‘খালেদা জিয়ার মামলার রায় বের হওয়ার আগেই বিএনপি দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দুর্নীতিবাজদের পদে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, যারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। যারাই এসবে জড়িত থাক- শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আমার দলের লোকও যদি দুর্নীতিতে জড়িত হয় তাকেও শাস্তি পেতে হবে।

বুধবার দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকে বিএনপি নেত্রীর সাজা হয়েছে। এই মামলা করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে টাকা আসে কিন্তু সেই টাকা এতিমরা পায়নি। সেই টাকা তিনি (খালেদা জিয়া) আত্মসাৎ করেছেন।

বিএনপি আসামিকে দলের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলার রায় বের হওয়ার আগেই বিএনপি দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দুর্নীতিবাজদের পদে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। এর মানে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা গঠনতন্ত্রে দুর্নীতিকে আশ্রয় দেয় আর দুর্নীতিবাজকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে, তারা জনগণের জন্য কী কাজ করবে? তারা লুটপাট করতে পারবে। মানুষ খুন করতে পারবে। দুর্নীতি করতে পারবে কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবে না।’

বিএনপি নেত্রী কারাগারে যাবেন এটা আগেই টের পেয়ে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করছে কিনা- সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত আরেকজনকে দায়িত্ব দিল, তিনি আবার দেশেও থাকেন না, পলাতক। দেশের ভেতর বিএনপিতে কি একজন লোকও নেই যে, যাকে দায়িত্ব দেয়া যায়? অবশ্য বিএনপির প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই তো দুর্নীতির মামলা রয়েছে। এই যদি রাজনৈতিক দলের অবস্থা হয়। তাহলে সেই দল দেশকে কী দেবে?’

খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল। সেই অরফানেজটা কোথায়? ২৭ বছর আগে টাকা এসেছে। সেই টাকা নয়ছয় করেছে। তখনকার আমলে দুই কোটি টাকার মূল্য কত ছিল? ওই টাকায় তখন ধানমন্ডিতে ১০/১২টা ফ্ল্যাট কেনা যেত। তারা দুই কোটি টাকার লোভ সামলাতে পারল না। সেই এতিমদের সাহায্য না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করল। আর এখানে আমাদের দোষ কোথায়? এটা খুঁজে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর মামলা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ১০ বছর ধরে এই মামলা চলে এসেছে। তারপর শাস্তি হয়েছে। সাজা দিয়েছেন তো কোর্ট। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। এই টাকা এতিমদের মধ্যে বিলিয়ে দিলে তো এটা হতো না।’

দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে দাবি করে সংসদ নেতা বলেন, ‘দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমাদের এমপি-মন্ত্রী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, তাদের (দুদকের) যদি সন্দেহ হয়, তাহলে তাদের ডেকে নিতে জিজ্ঞাস করতে পারে। আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করি না, করব না। কারও দুর্নীতি প্রমাণ হলে সে সাজা পাব। কোর্ট আদেশ দিলে আমাদের মন্ত্রীরা সেখানে গিয়ে হাজির হচ্ছে।’

বিচারের রায় নিয়ে বিএনপির কোনো কোনো নেতা হুমকি দিচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চোরকে চোর বলিও না, দুর্নীতিবাজকে দুর্নীতিবাজ বলিও না। এটাই শিক্ষা হবে বাংলাদেশে? অপরাধীদের অভয়ারণ্য হবে? তারা তো হবে না। আমরা তা চাই না। আমরা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’

বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া চলছে:

এদিকে প্রশ্নোত্তর পর্বে বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের জন্য চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী ও রাজাকারদের কোনো সম্পত্তি স্বাধীন দেশে থাকতে পারে না, রাখার কোনো অধিকার নেই।’ বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের নামে-বেনামে থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রথম ধাপ হিসেবে তাদের সম্পত্তি চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় সরকার:

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় সরকার। পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে কূটনৈতিক উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও এতে সময় লাগার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘যে কোনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চার মাসের মধ্যে তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলছে।’ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে শিগগিরই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

বিদ্যুতের ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াটে উন্নীত:

আলী আজমের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভসহ ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিবিড় তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আগামীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ১৪ হাজার ৪১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এছাড়া আরো ২০ হাজার ৭৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে।

তিনি বলেন, ৪ হাজার ৫৬৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারতের তিনটি স্থান থেকে দুই হাজার ৩৩৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে, যা ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে শুরু হবে। ইতিমধ্যে বহরমপুর এবং ত্রিপুরা থেকে মোট ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।

গত অর্থবছরে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মে. টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে:

গোলাম দস্তগীর গাজীর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, গত অর্থবছরে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মে. টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে গত অর্থবছরে মাছের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ লাখ ৫০ হাজার মে. টনের চেয়ে বেশি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন ছিল মাত্রও ২৮ লাখ ৯৯ হাজার মে.টন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের জিডিপিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের অবদান শতকরা ৫ দশমিক ২১ ভাগ। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬১ শতাংশ মানুষ জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

ইলিশ উৎপাদন:

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইলিশের আশাতীত উৎপাদনের ফলে উৎপাদন দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৯৬ হাজার মে. টনে যা মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল তিন লাখ ১৩ হাজার মে. টন। তিনি বলেন, জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ করা ছাড়াও গত অর্থবছরে মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন ২২ দিনের জন্য পরিবারপ্রতি ২০ কেজি হারে মোট তিন লাখ ৫৬ হাজার ৭২৩টি পরিবারকে মোট সাত হাজার ১৩৪ মে. টন ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য খেলার পাশাপাশি দেশীয় খেলাকেও সুযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের প্রতি আহবান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।