গরু ব্যবসায়ীদের ৭০ লাখ টাকা লুট করল পুলিশ!

নরসিংদীর রায়পুরা থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মেঘনা নদীতে গরু ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে প্রায় ৭০ লাখ টাকা লুট করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা ফেরত চাওয়ায় গরু বেপারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রায় ৯ লাখ টাকা ও ২৫টি গরু জব্দের কথা স্বীকার করেছেন রায়পুরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দোলোয়ার হোসেন।

স্থানী সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষ্যা ইউনিয়নের হরিপুর, দরিপুর, শুটকিকান্দা ও গোপিনাথপুর গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক লোক গরু বেচা-কেনার ব্যবসা করেন। গত মঙ্গলবার সকালে ওই চার গ্রামের প্রায় ৬০-৬৫ জন ব্যবসায়ী গরু নিয়ে নৌকা যোগে পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বাইশ মৌজা সাপ্তাহিক গরুর হাটে যান। বেচাকেনা শেষে বিকেল ৫টার দিকে অবিক্রিত ২৫টি গরু ও গরু বিক্রির নগদ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলে। ব্যবসায়ীদের দুইটি নৌকা মেঘনা নদীর মাঝখানে পৌঁছালে রায়পুরা থানার এসআই শাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের ২০ জনের একটি দল তিনটি স্পিড বোট নিয়ে তাদের গরিরোধ করে।

পরে অস্ত্রের মুখে ব্যবায়ীদের জিম্মি করে ফেলে তল্লাশি চালিয়ে গরু বিক্রির প্রায় ৭০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় পুলিশ। পরে দুই নৌকার সবাইকে থানায় নিয়ে যায়। এর মধ্যে ৪৯ জনকে নাশকতা ও বিস্ফোরণ মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতের মধ্যেমে কারাগারে পাঠায়।

৭০ লাখ টাকার মধ্যে আবেদ আলী বেপারীরর ১০টি গরু বিক্রির ৫ লাখ টাকা, বাবুল বেপারীর ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ইসলাম উদ্দিনের ৭০ হাজার টাকা, কালু মিয়ার ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ফেলু মিয়ার ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, করিম মিয়ার ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, জলিল মিয়ার ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, কাশেস মিয়ার ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, খলিল মিয়ার ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, কাশেম মিয়ার ২ লাখ টাকা এবং শাজাহান মিয়ার ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। বাকিরা জেলে থাকায় পরিবারের লোকজন সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি।

তবে পুলিশের দাবী, ৮০/৯০ জন লোক ককটেল বিস্ফোরণ করে দাঙ্গা-হাঙ্গামার চেষ্টা চালাচ্ছে- এমন সংবাদের ভিত্তেতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের আটক করে। ওই সময় তাদের কাছে থেকে ২১টি রডের টুকরা, ৩২টি ককটেল ও ৪৪টি টেঁটা জব্দ করা হয়।

গরু ব্যবাসায়ী মো. জাকারুল বলেন, আমাদের দুইটি নৌকায় প্রায় ৭০ লাখ টাকা ছিল। যা পুলিশ বেশী ডাকাতরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।

গরু ব্যাবসায়ী ইউসুফ বলেন, শাখওয়াত দারোগা তিনটি স্পিড বোট নিয়ে আমাদের ব্যারিকেড দেন। নৌকায় এসেই পিস্তল উঁচিয়ে আমাদের কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। তারা টাকাগুলো তিনটি গামছা দিয়ে বেঁধে একটি স্পিড বোটে নিয়ে চলে যায়।

নৌকার মাঝি নিজাম ও বশির বলেন, পুলিশের ভয়ে তিন বেপারীর প্রায় ৪ লাখ টাকা একটি ছেঁড়া কাথা দিয়ে নৌকার নিচে লুকিয়ে রাখি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

কালু বেপারীরর স্ত্রী অরিফা বলেন, ঋণ নিয়া আমার স্বামী ব্যবসা করেন। পুলিশ আমার স্বামী ও ছেলের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে গেছে। আবার তাদের জেলে দিছে। এখন ঋণের টাকা কেমনে শোধ করমু?

অপর গরু ব্যাবসায়ী ভূট্রো মিয়া বলেন, পুলিশ যা করছে তাতে পুলিশ আর ডাকাতের মধ্যে পার্থক্য রইল না।

থানা পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া ব্যবসায়ী ইসলাম উদ্দিন বলেন, থানায় নেয়ার পর পুলিশ সদস্যরা টাকা ফেরত চাইলে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হবে বলে ভয় দেখায়। পরে বাধ্য হয়ে গরু বিক্রির ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছি।

এদিকে এক সঙ্গে এত ব্যাবসায়ীকে আটক করে নেয়ার পর তাদের স্বজনরা থানায় ভিড় জমায়। পরে আটক কিশোর ও বয়বৃদ্ধসহ ১১ জনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রায়পুরা থানা পুলিশের এসআই মো. শাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় তার ব্যবহৃত মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে রায়পুরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দোলোয়ার হোসেন বলেন, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামার চেষ্টা চলছে- এমন সংবাদের ভিত্তেতে ৪৯ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এদের মধ্যে আটজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, ৭/৮ জন ডিবি এসোল্টভুক্ত, ১৬ জন টেঁটাযুদ্ধা।

৭০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, তাদের কাছে ৯ লাখ ৬ হাজার ১৫০ টাকা পাওয়া গেছে। যা জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে। তবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করতে গেলে কেউ এত টাকা নিয়ে যায় কিনা জানতে চাইলে ওসি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

 

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।