তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা, অব্যবস্থপনায় প্রশাসনিক কাঠামো একেবারেই ভেংগে পড়েছে । ডাক্তার না থাকায় চরম দূর্ভোগে রোগীরা । ১জন ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা

আকবর হোসেন,তালা: তালা উপজেলায় ৫০শষ্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অব্যবস্থপনার কারনে সাংগঠনিক প্রশাসনিক কাঠামো একেবারেই ভেংগে পড়েছে । ডাক্তার না থাকায় চরম দূর্ভোগে রোগীরা । ৩৪ জনের ডাক্তারের মধ্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে মাত্র ১জন ডাক্তার । ৬জন ডাক্তার নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন অযুহাতে প্রায় সময় ১জন ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা সেবা দিয়ে দেয়া হচ্ছে । এই জন্য চরমভাবে চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা ।
১১ সেপ্টেম্বর সরজমিনে গিয়ে দিখা যায়,ডাক্তার রিপন রুগি দেখছেন । তিনি ১৯৬ জন রুগি দেখছেন একাই । এতগুলো রুগি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার রিপন বলেন,ভাই কি করব ? প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি । কেননা প্রতিটি রুগি যদি ডাক্তার ২ মিনিট করে রুগি দেখেন তবে সময় লাগবে ৬ ঘন্টা ৫৩ মিনিট । সেক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া ছাড়া ডাক্তার সাহেবের আর কিছুই করার থাকে না । তালা উপজেলায় ৩লক্ষ ২৯হাজার ৩শত ২৫ জন মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরী করা হয়েছে । যেখানে ৩৪ জন ডাক্তার সর্বক্ষনিকভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা । কিন্ত দূর্ভাগ্যজনক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ডাক্তার সংখ্যা অত্যান্ত নগণ্য মাত্র ৬জন । ডাক্তার রিপন ব্যতিত অন্য ডাক্তার কোথায় আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের হেডক্লার্ক হাফিজুর রহমান বলেন,ডাক্তার রাজীব আছেন উপজেলা মাসিক আইন শৃংখলা মিটিংএ । ডাক্তার বর্ণা দাশ কোথায় আছেন এমন প্রশ্œের জবাবে তিনি বলেন উনারতো থাকার কথা । তবে আজকে তিনি আসেননি । কেন আসেননি তার কোন উত্তর নেই । ডাক্তার শাহেরুল গত কালকে নাইট ডিডটি করেছিলেন বলে দিনের বেলায় আসেনেনি । বাকী তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার কুদরতি-খোদা সাতক্ষীরা মিটিং এ গেছেন। এক জন ১ ডাক্তার মাতৃকালীন ছুটিতে আছেন । তবে যে কয়জন ডাক্তার সর্বক্ষনিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন তার ভিতর ডাক্তার রাজীব সরদার এবং রিপন অন্যতম । প্রায় ১মাস যাবৎ ডাক্তার রাজীব সরদার একাই চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে নিজেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন । তার পরও কোন ডাক্তার তার জায়গায় দেওয়া হয়নি । এছাড়াও হাসপাতালের প্রশাসনিক কাঠামো একে বারেই ভেংগে পড়েছে । প্রতিদিন সকাল ৮.০০ ঘটিকা হতে দুপুর ২.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত হাসপাতালের ডাক্তার/ষ্টাফদের আসার কথা থাকলেও অভিযোগ আছে অনেকেই সকাল ৯.৩০ ঘটিকার পূর্বে কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন না। আরও অভিযোগ আছে দুপুর ১.০০ টা বাজার পূর্বেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রায় সবাই চলে যান । তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কেই নেই । এর ভিতর অনেক ডাক্তার আবার সপ্তাহে ২/৩ দিন চিকিংসা সেবা দিয়ে থাকেন । মনে হয় এখানে কেউ চাকুরী করেননা এটা তাদের বিনাশ্রম সেবা । অন্য দিকে ডাক্তার ও মেডি:এ্যাসিষ্টান পর্যাপ্ত পরিমান না থাকায় হাড় ভাংগা রোগীদের প্লাষ্টার ও ব্যান্ডেস হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরীদের দ্বারা করা হয় । হাসপাতালের সবাইকে তার পরিচয় পত্র বহন ও গলায় ঝুলানোর কথা থাকলেও অনেকের সেটা থাকেনা, বিধায় তাদের দেখে বোঝা যায়না তারা ডাক্তার, মেডি:এ্যাসিষ্টান নাকি নিরাপত্তা প্রহরী ।এছাড়া আউটডোর রোগীদের জন্য ২টি টয়লেট কয়েক বৎসর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে । অনেক রোগী ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে অথবা মুমূর্ষ্য অবস্থায় টয়লেট না থাকার কারনে অনেক সময় কাপড় চোপড় নষ্ট হয়ে যায় । তাহা ছাড়া রুগিদের বসার স্থানের একটি ফ্যান আছে, যেটা অনেক দিন যাবৎ নষ্ট হয়ে আছে । এদিকে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি এ্যাম্বুলেন্স এর ভাড়া নিয়ে রয়েছে অভিযোগ আছে যাহা প্রতি কিলোমিটারে ১০টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও কিলোমিটার প্রতি বেশী ভাড়া নেয়া হচ্ছে । আরও অভিযোগ আছে, যে সমস্ত ডাক্তার বদলী হয়ে অন্যত্রে চলে যায় সে সমস্ত ডাক্তার সরকারী বাসা দখল করে আছে নিয়মিত রুগি দেখেন । তাহা ছাড়া রুগি আসলেই বিভিন্ন রকম টেষ্ট দিয়ে থাকেন এবং তাহা নিদ্ধারিত ক্লিনিকে বা ডায়াগনষ্টিক সেন্ট্রারে কমিশন ভিত্তিতে করানো হয় । এ ছাড়া ডাক্তার সাহেবরা রুগি দেখার সময় তাদের পাশে প্রায় সর্বক্ষনিকভাবে ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্ট্রারের এবং ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা দাড়িয়ে থাকেন । তালা হাসপাতালে নোংরা আবর্জনায় ভরে থাকে সর্বক্ষন। তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা(অবঃ) ডাক্তার প্রতাপ ক্যশপি হাসপাতালে থাকা অবস্থায় একটি ফুলের বাগান তৈরী করেছিলেন সেটা অব্যবস্থপনার কারনে এবং পরিস্কার না করার কারনে নষ্ট হতে বসেছে । যে সমস্ত ডাক্তার ডেপুটেশনে আছে এবং বিভিন্ন অজুহাতে হাসপাতালে নিয়মিত আসেননা তাদের নিকট হতে কমিশন নেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে ।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, প্রায় সাড়ে ৩লক্ষ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য যে ডাক্তার আছে সেটা অত্যান্ত নগন্য । তাহা ছাড়া অল্প ডাক্তারের ভিতর হতে ট্রেনিং বা বিভিন্ন মিটিং না পাঠানোর জন্য এবং দ্রুত তালা হাসপাতালে কয়েকজন ডাক্তার প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন ।

মো: আকবর হোসেন
মোবাইল নং ০১৭১৯৪৩২১০৪
তারিখ : ১১-৯-১৭

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরায় ভিডিও কলে কথা বলা অবস্থায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা

সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ইরানী আফরোজ তানু (২৭) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।