মার্কিন কংগ্রেসে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে শুনানি মিয়ানমারকে রোহিঙ্গামুক্ত করার মিশনে নেমেছে সেনাবাহিনী

মিয়ানমারকে রোহিঙ্গামুক্ত করার সুস্পষ্ট মিশনে নেমেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ জন্য সেখানে নতুন করে টার্গেটেড বা সুনির্দিষ্ট অবরোধ আরোপ করা উচিত। এ সঙ্কট অব্যাহত থাকলে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। আর উদ্ভুত পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে বৈশ্বিক সন্ত্রাসীদের। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্স-এ এক শুনানিতে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে লেভেল-৩ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবি তোলা হয়। বলা হয় সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান ও ইয়েমেনের মতো জায়গার মতো এই সঙ্কটকে লেভেল-৩ হিসেবে ঘোষণা করে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জোর দেয়া উচিত। মার্কিন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ‘দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস: ইউএস রেসপন্স টু দ্য ট্রাজেডি ইন বার্মা’ শীর্ষক শুনানি হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এডুয়ার্ডো আর রয়েস।
শুনানিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর দীর্ঘদিন এমন নির্যাতন চলছে। আর এর ভার বইতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। মিয়ানমার সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক জান্তার স্বৈরতন্ত্র থেকে নির্বাচিত সরকারে ফিরেছে। এই অবস্থানের পরিবর্তন খুবই ভঙ্গুর। তবু যেটুকু অর্জন করেছে মিয়ানমার তা হুমকির মুখে পড়েছে।

কমিটির র‌্যাংকিং সদস্য, এলিয়ট এল এঞ্জেল বলেন, ওয়াশিংটন থেকে ৮ হাজার মাইলেরও দূরে এই রোহিঙ্গা সঙ্কট চলছে। এত দূরের এই ঘটনাকে একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘটনা মনে হতে পারে। তাই আমি বক্তব্য দেয়ার সময় কিছু ছবি দেখাতে চাই। এতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এই মুহূর্তে কি দুর্দশার শিকার হচ্ছেন তার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। আমরা যখন এখানে বসে কথা বলছি, তখন সেখানে এক মানবিক ট্রাজেডি ঘটে চলেছে। এসব ছবি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ৬ সপ্তাহ ধরে প্রত্যাশিতবাবে চলা সহিংসতার। সেখানে বেসামরিক সাধারণ মানুষ, আভ্যন্তরীণ জাতি, আন্তঃধর্মীয় সহিংসতা সৃষ্টি করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। এই রক্তপাতময় সহিংসতার প্রথম ৩০ দিনে কমপক্ষে চার লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগই শিশু, তারা ১৯৯৪ সালে রোয়ান্ডায় গণহত্যা ও ১৯৯৯ সালে কসোভোতে সার্বিয়ার জাতি নিধনের পরে এত দ্রুত সময়ে এত বেশি মানুষ শরণার্থী হওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি।

পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ২৫ শে আগস্ট রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিদের হামলার জবাবে তারা এই নৃশংস দমনপীড়ন শুরু করেছে। সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে অভিযান বা সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান বলে বৈধতা দেয়া যায় না। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষাকারীরা সুস্পষ্টভাবে টার্গেট করেছে রোহিঙ্গাদের। তারা মধ্যযুগীয় কৌশল অবলম্বন করেছে। গলা কেটে দিচ্ছে। পুড়িয়ে দিচ্ছে। ধর্ষণ করছে। নৃশংসভাবে হত্যা করছে মানুষ।

এলিয়ট এল এঞ্জেল বলেন, আমি যেমনটা দেখেছি তাতে মিয়ানমারের শুধু একজন ব্যক্তি এই সহিংসতা বন্ধ করতে পারেন। মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার পথ করে দিতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছে তার তদন্তের অনুমতি দিতে পারেন। তিনি হলেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হলেইং। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তারা মিয়ানমারকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে চায়।

তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি মিয়ানমারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি বা পলিসি তা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীই সেখানে সংবিধানের খসড়া করেছিল। এতে সেনাবাহিনীকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। পার্লামেন্টে তাদেরকে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং আইনগতভাবেই তারা সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। যখন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিল তখন আমরা সেনাবাহিনী ও তাদের অর্থায়নে পরিচালিত ব্যবসার বিরুদ্ধে আরোপ করা অবরোধও প্রত্যাহার করেছিলাম। আমার মনে হচ্ছে, যেহেতু এখন দেখা যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে তাই আমাদের টার্গেটেড অপরোধের নীতি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

শুনানিতে যৌথ বিবৃতি দেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই উপ সহকারী মন্ত্রী ডব্লিউ প্যাট্রিক মারফি ও মার্ক সি স্টোরেলা। বিবৃতিতে তারা বলেন, আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। তবে চারটি পয়েন্টে ফোকাস করতে হবে। তা হলো- ১. রাখাইনে মানবিক সহায়তার জন্য প্রবেশের অধিকার। ২. শরণার্থীদের নিরাপদ, সম্মানজনক ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করা। ৩. যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউএসএইডের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখা। ৪. জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলো যেন রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি পায় তা নিশ্চিত করা।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।