পাইলট আবিদের স্ত্রী আর নেই

পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম টপি আর নেই। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আফসানার মৃত্যুর বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

আবিদ ও আফসানার একটি মাত্র সন্তান। নাম তানভীর বিন সুলতান।

নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটির পাইলট ছিলেন আবিদ। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে উদ্বিগ্ন ছিলেন তাঁর স্ত্রী আফসানা।

প্রথমে তাঁকে জানানো হয়েছিল, আবিদ আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। পরে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ আসে। এরপর থেকে স্ত্রী আফসানা ভেঙে পড়েন।

গত রোববার সকাল থেকে আফসানা মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা বোধ করছিলেন। প্রথমে তাঁকে তাঁদের বাসার কাছে উত্তরাতেই একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়।

২০ মার্চ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালের যুগ্মপরিচালক প্রফেসর ড. বদরুল আলম মন্ডল বলেছিলেন, ক্যাপ্টেন আবিদের স্ত্রী বেঁচে আছেন।

তবে তার অবস্থা সঙ্কটপূর্ণ। তবে তার কিডনি, হার্ট লিভার সব সচল রয়েছে। তার রক্ত চাপ ১২০/৮০। কিন্তু তার ব্রেন স্বাভাবিক রেসপন্স করছে না। যন্ত্রের সাহায্যে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে।

২২ মার্চ তিনি আরও খারাপ খবর জানান। বলেন, টপির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তার কিডনি রেসপন্স কম করছে। ব্লাড প্রেসারও কমে গেছে। উন্নত যা চিকিৎসা দেশেই সম্ভব। বিদেশে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থাতেই নেই টপি।

এরপর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় এল সবচেয়ে খারাপ খবরটি। এই পৃথিবী ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন টপি।

প্রফেসর ড. বদরুল আলম মন্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। টপির মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ভিড় করেছেন তার স্বজনরা।

এর আগে, আফসানা ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ কিনা জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেছেন, তা এখনও সম্পূর্ণভাবে বলা যাবে না। তবে তার পরিস্থিতি অবনতির দিকে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার মতো অবস্থায়ও নেই।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম সাংবাদিকদের আফসানার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, আজকের পরিস্থিতি ও গত কয়েক দিনের তুলনায় খারাপের দিকে। বিশেষ করে ওনার কিডনি ফাংশন কিছুটা কমে আসছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য প্যারামিটারও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চিকিৎসা চালিয়ে যাব, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ভেন্টিলেশন সাপোর্ট নিতে পারেন।

চিকিৎসক জানান, আফসানার চিকিৎসায় অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে সাপোর্ট বেশি লাগছে। যেমন- ব্লাড প্রেসার তোলার জন্য যে সাপোর্টটা দেয়া দরকার, সেটি আরেকটু বাড়াতে হয়েছে। ব্লাড প্রেসারটা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

ডা. বদরুল বলেন, কিডনির যে আউটপুট বলি আমরা, সেটি ক্রমান্বয়ে কমছে। ওনার অবস্থা অবনতির দিকে। কিন্তু ভেন্টিলেশন উইথড্র করা বা সব সাপোর্ট উইথড্র করার মতো নয়। আগামীকালও চিকিৎসকরা যারা জড়িত, তা দেখবে।

তবে আফসানাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানান এ চিকিৎসক। তিনি বলেন, বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ যে পরিমাণ ভেন্টিলেশন তার দরকার, সেটি দেয়া সম্ভব হবে না।

শারীরিক অবস্থার অবনতি সত্ত্বেও আফসানার চিকিৎসার জন্য গঠিত ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে।

এ মেডিকেল বোর্ডের প্রধান নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের পরিচালক অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ।

তার কাছে জানতে চাওয়া হয় আফসানা ‘ক্লিনিকালি ডেড’ কিনা। এ ব্যাপারে এ চিকিৎসক বলেন, ওনার যেসব লক্ষণ দেখলাম, তাতে আমরা এখন সম্পূর্ণভাবে এটি বলতে পারব না। আমরা এখন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে তার পরিস্থিতি অনেকটা অবনতির দিকে।

ডা. দীন মোহাম্মদ জানান, আফসানার ডায়াবেটিস ছিল। স্বামীর মৃত্যুতে তিনি মানসিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত ছিলেন।

গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস-বাংলার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ক্রুসহ ৫১ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর বিমানটির প্রধান পাইলট আবিদ আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পর দিন সকালে কাঠমান্ডুর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।

আবিদের এমন করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি স্ত্রী আফসানা। স্বামীকে হারিয়ে কখনও বাকরুদ্ধ কখনও অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন- তার স্বামী মারা যাননি, সবাই মিথ্যা কথা বলছে, আবিদ ফিরে আসবে, আবিদ তাকে সঙ্গে না নিয়ে একা চলে যেতে পারে না- এমন প্রলাপ বকতেন তিনি।

স্বামীর শোকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে রোববার নিজ বাসায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। এর পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।