সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের

সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের
সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল আদালা(১) এ মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাই বজলুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ মামলা টি দায়ের করা হয়। মামলায় আসামী করা হয়েছে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের এসআই আসাদুজ্জামান,এসআই পাইক দেলওয়ার,এএসআই হাসান সহ অপর এক পুলিশ সদস্য। আদালত মামলটি আমলে নিয়েছে বলে আসামী পক্ষের উকিল  নিশ্চিত করেছেন। জুডিশিয়াল আদালা(১) এর বিচারক হাবিবুল্লাহ মাহমুদ মামলাটি আমলে নিয়ে বিকাল সাড়ে ৫টার সময় একটি আদেশ দেন। আদেশে বলা হয় মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভিসটিকেশন তদন্ত করবে(পিবিআই)। এতে সাতক্ষীরা আইনজীবি সমিতির সভাপতি আব্দুল মজিদ সহ ডর্জন খানিক সিনিয়র আইনজীবি মামলার তদন্তভার পরিবর্তনের আবেদন করে। বিচারক বিষয়টি নিয়ে চীপজাষ্টিসের পরামর্শ নেন বলে আইনজীবি জানান। সন্ধা ছয়টার পর আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বুধবার পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।23

সূত্র জানানয়ঃ নিহত মাদ্রাসা সুপার মাওলানা সাইদুর রহমান (৪৫) সাতক্ষীরা সদরের কাথনডা গ্রামের মৃত্যু জিল্লার রহমানের ছেলে। স্থানীয় কাথনডা ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন তিনি। বিশিষ্ট এ আলেম কলারোয়া হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ছিলেন। গত শনিবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, গত ১৪ আগষ্ট বৃহষ্পতিবার রাত দেড়টার দিকে পুলিশের তিনজন সদস্য তাদের বাড়িতে এসে তার স্বামীকে গ্রেফতারে কথা বলে। কোন কারণে তাকে গ্রেফতার করা হবে জানতে চাইলে পুলিশ জানায় তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। এসময় তার স্ত্রী গ্রেফতারি পরওয়ানা চাইলে পুলিশ র্দুব্যবহার করে। মাওলানা সাইদুর রহমান পুলিশকে জানান,তিনি অসুস্থ রোগী। প্রতিদিন তাকে ওষুধ খেতে হয়। তাকে ধরে নিয়ে গেলে সে বাঁচবে না বলে পুলিশের কাছে কান্নাকাটি করেন। দীর্ঘ এক ঘণ্টা ধরে কান্না কাটির পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে নিয়ে স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে যান । ডাক্তার তাকে উন্নত্ত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কিন্তু চিকিৎসা না দিতে তাকে সাতক্ষীরা সদর থানা হাজতে রাখা হয়। পরের দিন
শুক্রুবার সদর থানাতে মাওলানা সাইদুর রহমানের সাথে দেখা করতে আসেন তার স্ত্রী ময়না। এসময় স্ত্রীর কাছে তার স্বামী অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে অনেক মারপিট করেছে। তার গায়ের পাঞ্জাবিটা ছিড়ে গেছে। পুলিশের কাথে ওষুধ চাইলে পুলিশ তা দেয়নি। পরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে তাকে নিয়ে ইসিজি সহ কয়েকটি পরীক্ষা করান পুলিশ। পরে শুক্রুবার সন্ধায় তাকে কোটে হাজিরার মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয় বলে নিহতের স্ত্রী জানান।

