খালেদা জিয়ার ‘গণজোয়ার’ অহিংস রাজনীতির ডাক, নতুন হিসাব-নিকাশ

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:ঢাকা: বিএনপি দীর্ঘদিন পর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তিপূর্ণ বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব্রের জানান দিয়েছে।

গেল দুই বছরের মধ্যে এটা ছিল বিএনপির সবচেয়ে বড় শোডাউন। এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের মনোবল শক্ত এবং রাজপথে নিজেদের শক্তির জানান দেয়া ছিল অন্যতম লক্ষ্য। সেই সঙ্গে রাজনীতিতে একটা গুণগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দলের নেতাকর্মী ও সরকারের প্রতি নির্দেশনামূলক বক্তৃতাসহ সমাবেশের বিভিন্ন দিক এরই মধ্যে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

সমাবেশে খালেদা জিয়া সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি ইতিবাচক রাজনীতিতে ফেরার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

খালেদা জিয়া বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আওয়ামী লীগের জুলুম ক্ষমা করে দেয়া হবে। কোনো ধরনের প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে না বিএনপি।

ঘণ্টাব্যাপী বেগম খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গুম-খুন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ ও অর্থপাচার থেকে শুরু করে জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি স্থান পায়।

বিকাল ৪টা ৯ মিনিটে খালেদা জিয়া তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘আজ ঘরে ঘরে আহাজারি। এই সরকারের হাত থেকে মানুষ মুক্তি চায়, পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তন হতে হবে ভোটের মাধ্যমে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে। যেই নির্বাচন মানুষ নির্দ্বিধায় ভোট দিতে যাবে এবং তাদের ভোট তারা যাকে পছন্দ তাকে দেবে। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’
শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে তারা কী ধরনের চুরি করেছে সবাই দেখেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন এমনকি পেশাজীবীদের মধ্যে প্রকৌশলী, চিকিৎসক এবং শিক্ষকদের ভোটেও তারা একই কাজ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘চুরি করে জনগণকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচনে জয়লাভে কোনো আনন্দ নাই। এরপরও তারা নিজেদেরকে বিজয়ী দাবি করে। কারণ তারা জনগণকে ভয় পায়।’

সরকারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা জনগণের পালস বোঝার চেষ্টা করুন যে তারা কী চাচ্ছে। জনগণ চাচ্ছে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না।’
এসময় ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঠে আপনারাও যাবেন, আমরাও যাব। চ্যালেঞ্জ করছি- একটি জায়গায় আপনার সভা করেন, আমরাও করব; দেখি- কাদের কতো লোক আছে। জনগণই আমাদের শক্তি। তাদের নিয়ে আমাদের পথচলা।’

ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘দেশের এতো ক্ষতি আপনারা করেছেন, সম্পদ লুট করেছেন! আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মাঝে মাঝে সত্য কথা বলেন। পিঠ বাঁচানোর জন্য ক্ষমতায় থাকতে হবে বলে ভাবছেন।’
‘এবার তা হবে না। আমরা সহিংসতার রাজনীতি করি না। তবে আপনাদের শুদ্ধ করব। যে খারাপ কাজ করেছেন তা বাদ দিয়ে আপনাদের সত্যিকার অর্থে মানুষ বানাব’ যোগ করেন তিনি।

বিএনপি জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চায় জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সবাই যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে সেজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কিছু সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে এসেছি।’

‘বলেছি, যদি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে হয়, তাহলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আজকে নির্বাচন কমিশনকে বলি, সেনা মোতায়েন করতে হবে, ইভিএম হবে না’ যোগ করেন তিনি।

ইসির উদ্দেশে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সরকারের অন্যায় আদেশ মানতে পারেন না। নির্বাচন কমিশনারদের বলতে চাই- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব আপনাদের।’

তিনি বলেন, ‘সেনা মোতয়েন করতে হবে। নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা করতে হবে। হাসিনার গুন্ডাবাহিনীর হাতে অবৈধ অস্ত্র। তারা মানুষকে খুন করছে। সেনা না দিলে হাসিনার গুন্ডাবাহিনী ভোটকেন্দ্র দখল করে অত্যাচার চালাবে।’

এসময় খালেদা জিয়া বলেন, ‘তত্ত্ববধায়ক সরকারের দাবি ছিল আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর। এজন্য তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। হরতালের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এমনকি ইট দিয়ে পুলিশের মাথা থেঁতলে দিয়েছে। অফিসগামী বয়স্ক লোকদের তারা দিগম্বর করেছে। এগুলো আওয়ামী লীগের চরিত্র।’

তিনি বলেন, ‘তারা তত্ত্বাবধায়কের দাবির জন্য সমুদ্রবন্দর দিনের পর দিন বন্ধ রেখেছে। বাসে আগুন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারা যাত্রীবাহী বাসে গানপাউডার দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। এদের অপকীর্তির শেষ নেই।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। তাহলে কী করে এই সরকার বৈধ হয়? বর্তমান সরকার ও সংসদ অবৈধ।’

