কৃষক থেকে আইসিটি মন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার

মোস্তাফা জব্বার (জন্ম:১২ই আগস্ট১৯৪৯) একজন বাংলাদেশী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি। তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি[১] । তাকে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা যুক্ত করার পথপ্রদর্শক মনে করা হয়[২] । তার প্রতিষ্ঠানের বিজয় বাংলা কিবোর্ড ১৯৮৮ সালে প্রকশিত হয় যা প্রথম বাংলা কিবোর্ড এবং ইউনিকোড আসার পূর্বপর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও সাধারণ বিষয়ের ওপর অনেকগুলো বইয়ের লেখক।

পরিবার[সম্পাদনা]

মোস্তাফা জব্বারের পৈতৃক নিবাস নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে। ১৯৪৯ সালের ১২ই আগষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামের নানার বাড়ীতে তাঁর জন্ম। মোস্তাফা জব্বারের বাবা আব্দুল জব্বার তালুকদার পাটের ব্যবসায়ী ও সম্পন্ন কৃষক ছিলেন। তার দাদা আলিমুদ্দিন মুন্সি ছিলেন বিশাল ভূ সম্পত্তির মালিক যার উপাধি ছিলো তালুকদার। তার মা রাবেয়া খাতুন সমগ্র জীবন গৃহিনী হিসেবেই জীবন যাপন করেছেন । [৩]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মোস্তাফা জব্বারের দাদা ও বাবা প্রতিষ্ঠিত নিজ গ্রামের প্রাইমারি স্কুল থেকে তিনি ১৯৬০ সালে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষা সম্পন্ন করেন। কিন্তু তার নিজ গ্রামে বা তার গ্রামের আশেপাশে এমনকি পঁচিশ কিলোমিটারের মাঝে কোন হাইস্কুল ছিলোনা বলে তিনি হাইস্কুলে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তার বাবা-মা এবং নিজের কঠোর ইচ্ছাশক্তির কারণে গ্রামের বাড়ীর ২৫ কিলোমিটারের বেশি দূরের তৎকালীন সিলেট জেলার (বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার অধীনস্থ) বিরাট নামক একটি গ্রামের হাইস্কুলে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন ও ১৯৬৬ সালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে হবিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে মানবিক শাখায় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। এরপর তিনি মানবিক শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ঢাকা কলেজে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৬৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। সেই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৭২ সালে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে স্নাতক সম্মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই পরীক্ষাটি ১৯৭১ সালে হবার কথা ছিলো। ৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পরীক্ষা হলেও মুক্তিযুদ্ধের কারণে পরে সেটি বাতিল হয়ে যায়। এরপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালের পরীক্ষা ১৯৭৪ সালে সম্পন্ন করে দ্বিতীয় শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।[৪]

রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড[সম্পাদনা]

ছাত্রজীবনে তিনি রাজনীতিমুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য চর্চা, সাংবাদিকতা, নাট্য আব্দোলন; এসবের মাঝে ব্যাপকভাবে জড়িত ছিলেন। ৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার লেখা বাংলাদেশের প্রথম গণনাট্য এক নদী রক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্রে মঞ্চস্থ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠকালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম নেতা ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের পক্ষে নির্বাচন করে সূর্যসেন হলের নাট্য ও প্রমোদ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার আগে তিনি সাপ্তাহিক জনতা পত্রিকায় লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন।[৪]

মুক্তিযুদ্ধ[সম্পাদনা]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে মোস্তাফা জব্বার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুজিব বাহিনীর খালিয়াজুরি থানার সহ অধিনায়ক ছিলেন। তার বাড়ীর পাশের সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ১৬১ জন রাজাকার যুদ্ধোত্তরকালে তার কাছে আত্মসমর্পণ করে যার মধ্যে ১০৮ জনকে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে ।[৪]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ছাত্র থাকাকালেই মোস্তাফা জব্বারের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে। সেই সময়ে তিনি সাপ্তাহিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজে যোগ দেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ পত্রিকাটি দৈনিকে পরিণত হয়। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গণকণ্ঠ পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হতো এবং সেই সময়ে প্রকাশিত পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা পর্যন্ত তিনি তাতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। গণকণ্ঠ বন্ধ হয়ে যাবার পর তিনি ট্রাভেল এজেন্সি, মুদ্রণালয়, সংবাদপত্র ইত্যাদি ব্যবসায় যুক্ত হন। তিনি ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাব (এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ)- এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৮৭ সালের ২৮শে এপ্রিল মেকিন্টোস কম্পিউটারের বোতাম স্পর্শ করার মধ্য দিয়ে কম্পিউটার ব্যবসায়ে প্রবেশ করেন। সেই বছরের ১৬ মে তিনি কম্পিউটারে কম্পোজ করা বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা আনন্দপত্র প্রকাশ করেন। ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি প্রকাশ করেন বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার। সেটি প্রথমে মেকিন্টোস কম্পিউটারের জন্য প্রণয়ন করেন। পরে ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ তিনি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্যও বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার প্রকাশ করেন। তিনি দেশের সংবাদপত্র, প্রকাশনা ও মুদ্রণ শিল্পের ডিটিপি বিপ্লবের অগ্রনায়ক। তিনি আনন্দ প্রিন্টার্স এবং আনন্দ মুদ্রায়ণের প্রতিষ্ঠাতা। তার হাতেই গড়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল বাংলা নিউজসার্ভিস আনন্দপত্র বাংলা সংবাদ বা আবাস। তিনি এর চেয়ারম্যান ও সম্পাদক।[৪] তিনি এসোসিয়েশন অব ট্রালেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ বা আটাব-এর মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইতিপূর্বে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির নির্বাহী পরিষদের সদস্য, কোষাধ্যক্ষ ও সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস ( বেসিস ) এর প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি ও পরিচালক এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। ২০০৮-০৯ সময়কালে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০-১১ সালে তিনি তৃতীয় বারের মতো বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২-মে-১৩ সময়কালে তিনি এই সমিতির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১লা জুন ২০১৩ থেকে ৩১ মার্চ ২০১৪ পর্যন্ত তিনি আবার চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে (২০১৪-১৫-১৬) তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির উপদেষ্টা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সসহ বিভিন্ন সংস্থায় যুক্ত আছেন। তিনি ২০১৪-১৫-১৬ সময়কালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নেত্রকোণা জেলা সমিতির উপদেষ্টা। তিনি নেত্রকোণা যুব সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।[৫]

