ঢাবি থেকে বাংলায় অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে শাহেদুজ্জামান এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে!

ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করার দরকার নেই। সরকার বা দেশের হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে আকুল আবেদন আমার একটি চাকরি দিন। আমি কাজ করে জীবন চালাতে চাই। কারণ আমি সমাজের কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাচ্ছি না।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নিউজ রুমে বসে একান্ত আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্সে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি ইউনিয়নের ছেলে শাহেদুজ্জামান। বাবা জাকির হোসেন গাভা দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক।
বাবার সমান্য বেতন টানা পড়েনের সংসাদের ছোট বেলা থেকেই শাহেদের উপরে পড়ে ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশুনা চালানোর দায়িত্বভার। তারপরও মায়ের অনুপ্রেরণায় গাভা একেএম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক। ২০০৪ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৫ সালে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কলা বিভাগের ২০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৮৯তম মেধাস্থান অধিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। তার এক বছর পরে হার্ডের দুটি বাল্প নষ্ট হয়ে মা মারা যায়। তার পর তার উপর নেমে আছে আরো দুর্দশা। তার পর থেমে থাকেনি তার জীবন। নিজের পড়াশুনার খরচের পাশাপাশি দুই ভাইয়ের খরচ চালাতে হতো।
তারপরেও অতি কষ্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স এবং সালে মাস্টর্স শেষ করে চাকরির জন্য পড়াশুনা শুরু করেন। কিন্তু বিধিবাম হঠ্যাৎ দু’চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই তার টি ছোট নষ্ট হয়ে গেছে। আলাপচারিতায় অনার্গল ইংরেজিতে কথা বলছিলেন তিনি। অন্যান্য সকাল সাধারণ মানুষের মতো নাদুস নুদুস চেহারা। চিকিৎসরা জানিয়েছে তার চোখের রেটিনা ৬০% নষ্ট হয়ে গেছে। যেটি দেখতে পান সেটি অতি সামান্য। রেটিনার ৪০% ভাগ দিয়ে নিজে চলা ফেরা করতে পারেন। সকল বস্তু আফসা আফসা দেখতে পান তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে শাহেদুজ্জামান বড় হওয়ায় সংসারের দায়িত্বভার তার উপরে ছিলো অনেকখানি। মা বিদায় নিয়েছে এক যুগ হলো। যে মা আমাকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল সেই মা আজ পাশে নেই।
শাহেদুজ্জামান বলেন, ২০১৩ সালে মাস্টার্স পরীক্ষার পরে চাকরী পরিক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহরুল হক হলে থাকতেন তিনি। হঠ্যাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চোখে ঝাপসা দেখছি। পরে চিকিৎসরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেন, এই চোখ আর ভালো হওয়া সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে চোখের যে অবস্থা সেটি ৪০ বছর বার তার বেশী সময় স্থায়ী হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মায়ের স্বপ্ন ছিলো আমি যেন বাংলায় পড়াশুনা করে বিসিএস ক্যাডার হয়ে যে কোন বাংলা বিভাগের প্রভাষক হয়। আমি সেই স্বপ্ন নিয়ে পড়াশুনা করছিলা কিন্তু আর হলো কই। পড়াশুনা শেষ করার পরই যখন চাকরির পড়াশুনা শুরু করলাম তখন চোখ গেল নষ্ট হয়ে। সরকার বা দেশের কোন হৃদবান ব্যক্তি আমার পাশে দাড়াতে তা হলে আমার জীবনটা ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারবো।

Check Also

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।