এই সংসদে কোনো বিরোধী দল আছে কিনা- তিনি এমন প্রশ্ন করলে নেতাকর্মীরা সবাই একযোগে ধ্বনি তোলেন, ‘না’। খালেদা জিয়া বলেন, যে বিরোধী দল আছে, সরকারে আবার তাদের মন্ত্রীও আছে। সুতরাং কোনো বিরোধী দল নেই।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে দেশে বিচার বলে কিছু নেই। বিচার বিভাগ বলতে কিছু নেই। প্রধান বিচারপতিকে (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) পর্যন্ত অসুস্থ বানিয়ে জোর করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশে এজেন্সির লোক পাঠিয়ে তাকে চাপ দিয়ে পদত্যাগপত্র নিয়ে আসা হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি চেয়েছিলেন দেশে ফিরে আসতে। কিন্তু তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। কারণ তিনি কিছু সত্য কথা বলেছেন। তারা (সরকার) নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এখন উচ্চ আদালতকেও নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়।’

মহাসমাবেশে সরকারি চাকরিজীবীদের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এই সরকার হয়তো আপনাদের বলে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আপনাদের চাকরি যাবে। মামলা-হয়রানির শিকার হতে হবে। কিন্তু না। আমরা আগেই বলেছি আমার হিংসাত্মক রাজনীতি করি না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই আপনাদের দায়িত্ব। আমরা দেখব- সরকারি চাকরিতে কে কতটা যোগ্য। সেখানে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ বলতে কিছু নেই। যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি হবে। আপনারা নির্দ্বিধায় কাজ করতে পারবেন।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘৭ নভেম্বর আমরা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম, ওই দিন তারা অনুমতি (সরকার) দেয়নি। পরে সমাবেশের অনুমতি তারা দিয়েছে। কিন্তু সমাবেশ যাতে সফল না হয় এবং জনগণ আসতে না পারে সেজন্য পদে পদে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষকে অনেক কষ্ট করে সমাবেশে আসতে হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ও হোটলেগুলোতে তল্লাশি করা হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

নেতাকর্মীর উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এমনকি আমিও যাতে আপনাদের সামনে এসে পৌঁছাতে না পারি, সেজন্য গুলশান পার হওয়ার সময় বাস দিয়ে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে। এরা যে কত ছোট মনের আবারো প্রমাণ করল। এতো ছোট মন নিয়ে রাজনীতি করা যায় না।’

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকার দেশকে শেষ করে দিয়েছে। তারা ২০০৮ সালে কথা দিয়েছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। মানুষ আজ ৭০ টাকা কেজি চাল খাচ্ছে কেন তার জবাব চাই।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সবজির কেজিপ্রতি দাম ৭০-৮০ টাকার নিচে নয়। পিঁয়াজের দাম ১০০ টাকা। জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এই অবস্থায় আবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘তারা কথা দিয়েছিল বিনামূল্যে সার দেবে। বিনামূল্যে সার তো দেয়-ই না, বরং বিএনপির আমলের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। কৃষকরা আজ মহা দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলে ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল তারা। কিন্তু চাকরি তো দেয়-ই নাই, উল্টো ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে। এসময় নেতাকর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে দুয়ো তোলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, সরকার কথায় কথায় উন্নয়নের কথা বলে। উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে। রাস্তা-ব্রিজ বানাতে ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে চারগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে। চলছে নানারকম ধাপ্পাবাজি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে কিন্তু মানুষ বিদ্যুত পায় না। গুলশানের মতো জায়গায়ও বিদ্যুৎ আসে-যায়। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট করা হলো, তাহলে মানুষ বিদ্যুৎ পায় না কেন। পদে পদে ধোকাবাজি। দীর্ঘদিন এই ধোকাবাজি চলতে পারে না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া নেই অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সব প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা। চলছে ছাত্রলীগের মাস্তানি। তারা শিক্ষকের গায়ে হাত তোলে, নারীদের নানাভাবে নির্যাতন করছে।

তিনি দাবি করেন, কখনো শুনিনি দেশে বাসে মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এসব বেড়েছে। তারা বিভিন্ন অনৈতিক কাজ আমদানি করছে।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে গুম-খুনের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বিদেশিরা বলছেন- কতগুলো গুম-খুন হয়েছে তারা তা জানেন।

তিনি বলেন, বিএনপির বহু নেতাকর্মী গুম-খুন হয়েছেন। তাদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিএনপি করটাই তাদের অপরাধ। এজন্যই তাদেরকে গুম-খুন করা হয়েছে।

শেয়ারবাজার ধসের প্রসঙ্গ তুলে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই শেয়ারবাজার লুট হয়। এর আগে কখনো শুনিনি সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের মানুষের টাকা আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই ব্যাংকে টাকা পাঠিয়েছে তাদের মন্ত্রী-এমপিরা। মানুষের রক্ত চুষে টাকা চুরি করে বিদেশে পাঠিয়েছে তারা।

