পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রুখতে ৬০ হাজার শান্তি বাহিনী। মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র কাবাঘরের একটি ফটোশপ করা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে

পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রুখতে ৬০ হাজার শান্তি বাহিনী
পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রুখতে ৬০ হাজার শান্তি বাহিনী: পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট অঞ্চলে গত কয়েকদিনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যেই সে রাজ্যের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাড়ায় পাড়ায় শান্তি বাহিনী তৈরি করবে।
বাংলাদেশের সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে এঘটনার সুত্রপাত। কয়েক হাজার বাংলাদেশী অাটকা পড়েছে এখানে। উত্তেজনা বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার অাশংকা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী জানিয়েছেন সব ধর্মের প্রতিনিধি, স্থানীয় ক্লাব, ছাত্র-যুবদের নিয়ে রাজ্যের প্রায় ৬০ হাজার নির্বাচনী বুথ ভিত্তিক শান্তি বাহিনী তৈরী করবে পুলিশ প্রশাসন।

কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য নজরদারির কাজ চালাবে এই বাহিনী।

অন্যদিকে উত্তর চব্বিশ পরগণার বসিরহাটে আজ আবারও নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। আজ অবশ্য সেখানে পুলিশের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষদের।

উত্তর চব্বিশ পরগণায় বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বাদুরিয়া, বসিরহাট, দেগঙ্গা আর স্বরূপনগরে গত সোমবার থেকে চলতে থাকা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও হিংসাত্মক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল

মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র কাবাঘরের একটি ফটোশপ করা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে।

এরপরেও নানা ধরনের গুজব ছড়াতে থাকে গত কয়েকদিন ধরেই – যার জেরে অনেক জায়গাতেই অশান্তি ছড়িয়েছিল।

রাজ্য সরকার মনে করছে কেউ বা কোনও গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে কী না, অথবা উস্কানিমূলক পোস্ট করা হচ্ছে কী না, তার ওপরে একেবারে তৃণমূল স্তরে নজরদারি চালানো দরকার।

সেজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের ৬০ হাজার নির্বাচনী বুথ এলাকার প্রতিটিতে একটি করে শান্তি বাহিনী তৈরি করবে প্রশাসন, যার মধ্যে স্থানীয় মানুষ, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের সঙ্গেই পুলিশ-প্রশাসনও থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

“প্রতি বুথে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শান্তি বাহিনী তৈরী করবে পুলিশ প্রশাসন। এলাকার ছাত্র, যুব, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংগঠন – সকলেই থাকবে ওই বাহিনীতে।

নিজের এলাকায় নিজেরাই শান্তি বজায় রাখার জন্য এই ব্যবস্থা করা হল,” বলছিলেন মমতা ব্যানার্জী।

মনে করা হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক মাধ্যমের ওপরেও যেমন নজরদারি চলবে, তেমনই কোথাও কোনও উত্তেজনা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে শান্তি বাহিনীগুলির মাধ্যমে প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গেই তার খবর পেয়ে যাবে।

বিরোধী দলগুলো অবশ্য মনে করছে নিজের প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকতেই মমতা ব্যানার্জী শান্তি বাহিনী তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সি পি আই এম দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুহম্মদ সেলিম বলছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে খুব মহৎ উদ্দেশ্য, কিন্তু খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে তাঁর প্রশাসন বা দলের কর্মীদের যে কাজটা করা উচিত ছিল, সেটাই তিনি সাধারণ মানুষের ওপরে চাপিয়ে দিলেন।”

“গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামা করার জন্য বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক শক্তি যেভাবে বাড়ছে, তখন পুলিশ প্রশাসন বা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদেরও কাজে লাগানো হয় নি! তারা কোনও ভূমিকা পালন করে নি এটা আটকাতে, যদি না উল্টে সাহায্য করে থাকে।”

তিনি আরও জানাচ্ছিলেন যে যখন সেনা বা আধাসেনা নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল উত্তর চব্বিশ পরগণায়, তখন ব্যাপারটাকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী শান্তি বাহিনী তৈরি করছেন।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আর এস এস অভিযোগ করছে ক্ষমতাসীন তৃনমূল কংগ্রেসের মধ্যেই এমন অনেকে রয়েছেন, যারা নানা সময়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে থাকেন। তাদেরই যদি ওই শান্তি বাহিনীগুলোতে রাখা হয়, সেটা হাস্যকর ব্যাপার হবে।

আর এস এসের দক্ষিণবঙ্গ অঞ্চলের প্রধান জিষ্ণু বসু বলছিলেন, “শান্তি বাহিনীগুলোর নেতৃত্ব কারা দেবেন? যিনি বর্ধমানে খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে সেখানে কট্টরপন্থীদের নিয়ে সভা করেছিলেন সেই মন্ত্রী না নিষিদ্ধ ঘোষিত সিমির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যিনি এখন রাজ্যসভার সদস্য তিনি?”

“না কি সেই নেতা যিনি বলেছিলেন তাঁর এলাকায় গেলে নাকি ছোট পাকিস্তান দেখা যাবে। এরা যদি শান্তি বাহিনীর মাথায় বসেন সেটা স্পষ্ট করে বলুন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী তো রাজ্য প্রশাসনকে পঙ্গু করে

দিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তি আর জেহাদী শক্তিকে বাড়তে সুযোগ দিয়েছেন, এখন তারা আর উনার নিয়ন্ত্রণে নেই।”

যে অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা চলছে, সেই দেগঙ্গার বাসিন্দা ও রাজ্যের অন্যতম মুসলিম নেতা মুহম্মদ কামরুজ্জামান সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও বলছেন স্থানীয় মানুষকে নিয়ে এরকম উদ্যোগ আগেই নেওয়া উচিত ছিল।

“স্থানীয় স্তরে ধর্মীয় নেতারা সকলেই দাঙ্গা হাঙ্গামা আটকাতে কাজ করছেন। কিছু মানুষ ধর্মের নাম করে অশান্তি ছড়াচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। তবে শুধু শান্তি বাহিনী গড়লে হবে না। যেসব লোক অশান্তি ছড়াচ্ছে তাদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে,” বলছিলেন মি. কামরুজ্জামান।

এদিকে উত্তর চব্বিশ পরগণার যে বাদুরিয়া এলাকা থেকে গত সোমবার প্রথম অশান্তি ছড়িয়েছিল, সেখানে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এলেও বসিরহাটে আজ নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

স্থানীয় সূত্রগুলি বলছে, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় যুক্ত সন্দেহে বেশ কয়েকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে পুলিশ আজ গ্রেপ্তার করলে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে।

আজকের বিক্ষোভে সামনের সারিতে নারীরাই ছিলেন বলে কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে।

অন্যদিকে সবকটি উত্তেজনাপূর্ণ এলাকাতেই কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর টহল চলছে এখনও।

বাদুরিয়া, বসিরহাট সহ উত্তেজনাপূর্ণ এলাকায় এখনও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।বিবিসি

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।