সিলেটে অর্থমন্ত্রী ষোড়শ সংশোধনী যতবার বাতিল হবে সংসদে ততবারই পাস করা হবে

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আদালত যতবার বাতিল করবে সংসদে ততবারই নতুন করে এই সংশোধনী পাস হবে।

finance-min_54206_1501841019
বিচারপতিদের চাকরি সংসদই দেয়, সুতরাং তাদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই থাকা উচিত।

শুক্রবার দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিদর্শন  শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

দুই দিনের সফরে শুক্রবার সিলেটে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। জুমার নামাজের পর একটি উন্নয়ন প্রকল্পের স্থান পরিদর্শনে যান তিনি।

এসময় সাংবাদিকরা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা আমরা আবারো এসেমব্লিতে পাশ করবো। এই কনস্টিটিউশনাল এমেন্ডমেন্ড আবারো পাশ করবো এবং অনবরত করতেই থাকবো, দেখি জুডিশিয়ারি কতদূর যায়। বিকজ জুডিশিয়ারি পজিশন আমার মতে আনটেরিবল।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের প্রতিনিধির উপর তারা খোদগারি করবে তাদের আমরা চাকরি দেই।’

প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির স্বাক্ষরের পর গত মঙ্গলবার বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পুর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। এই রায় ঘোষণার পর এই প্রথম সরকারের কোনো মন্ত্রীর কাছ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল।

এর আগে ১ জুন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষ হয়। পরে যেকোনো দিন এ রায় ঘোষণা করার জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়। শুনানি শুরু হওয়ার ১১তম দিনের শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

গত ৩০ মে দশম দিনের আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত প্রদান শেষ হয়। মোট ১০ জন অ্যামিকাস কিউরি আদালতে মতামত দিয়েছেন। যার মধ্যে নয়জনই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মতামত দেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য আদালত ১২ সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ১২ জনের মধ্যে ১০ জন আদালতে তাঁদের মতামত উপস্থাপন করেন। অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত হলেও ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মতামত দেননি।

বক্তব্য প্রদান করা ১০ জনের মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনী রাখার পক্ষে মত দেন। বাকিরা এই সংশোধনী বাতিলের পক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন। সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেয়া নয় আইনজীবী হলেন— ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এম আই ফারুকি এবং এ জে মোহাম্মদ আলী।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।

সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করবে, এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন। গত বছরের ১০ মার্চ মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৫ মে রায় দেয় আদালত।

Please follow and like us:

Check Also

জাহাজে আটক ভারতীয়দের সঙ্গে কূটনীতিকদের দেখা করার অনুমতি দেবে ইরান

 এএনআই : ইরান ও ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। দুই দেশের সাম্প্রতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।