বিশেষজ্ঞদের অভিমত মন্ত্রীর আশ্বাস বৈশ্বিক চাপ কমানোর কৌশল মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ধরে রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দফতরের মন্ত্রী খিও টিন্ট সোয়ের আশ্বাসকে বৈশ্বিক চাপ কমানোর কৌশল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, মিয়ানমারের ওপর বিশ্বাস রাখা যায় না। দেশটি অতীতে বহুবার এমন আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কথা রাখেনি। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। কাজেই রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দেন তারা। মিয়ানমারের মন্ত্রী নতুন আসা পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞরা এমন মন্তব্য করেছেন।

মিয়ানমারের মন্ত্রী খিও টিন্ট সোয়ে সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন, গত অক্টোবরের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে। দুই দফায় প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা এই সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সিএম শফি সামি সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের একাংশ ফিরিয়ে নেয়ার যে আশ্বাস দিয়েছেন তা যেন বাস্তবায়ন হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। বাংলাদেশের অনুসৃত কূটনৈতিক নীতি সংহত করতে হবে যাতে আন্তর্জাতিক চাপ বহাল থাকে। আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। আশ্বাসের কারণে কোনোভাবেই চাপ কমানো যাবে না। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সুযোগে যেন চাপ প্রশমিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী  বলেন, ‘মিয়ানমারের আশ্বাসে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে পাঁচ দফার প্রথম দফাতেই বলেছেন, মিয়ানমারে সহিংসতা চিরতরে বন্ধ হতে হবে। সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা হয়েছিল কিনা এবং সে প্রশ্নে মিয়ানমারের আশ্বাস কি সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটা শুভঙ্করের ফাঁকি রয়ে গেছে যে, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ যাদের চিহ্নিত করবে তারাই ফেরত যাবে।

এখন প্রশ্ন হল, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা প্রমাণ নিয়ে আসতে পারেননি। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারা প্রমাণ দেখাতে পারবেন না। এ থেকে স্পষ্ট যে, সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত নেবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার যাচ্ছেন নিরাপত্তা নিয়ে মিয়ানমারকে নিশ্চয়তা দিতে সেটা মিয়ানমারের অগ্রাধিকার। বাংলাদেশের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয় অগ্রাধিকার দেয়া।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা কামাল ১৯৯১-৯২ সালে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে মিয়ানমারের আশ্বাসের পুরোটাই ভাঁওতাবাজি। মিয়ানমার যাচাই-বাছাই করেও কোনো রোহিঙ্গাকে অতীতে ফেরত নেয়নি। আমি তাদের এবারের আশ্বাসে বিশ্বাস করি না। রোহিঙ্গাদের নেয়ার ইচ্ছা থাকলে তাদের মিয়ানমার ভাগিয়ে দিত না। এটা মিয়ানমারের একটা আইওয়াশ। বৈশ্বিক চাপ কমানোর কৌশল। বিশ্বকে তারা দেখাবে তারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একজন রোহিঙ্গাকেও তারা ফেরত নেবে না।’

মুস্তাফা কামাল আরও বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গা বিতাড়নের লক্ষ্যে একটা এলাকা নির্ধারণ করে। সেখানে মেয়েদের ধর্ষণ করে, বাড়িঘর পোড়ায়, হত্যা করে। এরপর রোহিঙ্গারা দৌড়িয়ে পালালে ওই জায়গা বরাদ্দ দেয়। তারা ফেরত নিতে চাইলে স্থলমাইন বসাল কেন? স্থলমাইন বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কথা বলা একটা ধোঁকাবাজি।’ তিনি জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে না রেখে নির্দিষ্ট এলাকায় ক্যাম্প করে রাখার পরামর্শ দেন।যুগান্তর

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।