংলাদেশ। কেন রক্তাক্ত বাংলাদেশ হবে? কেন অভিসপ্ত বাংলাদেশ হবে? দেশকে এ অভিশাপ থেকে পরির্তন করা দরকার। আর এ পরিবর্তন একমাত্র জাতীয় পার্টিই করতে পারবে।

এরশাদ বলেন, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম, রক্তাক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাইনি। জেলে নিয়েছিল, আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এখনো বেঁচে আছি আল্লাহর অশেষ রহমতে, মানুষের দোয়ায়। আমাদের উন্নয়নের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের সৎসাহস আছে। আমি যখন তোমাদের মূখ দেখি তখন সব দুঃখ ভুলে যাই। আমাদের জন্য একটি ব্রাইট ফিউচার অপেক্ষা করছে। সুযোগটি আল্লাহ তৈরি করে দিয়েছেন। এই সুযোগ হেলায় নষ্ট করা যাবে না। উই ক্যান ডু ইট।

এরশাদ বলেন, আমাদের অনেক কর্মী জেলে গেছে, অনেক কর্মী মারা গেছে, আমাদের পার্টি অফিস ভেঙে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা এখন বেঁচে আছি। এজন্য আমাদের বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহ আমাদের জন্য রাজনীতি করেছে। আল্লাহ চায় পরিবর্তন, আল্লাহ চায় অভিসপ্ত জাতিকে মুক্ত করতে। ইনশাআল্লাহ একমাত্র আমরাই পারবো আর কেউ পারবে না। ছয় বছর ছিলাম জেলে, পার্টির কোনো ক্ষতি হয়নি। এতো অত্যাচার, এতো অবিচারের পরও জাতীয় পার্টি বেঁচে আছে। এটা আল্লাহর মেহেরবানী। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কথা জাতীয় পার্টি। মুছে যাওয়ার কথা আমাদের নাম। কিন্তু মুছে যায়নি।
তিনি বলেন, বিএনপির খারাপ রেকর্ড সবাই জানে, আমাদের খারাপ কের্ড নেই। আমাদের হাতে মানুষের রক্ত নেই। ভালোবেসে মানুষকে জয় করেছি। আমাদের সাহস আছে, তোমাদের সহযোগিতা পেলে ইনশা আল্লাহ জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনতে সক্ষম হবো।

এরশাদ বলেন, এতদিন আমাদের কোনো নাম ছিল না। আমরা ছিলাম গৃহপালিত বিরোধী দল। আমাদের তখন কথা বলার সুযোগ ছিল না। সংসদে সরকারের পক্ষে কথা বলতাম। কিন্তু এই জোট গঠন করার পর দেশের মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। হয়তো জাতীয় পার্টি পরিবর্তন আনতে পারবে। মানুষের মধ্যে বিরাট হতাশা আছে। এই হতাশা একমাত্র দূর করতে পারে জাতীয় পার্টি।

 

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।