সাতক্ষীরায় পুলিশ হেফাজাতে মাদ্রাসা সুপার নিহতের ঘটনায় তোলপাড় মামলা না থাকলেও জামিনের কপি প্রত্যেকের কাছে রাখতে হবে! জানাযায় হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জেলা ব্যাপি তোলপাড় শুরু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য গণমাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার,চাঁদা দাবী সহ ব্যাপক মারপিটের কারণে ঐমাদ্রাসা সুপার নিহত হয়েছে বলে শতাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে নড়ে চড়ে বসে পুলিশ। স্থানীয় সংবাদ পত্র গুলো ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়। রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যনে একটি বিবৃত্তি পাঠানো হয়। এতে দাবী করা হয় সাতক্ষীরা কারাগারে ৪৪৯০/১৭ নং হাজতী মোঃ সাইদুর রহমানের মৃত্যু হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। এঘটনায় ৮৪/১৭ নং এ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে সদর থানা পুলিশ। বিবৃত্তিতে আরোও বলা হয় মৃত্য সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৬১/১৭ ও ৮০/১৭ নং দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
প্রকৃত ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নিহতের ভাই মাওলানা শফিকুল ইসলাম বলেন,আমার ভায়ের নামে কোন মামলা ছিল না। তাকে আটকের পর দুটি অজ্ঞাত মামলায় আসামী করে কোটে চালান দেয়। জার জিআর নং ১৮১/১৭ ও ৫৪৮/১৭। এসব মামলায় তার ভাই এজহার ভুক্ত আসামী ছিল না। যদি তার নামে মামলা থাকত তাহলে পুলিশ কেন অজ্ঞাত মামলা তাকে চালনা দিল বলে পুলিশের প্রতি তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তিনি বলেন তার ভাইরে হত্যার ঘটনা আইনী ভাবে লড়া হবে।
সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাওলানা সাইদুর রহমান বৈকারী ইউনিয়ন জামায়াতের যুগ্ম সম্পাদক ও নাশকতা মামলার আসামি। আমার নেতৃত্বে ওইদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে জামিনের কাগজপত্র চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি অসুস্থতা বোধ করলে আমি আমার খরচে তাকে চিকিৎসা করিয়ে জেলহাজতে পাঠাই। তাকে মারধরের কোনও প্রশ্নই আসে না।’
সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি মারুফ আহম্মেদ জানান, সুনিদিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চারটি নাশকতার মামলা রয়েছে। তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। নিয়মানুযায়ি তাকে আদালতের পাঠানো হয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। শুক্রবার সন্ধায় তাকে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠানো হয়। হার্ডএার্টাকে তিনি মারা গেছেন বলে ওসি জানান।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। তদন্তের পর বিস্তারিত বলতে পারবো।’
সাতক্ষীরা কারাগারের ডেপুটি জেল সুপার আবু জাহেদ জানান, রাত ১টার দিকে অসুস্থ বোধ করলে মাওলানা সাইদুর রহমানকে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোররাতে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও)ডা. ফরহাদ জামিল মাদ্রাসা সুপার সাইদুর রহমানকে দুদফায় হাসপাতালে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত সুপার মাওলানা সাইদুর রহমানের নামে কোন মামলা না থাকায় কি ভাবে জামিনের কাগজ ঘরে রাখবে তা নিয়ে পুলিশের বক্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ বলছে মামলা না থাকলেও প্রত্যেকের উচিৎ জামিনের কাগজ পত্র হাতে রাখা।
আসল ঘটনা হলো ,নিহত এ মাদ্রাসা সুপারের কাছ থেকে এসআই আসাদ মামলার ভয় দেখিয়ে দু’দফায় লক্ষাধিক টাকা নিয়েছে। বৃহষ্পতিবার আরো এক লক্ষ টাকা দাবী করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় পুলিশ তাকে ব্যাপক মারপিট করে। পরবর্তিতে মাওলানা সাইদুর রহমানকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তাকে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। পরে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রাথর্মিক চিকিৎসা করার পর শুক্রুবার সন্ধায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
নিহত মাদ্রাসা সুপার মাওলানা সাইদুর রহমান (৪৫) সাতক্ষীরা সদরের কাথনডা গ্রামের মৃত্যু জিল্লার রহমানের ছেলে। স্থানীয় কাথনডা ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি,জামায়াতের রোকনপ্রার্থি ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন তিনি। বিশিষ্ট এ আলেম কলারোয়া হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ছিলেন।
নিহতের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, গত বৃহষ্পতিবার রাত দেড়টার দিকে পুলিশের তিনজন সদস্য তাদের বাড়িতে এসে তার স্বামীকে গ্রেফতারে কথা বলে। কোন কারণে তাকে গ্রেফতার করা হবে জানতে চাইলে পুলিশ জানায় তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। এসময় তার স্ত্রী গ্রেফতারি পরওয়ানা চাইলে পুলিশ র্দুব্যবহার করে। মাওলানা সাইদুর রহমান পুলিশকে জানান,তিনি অসুস্থ রোগী। প্রতিদিন তাকে ওষুধ খেতে হয়। তাকে ধরে নিয়ে গেলে সে বাঁচবে না বলে পুলিশের কাছে কান্নাকাটি করেন। দীর্ঘ এক ঘণ্টা ধরে কান্না কাটির পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে নিয়ে স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে যান । ডাক্তার তাকে উন্নত্ত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কিন্তু চিকিৎসা না দিতে তাকে সাতক্ষীরা সদর থানা হাজতে রাখা হয়। শনিবার সকালে তিনি জানতে পারেন তার স্বামী সাতক্ষীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা মারা গেছে। নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দিনভর পুলিশ হেফাজতে রেখে তার ওপর দফায় দফায় নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার রাতে পুলিশ প্রহরায় নিহত মাওলানা সাইদুর রহমানের জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযা নামাজে ইমামতি করেন নিহতের ভাই মাওলানা শফিকুল ইসলাম। এসময় এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মরহুমের একান্ন জনেরা। —আবু সাইদ বিশ্বাসঃ১৭/৯/১৭

Please follow and like us:

Check Also

আবুল কাশেম কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি,তাই জনগণ তাকে বার বার নির্বাচিত করতেন: সাতক্ষীরায় মিয়া গোলাম পরওয়ার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।