মিয়ানমারের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করুন: এইচআরডব্লিউ

ডেস্ক: রাখাইন রাজ্যে মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার সুবিধা দিতে মিয়ানমার সরকারের ওপর জাতিসংঘ, বহুজাতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশকে চাপ তীব্র থেকে তীব্র করার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তা বৃদ্ধি করার জন্যও জাতিসংঘসহ দাতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

সেই সাথে এ ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এইচআরডব্লিউ বলছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের দাবি জানাতে হবে। রোহিঙ্গাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর অনুমতি দিতে বলতে হবে মিয়ানমারকে। যদি তারা তা অনুমোদন না করে তাহলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধ দিতে হবে।

নিউইয়র্ক থেকে সোমবার ইস্যু করা এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

এতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘ, আসিয়ান, ওআইসিসহ প্রভাবশালী সংগঠন বা দেশের উচিত মিয়ানমারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা। নিশ্চিত করতে হবে যাতে সম্প্রতি পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গার জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত করা।

ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ২৫ আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মির সদস্যরা সেনা ও পুলিশ চেকপোস্ট বা অবস্থানস্থলে হামলা চালায়। এর ফলে সেনাবাহিনী নৃশংস অভিযান শুরু করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর। এতে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পারলেও হাজার হাজার রোহিঙ্গা এখনও মিয়ানমারের ভেতরে, রাখাইনে বাস্তুচ্যুত হয়ে আছেন। রাখাইনে মূল জাতিগত রাখাইন ও অমুসলিম মিলিয়ে আরো প্রায় ১২ হাজার মানুষ রয়েছে এর মধ্যে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উপপরিচালক ফিলিপ বোলোপিয়ন বলেছেন, রাখাইনে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী যে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে, সরকার সেখানে মানবিক সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলোকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে তাকে বহুগুলে বাড়িয়ে দিয়েছে।

তার ভাষায়, এ অবস্থায় আমরা জাতিসংঘ, আসিয়ান ও অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-এর কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাই- মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তা দ্রুততর করুন এবং বৃদ্ধি করুন।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গ্রামবাসীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। গুলি করেছে। বহু মানুষের শরীরে বিদ্ধ হয়ে আছে গোলা। তারা বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। মুসরিম জাতি নির্মূলের অংশ হিসেবে তারা নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। গোলা নিক্ষেপ করছে। গ্রামে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। রাখাইন রাজ্যে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা সহায়তা দিয়ে থাকে, তারাও এমন পরিস্থিতিতে তাদের অনেকের কর্মকাণ্ড সাময়িক বন্ধ রেখেছে। এর ফলে ওই রাজ্যে অবস্থানকারী প্রায় আড়াই লাখ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা খাদ্য, চিকিৎসা সেবা ও অন্যান্য গুরুতর মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শরণার্থীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, মংডু শহরের বহু মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু এখনও হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা আত্মগোপন করে আছেন রাথেডাং ও বুথিডাং এলাকায়।

এইচআরডব্লিউ আরো বলেছে, দশকের পর দশক রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিদেশি বলে বর্ণনা করে আসছে। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস মিয়ানমারে। বিশাল এ দেশটিতে তারা তুলনামুলকভাবে সংখ্যায় অনেক কম।

১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে তাদেরকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এ কারণে তারা দীর্ঘ সময় পর্যায়ক্রমে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গারা বিশ্বে রাষ্ট্রহীন সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠীর অন্যতম। তাদের নাগরিকত্ব না থাকায় মিয়ানমারের পুলিশ, সীমান্তরক্ষী, স্থানীয় কর্মকর্তাদের হাতে তারা পর্যায়ক্রমে নির্যাতনের শিকার হয়। কারণ, তাদের মানবাধিকার নেই। তাদের অধিকার রয়েছে সীমিত।

নিজেদের গ্রামের বাইরে যাওয়ার স্বাধীনা তাদেরকে দেয়নি সরকারের আইন, নীতি ও চর্চিত নিয়ম। জীবিকার সন্ধানের ক্ষেত্রে তাদের বিধিনিষেধ আছে। তাদের বিয়ে ও সন্তান নেয়ার ব্যক্তিগত অধিকারেও হস্তক্ষেপ করে সরকার। তাদেরকে মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে।

এমনকি সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরুর আগে মংডুতে খাদ্য নিরাপত্তার সূচক ও শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার হার ইর্মাজেন্সি লেভেল ক্রস করে। এ তথ্য মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা বিষয়ক জাতিসংঘের সমন্বয় অফিসের।

এইচআরডব্লিউ’র মতে, যেহেতু সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর নির্মমতা চালাচ্ছে, এতে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা সমস্যায় থাকা রোহিঙ্গাদের সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। তাদের খুব বেশি প্রয়োজন খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা। এর আগে এসব বিতরণ করেছে জাতিসংঘের এজেন্সিগুলো ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠনগুলো।

সরকার অভিযোগ করছে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সমর্থন দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সাহায্য বিষয়ক সংগঠন। এ নিয়ে ওই সব এজেন্সির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সরকারের।

মিয়ানমার সরকার বলছে, জুলাই মাসে উগ্রপন্থিদের ক্যাম্পে উচ্চ শক্তিযুক্ত বিস্কুট পাওয়া গেছে। এই বিস্কুট বিতরণ করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসুচি। আন্তর্জাতিক সহায়তাকারী বেশ কিছু গ্রুপের স্থানীয় গুদাম সেপ্টেম্বরে লুট হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠনগুলোতে কর্মরত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।

এমনটা দাবি করা হয়েছে ইউরোপিয়ান কমিশনের ইউরোপিয়ান সিভিল প্রটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইড অপারেশনস-এর ডিরেক্টর জেনারেল।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।