অবসর নেয়ার ৯ মাস আগেই পদত্যাগ করলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:ঢাকা: ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা পদত্যাগ করেছেন। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পরইপরই শুক্রবার বিকালে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বঙ্গভবনে চিঠি পাঠান ওয়াহহাব মিঞা।

আপিল বিভাগে কর্মরত প্রবীণ এই বিচারপতির এখনো অবসর নেয়ার সময় হয়নি। চলতি বছরের ১০ নভেম্বর আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। এর আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন তিনি।

শুক্রবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। শনিবার তিনি ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেবেন। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ছুটিতে যাওয়া এবং পরবর্তীতে পদত্যাগের পর ওয়াহহাব মিঞা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এক মাসের ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠান এস কে সিনহা। ওই চিঠির প্রেক্ষিতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

তখন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ জানান, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে, আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি  নিয়োগ সংক্রান্ত আদেশে শুক্রবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্বাক্ষর করেন।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

বঙ্গভবনের মুখপাত্র মো. জয়নাল আবেদীন জানান, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের আদেশে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি। শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনে নতুন প্রধান বিচারপতিকে শপথ পড়াবেন তিনি।

উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নাম প্রস্তাব করে আসেন।

এ সময় তার সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর ছুটিতে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। এরপর থেকে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান। ১৪ নভেম্বর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতির দফতর তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’

সংবিধানে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা না থাকলেও রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রথমে আপিল বিভাগের যে বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন, তার ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে তা আইন মন্ত্রণালয়কে জানান। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিচারপতির ব্যাপারে ফাইল প্রস্তুত করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর প্রধান বিচারপতি নিয়োগের গেজেট জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।

শুরু থেকেই আপিল বিভাগের তিনজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতি হওয়ার আলোচনায় থাকলেও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে বেছে নিল সরকার।

বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি (আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে) হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হন। ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ওই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে সঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

আর এ নিয়োগের পরেই আপিল বিভাগে কর্মরত প্রবীণ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা পদত্যাগ করলেন।০২ ফেবরুয়ারী,২০১৮শুক্রুবার:ক্রাইমর্বাতা.কম/প্রতিনিধি/আসাবি

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।