সাতক্ষীরার বাজারে নতুন পান উঠায় দাম কমতে শুরু কেরেছ

সাতক্ষীরায় ঝাল পানের কদর বাড়ছে
আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরাঃ উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম অধীক পাওয়াতে সাতক্ষীরাতে ঝালপান চাষে ঝুঁকছে চাষীরা। পান চাষ করে অনেকের ভাগ্য বদল হয়েছে। পান চাষে নিবিড় পরিচর্যা করাতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষিত বেকার যুবকেরা এ পেশায় ঝুকে পড়েছে। এছাড়া এখানকার ঝাল পানের কদর সারা দেশে। তাই ঝাল পান চাষ এ জেলাতে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এ জেলার উৎপাদিত পানের ৭০ শতাংশই রফতানি হয়ে থাকে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে। প্রচন্ড শীত ও কুয়াশার কারণে পানের কিছু ক্ষতি হলেও বর্তমানে সাতক্ষীরার বাজারে নতুন পান উঠতে শুরু করেছে। দামও বেশ বেশি। এতে খুশি পান চাষীরা।
চলতি বছর সাতক্ষীরাতে ৫৭০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। অনাবাদি জমিতে পানের চাষ হওয়াতে উৎপান খরচ অনেকটা কম। জেলার উৎপাদিত পানের ৮০ শতাংশই তালা উপজেলাতে
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায় চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলাতে পানের চাষ হয়েছে ৫৭০ হেক্টর জমিতে। সদরে আবাদ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে,কলারোয়াতে আবাদ হয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে। তালাতে আবাদ হয়েছে ৪২০হেক্টর জমিতে,দেবহাটাতে আবাদ হয়েছে ০৫ হেক্টর জমিতে ,কালিগঞ্জে আবাদ হয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে এবং আশাশুনিতে আবাদ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে।
বাজারে নতুন পান উঠায় দাম কমতে শুরু করেছে।
আবু জাহিদ। পাটকেলঘাটার খলিষখালি ইউনিয়নের মঙ্গলানন্দকাটী গ্রামের আবু তালেবের ছোট ছেলে। কথা হয় তার সাথে। মাদ্রাসা থেকে দাখিল,আলিম ও ফাযিল পাশ করার পর চাকুরি খুঁজতে শুরু করে। অভাবের সংসারে হাল ধরতে হয় এসময় তাকে। তাই সংসার চালাতে উপার্জনের পথ খুঁজতে হয়।
তাছাড়া চাকুরিতে যে পরিমাণ ডোনেশান দিতে হবে সে পুজি ও তার ছিল না। হতাশ না হয়ে জীবন যুদ্ধকে জয় করার প্রবল বাশনা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এক বন্ধুর পরামর্শে কৃষিতে ডিপ্লোমা কোর্স করার সিদ্ধান্ত নেয়। ডিপ্লোমা শেষ করে অল্প পুজি নিয়ে পান চাষ শুরু করে। মাত্র ১০ শতক জমির উপর ২০০৮ সালেতার প্রথম পান চাষের যাত্রা।
গ্রাম্য পান চাষীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫০ হাজার বিনিয়োগ করে তার প্রথম পান চাষ । ছয় মাসের মধ্যে পানে সফলতা ফিরে আসে। বর্তমানে তার ক্ষেতে কয়েক জন শ্রমিক ও কাজ করাতে হয়। আর নিজে সারা বছরই তার পান ক্ষেত পরিচর্যা করেন। সে জানালেন,পান চাষ করেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। অভাব-অনাটনের সংসারে আজ সে মোটা মুটি সুখি। পিছে ফিরে তাকে আর তাকাতে হয়নি।
তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের পানচাষী দ্বীনো বন্ধ কুমার জানান, চলতি মৌসুমে আট বিঘা জমির ওপর একটি বরজে পান চাষ করেছেন। এবার তার বরজে পানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। বাজারে পানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কাউন (১২৮০টি) পানের বাজারদর হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এবার আট বিঘা জমিতে পান চাষ করে উৎপাদন খরচ বাদে কয়েক লাখ টাকার মতো লাভ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও মঙ্গলবার স্থানীয় পাটকেলঘাটা বাজারে পান বিক্রি হয়। জেলার পাইকারী ব্যবসায়ীরা এ বাজার থেকে পান ক্রয় করে বিভিন্ন বাজারে বিক্রয়া করে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানকার পান ক্রয় করেন। এজেলাতে যত পান হয় তার ৮০ ভাগই শুধু তালা উপজেলাতে। তালা উপজেলার পান চাষীদের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যেখানে বিগত দিনগুলোতে ধান, পাট, গম, আখ ইত্যাদি চাষাবাদ করা হতো বর্তমানে সেখানে অধিকাংশ জমিতে পানের বরজ গড়ে উঠেছে। জানতে চাইলে কয়েকজন পান চাষী ও ব্যবসায়ী জানান, অন্য ফসলের তুলনায় পান চাষ অধিক লাহবান হওয়ায় তারা এ চাষকে প্রাধান্য দিয়েছে।
উপজেলার রহিমাবাদ, মোবারকপুর, খাজরা, হরিশচন্দ্রকাটী, মাছিয়াড়া, চরগ্রাম, মাগুরা, খলিশখালী .মঙ্গলানন্দকাটী,দুধলাই,বারুইপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকাতে পান চাষ বৃদ্ধি পাচেচ্ছ।
পান চাষে মুল উপাদান খৈল। বাজারে খৈলের দাম অনেক বেশী হওয়াতে চাষীরা খৈল কিনতে হিমশীম খাচ্ছে। তাদের দাবী পানচাষে সরকারি সহায়তা পেলে এবং পান চাষের সামগ্রীর দাম কমলে কেকার যুবকেরা পান চাষ করে স্বালম্বী হবে। এতে বেকারত্ব ঘুচবে ও স্বচ্ছল হবে অর্থনীতির চাকা।
সাতক্ষীরা জেলা খামার বাড়ির উপপরিচালক আব্দুল মানান জানান,কৃষকদের পান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। পান চাষীরা পরামর্শ চাইলে খামার বাড়ির পক্ষ সার্বিক সহযোগীতা করা হচ্ছে। পানের রোগ বালাই দমনে চাষীদের সহযোগীতা করা হচ্ছে।

Check Also

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে: স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে রাষ্ট্রপতি

মহান স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।