কর্মকান্ড ও অবদান[সম্পাদনা]

দেশে কম্পিউটারের শুল্ক ও ভ্যাট মুক্ত আন্দোলনের অগ্রণী নেতা ও শিক্ষায় কম্পিউটার প্রচলনের একনিষ্ঠ সাধক মোস্তাফা জব্বার এখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক অনেক কমিটির সদস্য। তিনি কপিরাইট বোর্ড এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির সদস্য। ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা সম্পর্কে প্রথম নিবন্ধ লেখেন এবং তার দ্বারাই ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার লিপিবদ্ধ হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং বাংলাদেশ সরকার এখন সেই প্রতিশ্রুতি বা ঘোষণা বাস্তবায়ন করছে। তিনি কম্পিউটার বিষয়ে অনেকগুলো বই লিখেছেন। দেশের কম্পিউটার বিষয়ক পত্রিকাসমূহে ব্যাপকভাবে লেখালেখিতে ব্যস্ত মোস্তাফা জব্বার নবম ও দশম শ্রেণীর কম্পিউটার বিষয়ক পাঠ্যপুস্তক মাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা বইটির লেখক। তার লেখা “কম্পিউটার ও ইনফরমেশন টেকনোলজি” এবং “একাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম” ¯œাতক পর্যায়ের পাঠ্য বই। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি” বই-এর লেখক তিনি। এছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা, দুই খ-ের প্রাথমিক কম্পিউটার শিক্ষা, মাল্টিমিডিয়া ও অন্যান্য প্রসঙ্গ ছাড়াও তার লেখা কম্পিউটারে প্রকাশনা, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল ও তার সম্পাদিত কম্পিউটার অভিধান ব্যাপকভাবে প্রচলিত কম্পিউটার বিষয়ক বই। তার প্রথম উপন্যাস নক্ষত্রের অঙ্গার ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে। সুবর্ণে শেকড় নামে আরেকটি উপন্যাস তিনি লিখছেন। এছাড়াও কম্পিউটার কথকতা, ডিজিটাল বাংলা, একুশ শতকের বাংলা, বাঙ্গালী ও বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং একাত্তর ও আমার যুদ্ধ তার লেখা বইগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তি’, ‘কম্পিউটার’ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ টক শো-এর মাধ্যমে তিনি এখনও কম্পিউটার প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করে চলেছেন। এটিএন বাংলার ‘কম্পিউটার প্রযুক্তি’ এবং চ্যানেল আই এর ‘একুশ শতক’ অনুষ্ঠানের সহায়তায় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমেও তিনি কম্পিউটারকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেন। [৪]

পুরষ্কার[সম্পাদনা]

তথপ্রযুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখা এবং বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও সফটওয়্যার আবিষ্কার করার জন্য তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেরা সফটওয়্যারের পুরষ্কার, পশ্চিমবঙ্গের কমপাস কম্পিউটার মেলার সেরা কমদামী সফটওয়্যারের পুরষ্কার, দৈনিক উত্তরবাংলা পুরষ্কার, পিআইবির সোহেল সামাদ পুরষ্কার, সিটিআইটি আজীবন সম্মাননা ও আইটি এ্যাওয়ার্ড, বেসিস আজীবন সম্মাননা পুরষ্কার, বেস্টওয়ে ভাষা-সংস্কৃতি পুরষ্কার, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদ সম্মাননা, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি ও সিলেট শাখার সম্মাননা বিশ্বমেধাসম্পদ সংস্থার আবিষ্কারক-উদ্যোক্তার স্বীকৃতি এবং অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়ন সংস্থার নেত্রকোণার গুনীজন সম্মাননা, রাহে ভান্ডার এনোবল এওয়ার্ড ২০১৬ (প্রযুক্তিবিদ হিসেবে)[৬][৭][৮] এবং এসোসিও ৩০ বছর পূর্তি সম্মাননাসহ ২০টি পুরষ্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও তার রয়েছে অসংখ্য শুভেচ্ছা সম্মাননা।[৪][৯]

