বিক্ষোভে উত্তাল দার্জেলিং, থানাসহ বিভিন্ন অফিসে অগ্নিসংযোগ-অস্ত্র লুট

ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জেলিং পাহাড়ে অশান্তি চলছেই। মোর্চার আক্রমণের নিশানায় পুলিশ। শনিবার রাতে দার্জিলিংয়ের সুখিয়াপোখরির পোখরিয়াবংয়ে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ (এসএপি) ক্যাম্পে মোর্চা সমর্থকরা হামলা চালায়। হামলায় চার পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। সেখান থেকে চারটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল লুট হয়েছে বলে পুলিশের আইজি জাভেদ শামিম জানিয়েছেন।

বিক্ষোভে উত্তাল দার্জেলিং, থানাসহ বিভিন্ন অফিসে অগ্নিসংযোগ-অস্ত্র লুট

রোববার সোনাদা থানা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় গুরুং বাহিনী। শনিবারও সোনাদা থানায় আগুন লাগানো হয়েছিল। থানার অর্ধেক অংশ পুড়েছিল। রোববার ফের আগুন লাগানোয় থানার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এদিনই সকালে মিরিকের তারবু টি গার্ডেন পুলিশ আউট পোস্টেও আগুন লাগায় হামলাকারীরা।

শনিবার কার্শিয়াং মহকুমা শাসকের দপ্তরেও আগুন লাগায় তারা। অফিসে রাতে কেউ ছিলেন না। কার্শিয়াং থেকে দমকলকর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এর আগে সুখিয়াপোখরি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসও পোড়ানো হয়। আগুন দেওয়া হয় কার্শিয়াংয়ের গৈরিগাও গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসেও। সন্ধ্যায় লোধামার নিপ্পন গেস্ট হাউসে আগুন লাগানো হয়।

শনিবারই পাহাড়ে নেমেছে সেনা। সিংমারি থেকে দার্জিলিং চকবাজার পর্যন্ত এলাকা সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছে। দুপুর থেকেই তাদের টহল চলছে। এরই মধ্যে পাহাড়ে কোঅর্ডিনেশন কমিটির পরবর্তী বৈঠক এগিয়ে এনেছে মোর্চা। আগামী ১৮ জুলাই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক বিনয় তামাং বলেন, পাহাড়ে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেটা দেখেই সর্বদলীয় বৈঠক ১৮ জুলাই থেকে এগিয়ে ১১ জুলাই করা হয়েছে। মিরিক, নয়তো কালিম্পংয়ে ওই বৈঠক হবে বলে মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে। বিনয় এদিন দাবি করেন, শারদ পাওয়ারের দল ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি তাদের দাবিকে সমর্থন করছে। এনসিপির পক্ষ থেকে থেকে তাঁকে টেলিফোন করা হয়। বিনয় বলেন, আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মোর্চা জড়িত নয়।

এদিন সকালে নিহত তিনজনের মরদেহ নিয়ে মিছিল বের করে আন্দোলনকারীরা। মোর্চার দাবি পুলিশের গুলিতেই ওই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সিংমারি থেকে মৃতদেহ দার্জিলিং চকবাজার হয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মিছিল চলে। মিছিলে গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে ও পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। তবে এদিন মোর্চার মিছিলে পুলিশ কোনও বাধা দেয়নি। বেলা গড়াতে শহর থেকে পুলিশ ফোর্স তুলেও নেয়া হয়। সিআরপিএফও ছিল না। দুপুরের পরে নামানো হয় সেনাবাহিনী।

এর মধ্যেই পাহাড়ে ব্যাপক খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে। এদিন মোর্চা দাবি করেছে, রাই বোর্ডের চেয়ারম্যান গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন। কালিম্পংয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পাসাং তামাং দল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। এদিকে এদিন শিলিগুড়িতে সুকনায় মোর্চা সমর্থকরা টর্চ র‌্যালি করে। পাশাপাশি গোর্খাল্যান্ডের বিরোধিতা করে শিলিগুড়ির মাটিগাড়াতে মিছিল করেন সাধারণ মানুষ। ওই মিছিলে বিমল গুরুং ও রোশন গিরির কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। শিলিগুড়ি শহরে অখণ্ড বাংলা জাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে মিছিল করা হয়। এদিন দার্জিলিংয়ে পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে এবং গোর্খাল্যান্ড ও ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের দাবি তুলে কালচিনি, জয়গাঁ ও বীরপাড়া থানা অভিযানের ডাক দেয় মোর্চা। তবে ওই অভিযানে তেমন সাড়া মেলেনি।

নয়াদিল্লি থেকে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, রোববার রাজধানীতে মিছিল করে গোর্খল্যান্ড সমর্থকরা। তাদের দাবি, অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হবে। গোর্খা সংযুক্ত সংঘর্ষ সমিতির ব্যানারে বিভিন্ন বয়সিরা রাজঘাট থেকে যন্তর মন্তর পর্যন্ত মিছিল করেন।

 

Please follow and like us:

Check Also

জাহাজে আটক ভারতীয়দের সঙ্গে কূটনীতিকদের দেখা করার অনুমতি দেবে ইরান

 এএনআই : ইরান ও ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। দুই দেশের সাম্প্রতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।