তিনি বলেন, সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার হয়েছে। এটা আমাদের হিসাব নয় আরেরিকাভিত্তিক একটি সংস্থার হিসাব। এই টাকা পাচার করেছে যারা ক্ষমতায় আছে তারা।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পদে পদে দুর্নীতি করছে। পাচার করা বিপুল অংকের টাকার খবর পানামা পেপারসে এসেছে। এই কেলেঙ্কারি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক কোনো মামলা কিংবা তদন্ত করেনি। অথচ দুদক পড়ে আছে আমাদের পেছনে।’

তিনি বলেন, কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, গত সাত বছরে ব্যাংক থেকে চুরি হয়েছে সাত হাজার কোটি টাকা। এই খাতে দুর্নীতির সঙ্গে কারা জড়িত মানুষ তা জানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার কারসাজি করে পাচার করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে কোনো তদন্ত হয় না। কাউকে ধরা হয়নি।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশের মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে চাই। সংঘর্ষের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আলাপ-আলোচনা ছাড়া জাতীয় ঐক্য সম্ভব নয়। আমরা জবাবদিহিতামূলক সংসদ দেখতে চাই। সরকারি দল ও বিরোধী দল মিলে আলোচনা করে যে কোনো সমস্যার সমাধান করব।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজকে আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা রোহিঙ্গা সমস্যা। এটা শুধু অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের সমস্যা নয়। তাই একসঙ্গে বসে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান- রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজ দেশে ফিরে গিয়ে নির্ভয়ে সেখানে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা নিন। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও যুক্তরাজ্যসহ প্রভাবশালী দেশগুলোকেও এ সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়। তারা মিয়ানমারের নাগরিক। মানবিক কারণে তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘদিন তাদের রাখা সম্ভব নয়। এর আগেও দুবার তারা এসেছিল। তখন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলে তাদের ফেরত পাঠিয়েছিলাম।

সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, যারা একবছরের বেশি বেকার থাকবে তাদের জন্য বেকার ভাতা চালু করা হবে। সকল ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্নাতক পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হবে। মেয়েদের উপবৃত্তি দেওয়া হবে। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে। পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য বীমা চালু করা হবে।

তিনি বলেন, কৃষকদের মাঝে কম দামে কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হবে। তাদেরকে উৎপাদনে উৎসাহিত করা হবে। তারা যে দামে ফসল উৎপাদন করবে সরকার তার চেয়ে বেশি দামে কিনে নেবে।

এক-এগারোর সময়ের নির্যাতনের কথা স্মরণ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারা চেয়েছিল সপিরবারে আমাকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে। আমি বলেছি, বিদেশে আমার কোনো ঠিকানা নেই। এদেশের মানুষই আমার ঠিকানা।’

এসময় বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এরপর আমার ছেলেদের নির্যাতন করা হয়েছে। এক ছেলেকে পঙ্গু করে দেয়া হয়। আরেক ছেলে মারা গেল।’

নিজেকে সামলে নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘তারা বলেছে- আমি নাকি বাংলাদেশে ফিরে আসব না। আমার ঠিকানা বাংলাদেশ। এখানের মানুষের কাছেই আমি থাকব। আমাদের শক্তি গুলি নয়, এদেশের মাটি ও মানুষ।’

বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যের ইতি টানতে গিয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার নাম উল্লেখ করে তাদের মুক্তি দাবি করেন তিনি। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিায়া বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জয় আসবেই। বাংলাদেশকে সম্মানের উঁচু স্থানে নিয়ে যাব।’

এর আগে নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে মঞ্চে উঠেন খালেদা জিয়া। মুহুর্মুহু স্লোগান আর করতালিতে তাকে স্বাগত জানান নেতাকর্মীরা। দু’হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি।

মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।

সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি যেন সরকারি মহলেও টনক নড়েছে। বিএনপির এমন সমাবেশের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বড় পরিসরে একটি সমাবেশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আওয়ামী লীগের সমাবেশ হচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) স্বীকৃতি দেওয়া উপলক্ষে ১৮ নভেম্বর সমাবেশ আয়োজন করা হচ্ছে।

ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আওয়ামী লীগের সব শীর্ষ নেতাই উপস্থিত থাকবেন ওই সমাবেশে। আর ১৪ দলীয় জোটের শরীকদের কেউ কেউ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানা গেছে।

দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, বিএনপির সমাবেশের পাল্টা জবাব হবে ১৮ তারিখের সমাবেশ। সমাবেশে সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হবে, যা হবে বিএনপির সমাবেশে উপস্থিতির কয়েকগুণ বেশি। আর এই সমাবেশ থেকেই বিএনপির সমাবেশের করা বিভিন্ন অভিযোগের পাল্টা জবাব দেওয়া হবে।

বিএনপির শোডাউনের পাল্টা শোডাউন হবে ১৮ নভেম্বরের আওয়ামী লীগের সমাবেশ এমনটাই বলছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।