বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কাজে আসছে না রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন জটিলতা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক তালিকা না করায় তাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কাজে আসছে না। এ অবস্থায় প্রথম ধাপে প্রত্যাবাসনের জন্য এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মিয়ানমারকে হস্তান্তর করা যায়নি। এমনকি তা তৈরিও হয়নি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ২৯ ডিসেম্বর উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণকালে ওই তালিকা সে দিনই হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছিলেন।

সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রত্যাবাসনের জন্য নতুন করে একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। এ কাজের জন্য এখনও কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তির শর্তে আগামী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর যে কথা ছিল, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নতুন করে দেখা দিয়েছে জটিলতা।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন এখনও চলছে। বুধবার পর্যন্ত ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৩ রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিচ্ছিন্নভাবে করা এই নিবন্ধন তালিকা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ত্রাণ বিতরণেও এটি কাজে আসছে না। বলা হয়েছিল রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকাভুক্তি ও পাসপোর্ট পাওয়া ঠেকাতে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যকর হবে; কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। এ ব্যবস্থা এখনও কার্যকর না হওয়ায় বহু রোহিঙ্গা বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোটার তালিকাভুক্ত হচ্ছে। কৌশলে পেয়ে যাচ্ছে পাসপোর্ট।

কুতুপালং ক্যাম্পে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ- যারা কেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছে, স্বতন্ত্রভাবে তাদের ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে একটি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। তবে পরিবারভিত্তিক নিবন্ধন না করায় নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের এই নিবন্ধন থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। জানা যাচ্ছে না বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা পরিবারের সংখ্যা। ওই কর্মকর্তা বলেন, একটি পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে। সেভাবেই নির্ভুল তালিকা করে মিয়ানমারকে হস্তান্তর করতে হবে।

কক্সবাজারে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশন-ইউএনএইচসিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক নিবন্ধন করার জন্য সংস্থার পক্ষ থেকে শুরুতেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি নমুনা ফরমও দেওয়া হয়েছিল। নিবন্ধন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছিল সংস্থাটি; কিন্তু তাদের এই প্রস্তাবে সরকারের সম্মতি পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর তালিকা তৈরি ও হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি জটিল। যেনতেনভাবে তাদেরকে ফেরত পাঠালে হবে না। সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি-না, দেখতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, একদিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, অন্যদিকে তারা আবার পালিয়ে এসেছে। রাখাইনে পরিস্থিতি উন্নতি না হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হবে না। প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, এখনও প্রতিদিন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। তাদের স্থান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাইম জানান, ৬টি সেন্টারে এখনও রোহিঙ্গা নিবন্ধন চলছে। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হচ্ছে। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক তথ্যভাণ্ডার এখনও সক্রিয় করা হয়নি। ফলে কোনো রোহিঙ্গা পাসপোর্টের জন্য এলে ছবি এবং আঙুলের ছাপ যাচাই করে তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ফরমের সঙ্গে দেওয়া কাগজপত্র যাচাই এবং সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।

সহকারী পরিচালক বলেন, জনপ্রতিনিধিরা সচেতন না হলে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাওয়া ঠেকানো হবে কঠিন কাজ। জন্মনিবন্ধন সনদ, পুলিশ প্রতিবেদনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে পাসপোর্ট দিতে হয়। সেক্ষেত্রে কাগজপত্র দিয়ে কোনো রোহিঙ্গা পাসপোর্ট নিয়ে গেলেও কিছু করার থাকে না।

১৩জানুয়ারী,২০১৮শনিবার::ক্রাইমর্বাতা.কম/সমকাল/আসাবি

Check Also

আলিপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন জিয়াউল ইসলাম জিয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার সদরের আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।