সামাজিক কর্মকান্ড[সম্পাদনা]

শিক্ষানুরাগী মোস্তাফা জব্বার তাঁর নিজ গ্রামে বাবা প্রতিষ্ঠিত হাইস্কুলের সম্প্রসারণ করেছেন, বাবা-মার নামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং গ্রামের হাজী আলী আকবর পাবলিক ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে কম্পিউটার শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন ও কম্পিউটার স্বাক্ষরতা প্রসারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছেন। দেশজুড়ে মাল্টিমিডিয়া প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা ছাড়াও তিনি বিজয় ডিজিটাল স্কুল এবং আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলের সাহায্যে শিক্ষাব্যবস্থার নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছেন। কম্পিউটারকে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে একুশ শতকের নতুন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা তাঁর জীবনের লক্ষ্য। তিনি এখন প্রধানত কম্পিউটারে বাংলা ভাষার প্রয়োগ এবং শিক্ষামূলক সফটওয়্যার তৈরীতে ব্যস্ত আছেন।[৪]

অভ্র-বিজয় বিতর্ক[সম্পাদনা]

কম্পিউটারে বাংলা লেখার বাণিজ্যিক ক্লোজ সোর্স সফটওয়্যার ‘বিজয়’ এর স্বত্বাধিকারী এবং ‘আনন্দ কম্পিউকার্স’ এর প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা জব্বার ৪ঠা এপ্রিল ২০১০ তারিখে দৈনিক জনকন্ঠের একটি নিবন্ধে অভ্রর দিকে ইঙ্গিত করে দাবী করেন যে- হ্যাকাররা তার ‘বিজয়’ সফটওয়্যারটি চুরি করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি অভ্র কীবোর্ডকে পাইরেটেড সফটওয়্যার হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে ইউএনডিপি হ্যাকারদের সহযোগিতা করেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে ইউএনডিপি-র প্ররোচনাতেই জাতীয় তথ্যভান্ডার তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র কীবোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। মেহেদী হাসান খান জানান যে ক্লোজড সোর্স প্রোগ্রাম হ্যাক করা সম্ভব নয় বিধায় বিজয়ের সিস্টেম হ্যাক করা সম্ভব নয়।[১০] অপরদিকে, অভ্র’র পক্ষ থেকে মেহদী হাসান খান সকল নালিশ অস্বীকার করেন এবং অভিযোগ করেন যে, জব্বার বিভিন্ন পর্যায়ে ও গণমাধ্যমে তাদেরকে চোর বলেন এবং তাদের প্রতিবাদ সেখানে উপেক্ষিত হয়। কম্পিউটারে বাংলা নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য উকিল নোটিশ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে আক্রমণের হুমকি উপেক্ষা করে কাজ করা স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা। তিনি আরো বলেন যে নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয় পত্র প্রকল্পে বাণিজ্যিক বিজয় এর পরিবর্তে বিনামূল্যের অভ্র ব্যবহার করাতে প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হওয়ায় জব্বার এমন অভিযোগ করেছেন। [১১][১২]

অভ্র ৪.৫.১ সফটওয়্যারের সাথে ইউনিবিজয় নামে একটি কীবোর্ড লেয়াউট সরবরাহ করা হয়। এই ইউনিবজয় কীবোর্ড লেয়াউট প্যাটেন্টকৃত বিজয় কীবোর্ড লেয়াউটের নকল দাবী করে মোস্তফা জব্বার কপিরাইট অফিসে কপিরাইট আইন ভঙ্গের জন্য মেহেদী হাসান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে কপিরাইট অফিস খানকে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠায়।[১৩] পরবর্তিতে মেহেদী হাসান খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে এর সময়সীমা ২৩ মে ২০১০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।[১৪]

১৬ জুন ২০১০ তারিখে ঢাকার আগারগাঁও এ অবস্থিত বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অফিসে অনেক তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মেহদী হাসান খান ও মোস্তফা জব্বারের মধ্যে একটি সমঝোতা হয় এই মর্মে, ২০ আগস্ট, ২০১০ এর মধ্যে, অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লেআউট সরিয়ে নেওয়া হবে এবং কপিরাইট অফিস থেকে মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কপিরাইট লংঘনের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।[১৫] সেই চুক্তি অনুযায়ী, অভ্রর ৪.৫.৩ সংস্করণ থেকে ইউনিবিজয় কীবোর্ড বাদ দেওয়া হয়। তিনি অভ্র কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।[১৬]

বিজয়-রিদ্মিক বিতর্ক[সম্পাদনা]

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে তার ফেসবুক দেয়ালে একটি স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি-বোর্ড লেআউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।[১৭]

পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদ্মিক এবং ইউনিবিজয় কীবোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথকভাবে ইমেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।[১৭]

পরে নতুন লে আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদ্মিক কিবোর্ড প্রকাশ করা হয়। [১৮]

Please follow and like us:

Check Also

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।