যশোরে বিএনপি নেতা অমিতের বক্তব্যে তোলপাড়

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:    প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যশোরের নেতাদের অনেকেই আমার বাবা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের মৃত্যু কামনা করেন। তাদের অনেকেই এই মঞ্চেও আছেন। তা সত্ত্বেও আমি তাদের সঙ্গে রাজনীতি করছি।
দলের প্রতিষ্ঠাতার ৮২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করে জেলা বিএনপি।
অমিতের এই বিস্ফোরক বক্তব্যে দলের মধ্যে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সিনিয়র অন্তত তিন নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের ওই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন এর পর ভাবতে হবে আমাদের রাজনীতি করা উচিৎ কিনা। একজন শিশুর কাছে যদি রাজনীতি শিখতে হয় তাহলে তা না করাই ভালো।
সভাসূত্র জানায়, অমিতের এই চাঁচাছোলা বক্তব্যের সময় হলজুড়েও মৃদু গুঞ্জন ওঠে। সিনিয়র নেতারা পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে থাকেন।
সভা শেষে দলের নেতাদেরও এ নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষ এক নেতা বলেন, ‘যা শুনেছেন, সব সত্যি। তবে মনে রাখা উচিৎ, আমরা তার বাবার সঙ্গে রাজনীতি করেছি, করছি। আমরা তার রাজনৈতিক সহকর্মী নয়, মুরব্বী ।’
এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওই নেতা।
দলের জেলা পর্যায়ের প্রভাবশালী আরেক নেতা বলেন, ‘ঔদ্ধত্যের সীমা থাকা উচিৎ। কোথায় কী বলতে হয় ও (অমিত) তাও ভুলে গেছে।’
‘এই ধরনের বক্তব্য দেওয়ার সভা আলাদা। সেটুকু বোঝার ক্ষমতাও ওর নেই,’ যোগ করেন ওই নেতা।
আলোচনাকালে অমিত বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক তরিকুল ইসলাম। জিয়াউর রহমানই তার হাতে দলের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। শত নির্যাতন-নিপীড়নের পরও তরিকুল ইসলাম এ অঞ্চলে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। দলের সাথে কখনো বেইমানি করেননি। ’
তিনি সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অথচ আমাদের দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই এই বর্ষীয়ান নেতার (তরিকুল ইসলাম) সমালোচনা করতে দ্বিধান্বিত হন না।’
অমিতের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন বিএনপির আরেক প্রভাবশালী নেতা। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান এই অঞ্চলে দলকে সংগঠিত করতে তরিকুল ইসলামের হাতে পতাকা তুলে দেননি। তিনি পতাকা তুলে দিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট রাজ্জাক আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, মাজেদুল হক, আফসার আহমেদ সিদ্দিকীদের হাতে। তরিকুল ইসলাম তখন সেই মাপের নেতা ছিলেন না যে, তার হাতে পতাকা তুলে দিতে হবে।’
তবে, দক্ষিণাঞ্চলে দলকে সংগঠিত করতে তরিকুল ইসলামের অবদান আছে বলেও স্বীকার করেন এই নেতা।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল হুদা।
এতে আরো আলোচনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, নগর সভাপতি মারুফুল ইসলাম, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যুগ্মসম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সদর উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ নূরুন্নবী, জেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, যুবদলের মনিরুজ্জামান মাসুম, জেলা ছাত্রদল সভাপতি রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক আলহাজ আনিছুর রহমান মুকুল।
সভায় অমিত আরো বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আদালতের বারান্দায় দৌঁড়াচ্ছেন। বিচারের নামে তার কী করা হবে, তাও সবাই জানেন। দেশ ও দলের এই ক্রান্তিকালে আমাদের যশোরের নেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, কে কোন আসনের মনোনয়ন নেবেন- সেসব নিয়ে। কেউ কেউ মিডিয়াকর্মীদের ‘ম্যানেজ’ করে ইন্টারভিউও দিচ্ছেন।’

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।