শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের গুলি দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া: রিজভী

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অত্যন্ত ন্যায্য ও যুক্তিসংগত বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পুলিশের গুলি, লাঠিপেটা ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনায় উল্টো পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগ থানায় দায়ের করা এ মামলায় ১২০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাপ্রদান ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি নজিরবিহীন এবং দেশকে অন্ধকারের গুহায় ঠেলে দেওয়ার দৃষ্টান্ত।

শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রিজভী এ কথা বলেন।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে ঢাবির অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নেন। এ সময় সাত দফা দাবিতে জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হন।

পুলিশের রাবার বুলেটে সিদ্দিকুরের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁর সহপাঠীরা। তবে শাহবাগ থানার পুলিশ তা অস্বীকার করেছে। সিদ্দিকুর বর্তমানে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সিদ্দিকুর রহমানের অবস্থা এবং সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি ঘোষণার দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পুলিশের গুলি, লাঠিপেটা ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনায় উল্টো পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগ থানায় দায়ের করা এ মামলায় ১২০০ শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাপ্রদান ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি নজিরবিহীন এবং দেশকে অন্ধকারের গুহায় ঠেলে দেওয়ার দৃষ্টান্ত।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সেদিন পুলিশের হামলা, গুলি, লাঠিপেটা ও রাবার বুলেটে আহত হয়েছে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী। আটক করা হয়েছে ১৩ জন কলেজ শিক্ষার্থীকে। এখনো পুলিশের গুলিতে তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখের মণি গলে গেছে। এখন তিনি দুই চোখে কিছুই দেখেন না বলে তাঁর পরিবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। তিনি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বড় ভাই গণমাধ্যমকে বলেছেন, গুলির আঘাতে সিদ্দিকুরের দুই চোখের মণি গলে যাওয়াসহ চোখের আশপাশের অংশ ফুলে গেছে। বর্তমানে তিনি চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। তাঁর ভাই আরো জানান, ‘ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর বহু কষ্টে দিনমজুরি করে ওর লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি। পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি পেয়ে পরিবারের হাল ধরার কথা ছিল তার। কিন্তু পুলিশ ওর চোখ অন্ধ করে দিয়েছে, তার স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে। বলছিলেন রিজভী।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এ কেমন ভয়াবহ দুঃশাসনের মধ্যে বসবাস করছি! দেশটাকে বর্তমান সরকার কোথায় নিয়ে যাচ্ছে! সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে সামান্য বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ তাদের ওপর হামলা করল, গুলি করল, বুলেট নিক্ষেপ করল, লাঠিচার্জ করল- রক্তাক্ত হলো শিক্ষার্থীরা। গণমাধ্যমে এসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে। অথচ মামলা করল সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। অথচ যারা আক্রান্ত হলো, রক্তাক্ত হলো, আটক হলো পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা সরকারের হুকুম ছাড়া এ মামলা করেনি পুলিশ। আসলে বিনাভোটের সরকার বর্তমানে এতটা আতঙ্কিত, সামান্য মিছিল বা বিক্ষোভ দেখলেই ভয় পায়, আঁতকে ওঠে। অত্যন্ত ন্যায্য ও যুক্তিসংগত দাবিতে তারা আন্দোলন করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। এখন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের অস্ত্রবাজি ও দখলবাজিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। পত্রিকার পাতা খুললে বা টেলিভিশন খুললেই দেখি তাদের অস্ত্রবাজি আর খুনোখুনির দৃশ্য কিংবা ছাত্রীদের লাঞ্ছিত হওয়ার খবর। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একই অবস্থা। আজকের পত্রিকাতেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে-বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুটি পাবলিক বিশ্বদ্যিালয়ে তাদের ছেলেদের সংঘর্ষ ও মারামারির খবর। দু-তিনদিন আগে সিলেটের বিয়ানীবাজার কলেজে তাদের নিজেদের মধ্যে খুনাখুনিতে একজন নিহত হয়েছে।’

‘আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে তাদের সব ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি এবং আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করছি। আর সিদ্দিকুর রহমানসহ গুরুতর আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি,’ বলেন রিজভী।

এদিকে তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুরের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার আশা খুবই কম বলে জানিয়েছেন অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক। শনিবার সিদ্দিকুরের অস্ত্রোপচার শেষে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (গ্লুকোমা) ইফতেখার মো. মুনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সকালে সিদ্দিকুরের একটি অপারেশন করা হয়েছে। এ সময় তার ডান চোখের ভেতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কর্নিয়া, জেলসহ অনেক কিছু বের করা হয়েছে। আর বাম চোখের ভেতরে রক্তসহ অনেক কিছু জমা রয়েছে। সেগুলোকেও ওয়াশ করা হয়েছে। তবে তার দুই চোখের ব্যাপারে আমরা সন্দিহান।’

Please follow and like us:

Check Also

এদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি: কাদের

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এদেশের সাম্প্রদায়িকতার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।