বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান পোপের#কাল সোহরাওয়ার্দীতে বক্তব্য দেবেন পোপ, প্রস্তুতি সম্পন্ন, নিরাপত্তা জোরদার

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস।

 একই সঙ্গে এই রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
 মিয়ানমার সফর শেষে বাংলাদেশে এসে বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান পোপ ফ্রান্সিস।
 এর আগে বিকাল ৩টায় ঢাকায় পৌঁছে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।
 সেখান থেকে যান বঙ্গভবনে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে তিনি বক্তব্য দেন।
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, গত কয়েক মাসে রাখাইন থেকে আসা বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ উদার মন এবং অসাধারণ সংহতির পরিচয় দিয়েছে।
মিয়ানমারে নিপীড়িত মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে পোপের অবস্থানকে ‘প্রশংসনীয়’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ক্যাথলিক ধর্মগুরুর এই অবস্থান সঙ্কট সমাধানে আশা দেখাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি মমত্ববোধ, তাদের সাহায্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় পোপের আহ্বান বিশ্ব সম্প্রদায়কে নৈতিক বাধ্যতা দেয়।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে পোপকে বহনকারী বিশেষ বিমান হযরত শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর বিকাল ৩টা ৩ মিনিটে  পোপকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
পরে বিমানবন্দরে পোপ ফ্রান্সিসকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
সফরের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খ্রিস্টধর্মীয় উপাসনা ও যাজক অভিষেক অনুষ্ঠানে পোপ বক্তব্য রাখবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পোপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বিকালে ক্যাথেড্রাল পরিদর্শন করবেন এবং রমনায় প্রবীণ যাজক ভবনে পোপের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশপদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পোপ বক্তব্য রাখবেন। তারপর আর্চ বিশপ হাউসের মাঠে শান্তির জন্য আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃমাণ্ডলিক সমাবেশে পোপ বক্তব্য রাখবেন।
পোপ তার সফরের শেষ দিন শনিবার সকালে তেজগাঁওয়ে মাদার তেরেসা ভবন ব্যক্তিগতভাবে পরিদর্শন করবেন। তার পর তেজগাঁও গির্জায় যাজকবর্গ, ব্রাদার-সিস্টার, সেমিনারিয়ান ও নবিশদের সমাবেশে পোপ বক্তব্য রাখবেন। তিনি তেজগাঁওয়ে পুরনো গির্জা পরিদর্শন করবেন।
বিকালে নটর ডেম কলেজে যুব সমাবেশে তিনি বক্তব্য রাখবেন।
শনিবার ৫টার দিকে রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সফরকালে পোপ লা মেরিডিয়ান হোটেলে থাকবেন। ওই হোটেলে বিশাল মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। পোপের সফর কভার করার জন্য প্রায় ৩০০ বিদেশি সাংবাদিক ঢাকায় রয়েছেন। রোহিঙ্গা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পোপের এবারের ঢাকা সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইতিপূর্বে ভ্যাটিকান থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়নের তীব্র নিন্দা করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তখন তিনি রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা ভাই ও বোন’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু তিনি মিয়ানমার সফরে যাওয়ার আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মিয়ানমার সফরকালে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করেন। মিয়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উচ্চারণ করেননি তিনি।
——————–0—————————-
আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে বক্তব্য দেবেন পোপ ফ্রান্সিস। আর এ উপলক্ষে সাজানো হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। একই সঙ্গে সব দিক থেকে এই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেখা যায় মূল মঞ্চের ঠিক ডান পাশে বিশেষ নিরাপত্তার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষ বাসানো হয়েছে। আর এর ঠিক পাশেই র‌্যাবের একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষও স্থাপন করা হয়েছে। পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে বাসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।
এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে মূল রাস্তার ওপরেও ওয়াচ টাওয়ার বসিয়েছে র‌্যাব। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ও বাইরে চতুর্দিকে বিভিন্ন খুঁটিতে বাসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রতিটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। আজ বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এসব ক্যামেরা বসাতে দেখা গেছে।
একই সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধন করতে ছিটানো হচ্ছে স্প্রে। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের সময় প্রত্যেককে তল্লাশি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কাল শুক্রবার সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য দেবেন পোপ ফ্রান্সিস। এ জন্য অনুষ্ঠানের অন্য সব কার্যক্রমের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। মঞ্চের ডান পাশে বসানো হয়েছে বেশ কিছু সাউন্ড সিস্টেম। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকে লাগানো হয়েছে মাইক। মঞ্চের বাম পাশে সংগীত পরিবেশনের জন্য একটি জায়গা ঠিক করে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিসকে স্বাগত ও সম্মান জানানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মঞ্চের সামনের অংশে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রেখে বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এরপর সাধারণদের বসার জন্য চেয়ার সাজানো হয়েছে। আর প্রতিটি চেয়ার সাজানোর পর একটি করে ব্লক নম্বর দেওয়া আছে। নির্দিষ্ট ব্লকে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পোপের আগমন এবং তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। ডিএমপি সদর দপ্তরে গত রোববার পোপের আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই এ কথা জানান তিনি।
কমিশনার জানান, জাতীয় স্বার্থে পোপকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের অন্যতম একজন সম্মানীয় ব্যক্তি। সফরের সকল ভেন্যু, হোটেল ও বিমানবন্দরকেন্দ্রিক থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। গমনাগমনকালে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। স্ট্যান্ডবাই হিসেবে প্রস্তুত থাকবেন সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা।
আগামীকাল শুক্রবার সকালে সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার পর বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। সেখান থেকে বিকেল ৪টায় যাবেন প্রধান গির্জা পরিদর্শনে। সেখানে তিনি বিশপ ও জ্যেষ্ঠ যাজকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। শেষে সেখানে শান্তির জন্য আন্তধর্মীয় ও সর্বজনীন ঐক্য বিষয়ে বক্তব্য দেবেন।
সফরের তৃতীয় ও শেষ দিন শনিবার সকাল ১০টায় পোপ ফ্রান্সিস রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাদার তেরেসার বাসভবন পরিদর্শনে যাবেন। সেখান থেকে হলি রোজারি গির্জার যাজক, ধর্মীয় নারী-পুরুষ এবং অন্যদের সামনে বক্তব্য দেবেন তিনি। এরপর সেখান থেকে প্যারিস কবরস্থান ও প্রাচীন গির্জা ঘুরে দেখবেন। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে নটর ডেম কলেজের তরুণদের সামনে বক্তব্য দেবেন পোপ ফ্রান্সিস। বিকেল পৌনে ৫টায় তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।