পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড বহাল# আপিলে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল#মুক্তিযুদ্ধের পর এমন নৃশংসতা নজিরবিহীন: হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

   ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ঢাকা:পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ১৫২ জনের মধ্য থেকে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।বাকি ৮ জনকে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেয়া হয়েছে এবং একজন মারা গেছেন।
সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে দ্বিতীয় দিনের মতো অসমাপ্ত রায় পড়া শুরু হয়। শুরুতে রায়ের পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার। তার পড়া শেষ হলে রায়ের মূল অংশ পড়েন বিচারপতি মো. শওকত হোসেন।
এর আগে রোববার বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রথম দিনের রায় পড়া হয়। এ দিন পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড বিশ্বের ইতিহাসে নৃশংসতম ঘটনা। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টে একটি শৃংখলিত বাহিনীকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন হ্ত্যাকাণ্ড।

সোমবার মূল রায়ে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছেন। বাকি ৮ জনের যাবজ্জীবন এবং ৪ জন খালাস পেয়েছেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। বাকি ১২ জন খালাস পেয়েছেন এবং ২ জন মারা গেছেন।

বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ২৫৬ জনের মধ্যে ২ জনের ১৩ বছর, ১৮২ জনের ১০ বছর, ৮ জনের সাত বছর, ৪ জনের তিন বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি ২৯ জন খালাস। আর ২৮ জনের বিষয়ে আপিল না হওয়ায় তাদের আগের সাজা বহাল। এছাড়া কারাগারে মারা গেছেন ৩ জন।

পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় নিম্ন আদালত থেকে ২৫৬ জনের বিরুদ্ধে দেয়া বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।সোমবার বেলা সোয়া ৩টার পর থেকে হাইকোর্ট এ রায় ঘোষণা শুরু করেন।

 

মুক্তিযুদ্ধের পর এত বিপুলসংখ্যক নৃশংসতা নজিরবিহীন। পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মামলায় আপিল রায়ের পর্যবেক্ষণে এমনটিই বলেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে দ্বিতীয় দিনের মতো অসমাপ্ত রায় পড়া শুরু হয়। শুরুতে রায়ের পর্যবেক্ষণ দেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার। তার পড়া শেষ হলে রায়ের মূল অংশ পড়বেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেন।
এর আগে রোববার বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রথম দিনের রায় পড়া হয়। এদিন পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ইতিহাসের নৃশংস ঘটনা। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টে একটি শৃঙ্খলিত বাহিনীকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।
হাইকোর্ট বলেন, বিডিআরে কোনো সেনা অফিসার থাকবে না, সব ক্ষমতা তাদের থাকবে। এটিই ছিল হত্যাকাণ্ডের মূল লক্ষ্য।
এই রায়কে পৃথিবীর ইতিহাসের বড় রায়গুলোর একটি উল্লেখ করে আদালত বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের প্রচলন নেই। মানবাধিকারের কথা বলা হয়। হত্যা একটি জঘন্য অপরাধ। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি সমাজের কাছে নজির রাখবে। অপরাধীদের অপরাধ করতে নিরুৎসাহিত করবে। এ জন্য হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট প্রমাণ সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রয়োজন।
এ ঘটনায় দেশের বাইরের শক্তির সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালত বলেন, সব সাক্ষ্যপ্রমাণ দ্বারা প্রতীয়মাণ হয় যে, এটি ভেতর ও বাইরের গভীর ষড়যন্ত্র, যা দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টায় হয়েছিল।
আসামি সংখ্যার দিক থেকে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ওই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এই হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচার প্রক্রিয়ার আরেকটি বড় ধাপ সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।