রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের পক্ষেই সাফাই গাইলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:: রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের পক্ষেই সাফাই গাইলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটের জেরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এখনই নিষেধাজ্ঞা আরোপ যৌক্তিক হবে না। আরটিএনএন।
গতকাল বুধবার একদিনের সফরে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে পৌঁছে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চি ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে  বৈঠকের পর টিলারসন এ মন্তব্য করেন। যদিও রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর বিশ্বাসযোগ্য নৃশংসতার অভিযোগের স্বাধীন তদন্তের দাবি করেছেন তিনি।
টিলারসের সঙ্গে বৈঠকের পর নেপিদোতে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কটে নীরব না থাকার দাবি করেছেন মিয়ানমারের নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জাতিগত নিধন অভিযানের জেরে আন্তর্জাতিক তীব্র সমালোচনা ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবির মাঝে গতকাল বুধবার নেপিদোতে সফর করছেন টিলারসন।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য এসেছে রোহিঙ্গা সঙ্কটে অং সান সু চি নীরব ছিলেন না বলে কৌশলী বক্তব্য দেয়ার পর। সু চি টিলারসনকে বলেন, তিনি কথা বলার চেয়ে কাজেই বেশি মনযোগ দিয়েছেন; যাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কিংবা বিভাজন এড়ানো যায়।
গত আগস্টের শেষের দিকে উত্তর রাখাইনে পুলিশি নিরাপত্তা চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে। এর পর বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার থেকে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়েছে।
সেনাপ্রধান ও সু চির সঙ্গে বৈঠকের পর টিলারসন বলেন, ‘ব্যাপক পরিসরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এই মুহূর্তে যৌক্তিক হবে বলে আমি মনে করি না।’
সু চিকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে টিলারসন বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারকে সফল হিসেবে দেখতে চাই। আপনি শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন না এবং বলতে পারেন না যে সঙ্কট উতরে গেছে।’
তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক নৃশংসতার যে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ উঠেছে সে ব্যাপারে ওয়াশিংটন গভীর উদ্বিগ্ন। এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান টিলারসন।
মার্কিন এই শীর্ষ কূটনীতিক রাখাইনের রোহিঙ্গা সঙ্কটের ব্যাপারে বলেন, ‘সেখানে যা ঘটেছে তার দৃশ্যগুলো ভয়ঙ্কর।’ তবে সেনাবাহিনীর নৃশংসতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে সু চি নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। একই সঙ্গে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তাদের রাখাইনে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মিয়ানমার।
তবে রোহিঙ্গা সঙ্কটে নীরব ভূমিকার কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লেও তা উড়িয়ে দিয়েছেন সু চি। টিলারসনের সঙ্গে বৈঠকের পর সু চি বলেন, তিনি এমনভাবে কথা বলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন যাতে উত্তেজনার সৃষ্টি না হয়।
সুচি বলেন, ‘আমি নীরব ছিলাম না আমি যা বলেছি তা মানুষের মনপুত নাও হতে পারে। আমি যা বলেছি তার অর্থ উত্তেজনাপূর্ণ হওয়া নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে নিখুঁত মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো নয়।’

 

 

রোহিঙ্গা নির্যাতনে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার চাইলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিবিসি:রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করার সুপারিশ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন।

একইসাথে তিনি বলেছেন, রাখাইনে যেসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার ওপর স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চালাতে হবে।

মিয়ানমারে এক সফরের সময় টিলারসন বর্মী সামরিক বাহিনীর সুপরিকল্পিত সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, “রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং অস্ত্রধারী বেসরকারি গোষ্ঠীগুলোর হাতে ব্যাপক নির্যাতনের বিশ্বাসযোগ্য খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”

মিয়ানমারের রাজধানী নেপিট’তে তিনি যখন এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব বক্তব্য রাখছিলেন, তখন তার পাশে ছিলেন মিয়ানমার নেত্রী অঙ সান সুচি।
টিলারসন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য ৪০ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো আইন প্রণেতা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে বিল পেশ করার কথা বললেও টিলারসন বলেন, পরিস্থিতি বলে এই নিষেধাজ্ঞা সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে না।

এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অঙ লাইং-এর সাথেও বৈঠক করেন।

রাখাইন নির্যাতনে বর্মী সেনাবাহিনীর সাফাই
ওদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ওই প্রতিবেদনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
কোনো রোহিঙ্গাকে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, নারীদের ধর্ষণ বা লুটপাটের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জাতিসঙ্ঘ ইতোমধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের অন্যতম উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। বিবিসির সংবাদদাতাও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছেন কিভাবে জ্বালাওপোড়াও চলেছে।
তবে এগুলোর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতিবেদনের কোনো মিল নেই।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দূর করার চেষ্টা করছে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী এমন অভিযোগের পর থেকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জাতিসঙ্ঘ তদন্ত কমিশনকে মিয়ানমারে প্রবেশ করে সঠিক তথ্য যাচাইয়ের দাবি জানিয়ে আসছিল।

কিন্তু রাখাইন রাজ্যে গণমাধ্যমের প্রবেশের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কড়া ব্যবস্থা রয়েছে।
কিছুদিন আগে সরকার তাদের নিয়ন্ত্রনে সাংবাদিকদের একটি দলকে রাখাইন সফরে নিয়েছিল এবং সে সফরে গিয়ে বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি জোনাথন হেড দেখেছেন রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রাম আগুনে পুড়ছে। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে পুলিশের সঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পুরুষদেরও দেখতে পেয়েছেন তিনি।

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।