নিহতের স্ত্রী ময়না জানান,তার স্বামীর বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিলো না। আটকের পর পুলিশ দুটি মামলায় অজ্ঞাত আসামী করে কোটে চালান দেয়। পুলিশের তিন অফিসার এসআই আসাদ, দেলওয়ার ও এএসআই সুমন তার স্বামীকে জোর করে আটক করে নির্যাতন করেছে বলে তিনি অভিযোগ করে।
সূত্র জানায়, এ সময় মওলানা সাইদুরের ভাতিজা মুত্তাসিম বিল্লাহ পাঁচ হাজার টাকা এনে চাচাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু পুলিশ তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। এ টাকা দিতে না পারায় মাদ্রাসা শিক্ষককে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরা থানায়। সেখানেও তার ওপর নির্যাতন করতে থাকে পুলিশ।
নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দিনভর পুলিশ হেফাজতে রেখে তার ওপর দফায় দফায় নির্যাতন করা হলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে আদালতে নেয়া হলে কর্তৃপক্ষ তার অসুস্থতা দেখে সাঈদুর রহমানকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশ তাকে ফের নিয়ে যায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করার পর বিকাল ৫টায় পুলিশ ফের তাকে আদালতে নিয়ে যায়। বিকালে মওলানা সাইদুরকে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠায় আদালত।
সাতক্ষীরা কারাগারের সুপার হাফিজুর রহমান জানান, কারাগারের মধ্যে শুক্রবার রাতে সাঈদুর রহমান আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কারা হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে মধ্যরাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সাতক্ষীরা হাসপাতালের আরএমও ডা. ফরহাদ জামিল বলেন, হাসপাতালে আনার পর তার চিকিৎসা চলছিল। শনিবার ভোরে মারা যান তিনি।ওই চিকিৎসক জানান, নিহত মাদ্রাসা শিক্ষক মওলানা সাঈদুরের দেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমি তাকে গ্রেফতার করলেও নির্যাতন করিনি। তার কাছে ঘুষও চাইনি । আগে থেকেই তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর তার মৃত্যু সম্পর্কে আর কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।
অন্যদিকে সদর থানার ওসি মারুফ আহম্মদ জানায় তিনি হার্ডএ্যাটার্কে মারা গেছে। এসআই ও ওসির বক্তব্য বিপরীত মুখি।
এদিকে মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জেলা ব্যাপি তোলপাড় শুরু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য গণমাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার,চাঁদা দাবী সহ ব্যাপক মারপিটের কারণে ঐমাদ্রাসা সুপার নিহত হয়েছে বলে শতাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে নড়ে চড়ে বসে পুলিশ। স্থানীয় সংবাদ পত্র গুলো ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়। শনিবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যনে একটি বিবৃত্তি পাঠানো হয়। এতে দাবী করা হয় সাতক্ষীরা কারাগারে ৪৪৯০/১৭ নং হাজতী মোঃ সাইদুর রহমানের মৃত্যু হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। এঘটনায় ৮৪/১৭ নং এ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে সদর থানা পুলিশ। বিবৃত্তিতে আরোও বলা হয় মৃত্য সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৬১/১৭ ও ৮০/১৭ নং দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
প্রকৃত ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নিহতের ভাই মাওলানা শফিকুল ইসলাম বলেন,আমার ভায়ের নামে কোন মামলা ছিল না। তাকে আটকের পর দুটি অজ্ঞাত মামলায় আসামী করে কোটে চালান দেয়। জার জিআর নং ১৮১/১৭ ও ৫৪৮/১৭। এসব মামলায় তার ভাই এজহার ভুক্ত আসামী ছিল না। যদি তার নামে মামলা থাকত তাহলে পুলিশ কেন অজ্ঞাত মামলা তাকে চালনা দিল বলে পুলিশের প্রতি তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তিনি বলেন তার ভাইরে হত্যার ঘটনা আইনী ভাবে লড়া হবে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। তদন্তের পর বিস্তারিত বলতে পারবো।’
এদিকে, ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও)ডা. ফরহাদ জামিল মাদ্রাসা সুপার সাইদুর রহমানকে দুদফায় হাসপাতালে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত সুপার মাওলানা সাইদুর রহমানের নামে কোন মামলা না থাকায় কি ভাবে জামিনের কাগজ ঘরে রাখবে তা নিয়ে পুলিশের বক্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ বলছে মামলা না থাকলেও প্রত্যেকের উচিৎ জামিনের কাগজ পত্র হাতে রাখা।
আসল ঘটনা হলো ,নিহত এ মাদ্রাসা সুপারের কাছ থেকে এসআই আসাদ মামলার ভয় দেখিয়ে দু’দফায় লক্ষাধিক টাকা নিয়েছে। বৃহষ্পতিবার আরো এক লক্ষ টাকা দাবী করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় পুলিশ তাকে ব্যাপক মারপিট করে। পরবর্তিতে মাওলানা সাইদুর রহমানকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তাকে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। পরে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রাথর্মিক চিকিৎসা করার পর
এদিকে শনিবার রাতে পুলিশ প্রহরায় নিহত মাওলানা সাইদুর রহমানের জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযা নামাজে ইমামতি করেন নিহতের ভাই মাওলানা শফিকুল ইসলাম। এসময় এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মরহুমের একান্ন জনেরা।
পুলিশি নির্যাতনে মাওলানা সাইদুর রহমানের মৃত্যুতে জামায়াতের তীব্র নিন্দা
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গত সোমবার দলের সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদরাসার সুপার ও কাথনডা ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মাওলানা সাঈদুর রহমান পুলিশের নির্যাতনে নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে এ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।’
ডা: শফিকুর রহমান মাওলানা সাঈদুর রহমানকে বেদম প্রহার করে নিহত করার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে এ ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি মাওলানা সাঈদুর রহমানকে শহীদ হিসেবে কবুল করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সমবেদনা জানিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াত ।-

Please follow and like us:

Check Also

শ্যামনগরে পানি, স্যালাইন ও তরমুজ বিতরণ জামায়াতের

হুসাইন বিন আফতাব, নিজস্ব প্রতিবেদক:তীব্র তাপদাহ থেকে জনসাধারণকে স্বস্তি দিতে সাধারণ মানুষের মাঝে বোতলজাত পানি, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।