মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বিদ্রোহী মুসলিমদের ধরিয়ে দিতে রোহিঙ্গাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বিদ্রোহী মুসলিমদের ধরিয়ে দিতে রোহিঙ্গাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার। এক সপ্তাহে সেনা ও পুলিশ চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই রাজ্যে সেনা অভিযানের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি এই আহ্বানের কথা দেশটির সংবাদপত্র নিউ লাইট অব মিয়ানমারে এসেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট ৩০টি সেনা ও পুলিশ চৌকিতে একযোগে হামলার পর রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান শুরু হয়। ওই হামলার জন্য রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী দল ‘মিয়ানমার আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’কে দায়ী করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে বলে রোহিঙ্গাদের দাবি। হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে, সেখানেও তাদের উপর গুলি ছুড়তে দেখা গেছে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীদের।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই বিদ্রোহীদের ধরিয়ে দিতে রোহিঙ্গাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মংডু শহরে মাইকিং হয় বলে নিউ লাইট অব মিয়ানমার জানায়।
এতে বলা হয়, “মাইকিং করে এআরএসএ সন্ত্রাসীদের খুঁজে দিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য মংডুর মুসলিম বাসিন্দাদের বলা হয়। সেই সঙ্গে বলা হয়, গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঢুকলে কেউ যেন উসকানিমূলক কিছু না করেন এবং অস্ত্র না দেখান।”
সম্প্রতি রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে মুঙ্গনিতে গ্রামবাসী দুজন এআরএসএ সদস্যকে ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে বলেও সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনে বলা হয়।
স্বাধীন আরাকানের দাবি তোলা এআরএসএকে মিয়ানমার সরকারের কাছে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে চিহ্নিত।
সীমান্তে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি দমনে যৌথ অভিযান চালাতে ইতোমধ্যে ঢাকার পক্ষ থেকেও মিয়ানমারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আরাকানে সহিংসতার জন্য সমালোচনার মুখে থাকা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ফেইসবুক পাতায় এক পোস্টে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা বৌদ্ধদের বিভিন্ন স্থাপনা, বিদ্যালয় ও বাড়ি-ঘরে আগুন দিচ্ছে।
বিভিন্ন গ্রামে মোট ২০০ ঘর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে দাবি সেনাবাহিনীর।
তবে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের উপর গুলি চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। গুলি ও আগুনের ক্ষত নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কয়েকজন হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন।
বিদ্রোহী হামলাকে কারণ দেখিয়ে গোটা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে আসছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।
বিদ্রোহীদের হামলার মুখে ১১ হাজার ৭০০ রাখাইনকে ওই রাজ্য থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে সীমান্তে জড়ো হয়ে আছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে অর্ধ লক্ষাধিক এক সপ্তাহে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলেও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হিসাব।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম; এই রাজ্যে রাখাইনসহ বৌদ্ধ নাগরিক ৫২ শতাংশ।
রোহিঙ্গাদের নাগরিক মানতে নারাজ মিয়ানমার সরকার এই জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।