তিস্তার সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত, ডুবছে বাংলাদেশ

তিস্তার সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত, ডুবছে বাংলাদেশ
তিস্তার সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত, ডুবছে বাংলাদেশর্ঢাকা: প্রবল বর্ষণে ভারতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গজলডোবা বাঁধের সব কটি গেট খুলে দিয়েছে ভারত। এতে ভারত থেকে ধেয়ে আসছে বানের পানি। হঠাৎ করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। নীলফামারীসহ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  সোমবার সকালে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সব (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

জানা যায়, শনিবার থেকে টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ভারতের উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পরদিন রোববার তিস্তার উজানে ভারতীয় অংশে হলুদ সতর্ক সংকেত জারি করে দেশটির সেচ দফতর।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র-বরাক নদীর উপত্যকায় প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর এই পানি ভাটিতে নেমে আসার পর বাংলাদেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে প্রবল বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়।

পাউবো সূত্র জানায়, ভারত ১৯৯৮ সালে তিস্তা ব্যারাজের ৬০ কিলোমিটার উজানে গজলডোবা বাঁধটি নির্মাণ করে। উজানে বন্যা হলে এ বাঁধের ৫৪টি গেটের সব কটি খুলে দেয় ভারত। এতে বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বন্যা দেখা দেয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে গজলডোবার উজানে তিস্তা-মহানন্দা খালের মাধ্যমে ২ হাজার ৯১৮ কিলোমিটার বাঁধে পানি প্রবেশ করে। তা দিয়ে ভারতের উত্তরাঞ্চলের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, কুচবিহার ও মালদাহ জেলার ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়।

জানা যায়, বর্ষার সময় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হলে গজলডোবার ৫৪টি জলকপাট খুলে দেয় ভারত। এতে নীলফামারী ও লালমনিরহাটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ২০১৬ সালের তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ১ হাজার ৮৬৩টি পরিবার তিস্তার বাঁধ ও বাঁধ সংলগ্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল।

এদিকে তিস্তার পানিতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুণ্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ২৫টি চর ও গ্রামের ১৫ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ উপজেলার নদী বেষ্টিত চর ও গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। উজান থেকে এভাবে ঢলের পানি ধেয়ে এলে পুরো উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন বলেন, বন্যার চরখড়িবাড়ী, উত্তর খড়িবাড়ী মৌজার ৪ শতাধিক পরিবারের বসতভিটায় পানি প্রবেশ করে। ঝুনাগাছ চাঁপানি ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ফরেস্টের চরের অধিকাংশ বাড়িতে হাঁটুপানি। খালিশা চাঁপানি ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার বলেন, পূর্ব বাইপুকুর ও ছোটখাতায় বসবাসকারীদের ঘর দিয়ে বন্যার পানি বয়ে যাচ্ছে।

বিবিসি বাংলা জানায়, বন্যায় ভারতের আসামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভারতের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আসামের সংবাদমাধ্যম বলছে, এ পর্যন্ত বন্যায় ৩০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। গত চার দিনে ভারি বর্ষণের ফলে আসামের ১৫টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই জেলাগুলোর ১১০০ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় আশ্রয় শিবিরে জায়গা নিয়েছেন প্রায় ১৮০০০ মানুষ। বন্যার পানিতে মহাসড়কের একাংশ ডুবে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিঘিœত হচ্ছে। আসামের বিভিন্ন জায়গায় পানির তোড়ে বাঁধ ভেসে গিয়েছে, সড়ক এবং সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।