সীতাকুণ্ডে ৯ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ টিকাদান কর্মসূচি

6675b190f80fc0838ac3a2d82da53e3d-59661dbdd715bসীতাকুণ্ডের ত্রিপুরা পাড়া এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি না থাকার কারণেই হামে আক্রান্ত হয়ে ৯টি শিশুর মৃত্যুর হয়েছে বলে মনে করে খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতর। এখানে সর্বশেষ ২০১৪ সালে টিকাদান কর্মসূচি পালিত হলেও ত্রিপুরা পাড়ায় এই কর্মসূচির বাইরে থাকায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সরকারের চরম ব্যর্থতার ফল।

সারাদেশে প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডভিত্তিক মাইক্রোপ্লান অনুযায়ী, টিকাদান কর্মসূচি পালিত হয় বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন,‘দুঃখের বিষয় সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মাইক্রোপ্লানে ত্রিপুরা পাড়ার উল্লেখ নেই। সেখানে কোনও টিকাদান ক্যাম্পও ছিল না। সেখানে টিকাদান কার্যক্রমও ছিল না।  এ কারণেই হামে আক্রান্ত হওয়ার পর ওই ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।’

দেশের ভেতরে একটি এলাকায় টিকাদান কার্যক্রম না থাকায় শিশুমৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর দায় স্বীকার করছে কিনা, জানতে চাইলে অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই এলাকার বাসিন্দারা অন্য কারও সঙ্গে মেলামেশা করে না। তাদের নেতার পরামর্শ,উপদেশ ও আদেশ-নিষেধেই চলাফেরা করে। আধুনিক চিকিৎসাসেবা নিতেও আগ্রহী নয় তারা। তাই ওই এলাকার ৮৫টি বাড়ির ৩৮৮ জন কোনোদিনও জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আসেনি। ’

কেন টিকাদান কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, ‘এ জন্য একটি তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সেটি এখনও পড়ে দেখার সুযোগ হয়নি। সাতদিনের মধ্যে সে প্রতিবেদনের বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।’ এদিকে  মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) কর্তব্যে অবহেলার কারণে ছয়জন স্বাস্থ্য মাঠকর্মীকে বদলি করা হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।

এদিকে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ  জানান, ‘২০১৫ সালের জরিপ অনুযায়ী, শতকরা ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু টিকাদান কর্মসূচির আওতাধীন থাকলেও বাকি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ কারণে দেশের সব ওয়ার্ডের টিকাদান মাইক্রোপ্লান পর্যালোচনা করা হবে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক পরামর্শক অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনোভাবেই একটি দেশের কোনও অঞ্চল জাতীয় কোনও কার্যক্রমের বাইরে থাকতে পারে না। সেটা দেশের উপকূলীয় এলাকা কিংবা পাহাড়ের ওপর হলেও। কারণ, সারাদেশের শিশুদের টিকাদানের আওতা নিয়ে একটি ম্যাপিং থাকতে হয়। এই ম্যাপিং যদি থাকে, তাহলে সেই ম্যাপিংয়ের দায়িত্ব কার, তাও খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জনের দায়িত্বে যদি সঠিক ম্যাপিং থাকে, তাহলে তার মনিটরিংয়ে সব কিছুই থাকার কথা। কোনও এলাকায় তো বাদ যাওয়ার কথা নয়। এটি অবশ্যই সরকারের ব্যর্থতা।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যাটারর্নাল, নিউনেটাল, চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলোসেন্স হেলথ প্রকল্পের পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সারাদেশে ১০টি রোগে ১১টি টিকা দেওয়া হয়। এরপরও যদি এভাবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছি। সব সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য অ্যান্ড পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। গতকাল চিঠি দিয়ে বলেছি, নতুন করে মাইক্রোপ্লান দিতে, যেন দেশের কোথাও  একটি শিশুও টিকাদান কর্মসূচির বাইরে না থাকে।’

Check Also

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে: স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।