চট্টগ্রামে আদনান হত্যা মৃত্যুর আগে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা, টি-শার্ট ধরে থামিয়ে ছুরিকাঘাত আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহে ছাত্রলীগ নেতা এনাম * ছুরিকাঘাত করে মঈন

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:    চট্টগ্রামে স্কুলছাত্র আদনান ইসফারকে (১৩) হত্যার বিবরণ দিয়েছে পাঁচ কিশোর। তারা জানিয়েছে, মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি ও লাঠি দিয়ে পেটানোর পর আদনান বাঁচার জন্য দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সে সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। উঠে আবারও দৌড়ে পালানোর সময় তাকে টি-শার্ট টেনে ধরে থামানোর চেষ্টা করা হয়। পরে পেটের একপাশে ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়।

শুক্রবার বিকালে আদনান হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচ আসামি আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছে।

শুক্রবার বিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমান তাদের জবানবন্দি নেন।

জবানবন্দি দেয়া পাঁচ আসামি হল- নগরীর চান্দগাঁও এলাকার দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মঈন খাঁন, সাব্বির খান ও মুনতাছির মোস্তফা, চকবাজার ডিসি রোডের হলি ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী এখলাছ উদ্দীন আরমান এবং ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে সদ্য এইচএসসি পাস করা আবদুল্লাহ আল সাঈদ।

এর মধ্যে চারজনকে ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতিরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ফয়সালের বাড়ি থেকে এবং একজনকে নগরীর বাদুরতলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার এসআই মো. এমদাদ যুগান্তরকে জানান, স্কুলছাত্র আদনান হত্যার ঘটনায় জড়িত পাঁচজন শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে আদনান খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রত্যেকে স্বীকার করেছে। তারা আরও কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

১৬ জানুয়ারি দুপুরে কোতোয়ালি থানার খাস্তগীর স্কুলের সামনে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র আদনানকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়।

অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন ছাত্রলীগ নেতা এনাম : আদনানকে (১৩) ছুরিকাঘাতে খুন করা হলেও হত্যাকারীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়নি। এটি সরবরাহ করেছিলেন এনাম হোসেন নামে এক ছাত্রলীগ নেতা।

মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতা এনামের দেয়া অস্ত্রটি সাব্বিরের কাছে ছিল। ঘটনার দিন আদনানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সাব্বির। আরমান ও সাঈদ লাঠি দিয়ে তাকে পেটায়। আদনান দৌড়ে পালানোর সময় সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। উঠে আবারও দৌড়ে পালানোর সময় মুনতাছির পেছন থেকে আদনানের টি-শার্ট টেনে ধরলে পেছনের অংশ ছিঁড়ে যায়। তখন মঈন সামনে থেকে এসে আদনানের পেটের একপাশে ছুরিকাঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় আদনান দৌড়ে খাস্তগির স্কুলের সামনে গিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। এরপর তারা গণি বেকারির পাশ দিয়ে পালিয়ে যায়।

আদনান হত্যায় গ্রেফতার পাঁচজন পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতেও পাঁচজন একই কথা বলেছে।

জবানবন্দি গ্রহণের পর আদালত পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে পাঁচজনই ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়েছে। এতে জিলহাজ নামে আরেকজন জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে।

জবানবন্দিতে সাব্বির জানায়, তাকে অস্ত্রটি সরবরাহ করেছিল এনাম। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এনামের বাড়ি রাউজানের পাহাড়তলী গ্রামে। এনাম স্থানীয়ভাবে চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রউফের অনুসারী।

কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন  জানান, আদনানকে যে অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল সেটি এনাম নামে তাদের এক বড় ভাই সরবরাহ করেছিল বলে জানিয়েছে। অস্ত্রটি অন্য একজনকে দিয়েছিল।

মঈন যে ছুরি দিয়ে আদনানকে হত্যা করেছে সেটি আইডিয়াল স্কুলের সামনের একটি দোকান থেকে নিয়েছিল বলে জানিয়েছে। এছাড়া আদনান হত্যায় আরও যারা জড়িত আছে তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

২০জানুয়ারী,২০১৮শনিবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/যুগান্তর/আসাবি

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।