ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ     সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশন নির্বাচন ২০১৮-১৯
ভোটারদের বাড়ী বাড়ী যেয়ে ভোট চাচ্ছেন প্রার্থীরা।
সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশন একটি সমাজসেবা মূলক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ‘¯্রষ্টার এবাদত ও সৃষ্টির সেবা’ এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য। ১৮৮৫ সালে অবিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের ভূতপূর্ব ডিরেক্টর খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এঁর নিজস্ব অর্থায়নে ক্রয়কৃত ৪২শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশন। তিনি নিজেই এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ‘গঠনতন্ত্র’ প্রণয়ন করেন। প্রতিষ্ঠানের দখলে জমির পরিমান ৩৮শতক। কাটিয়া মৌজা নং-১০১, খতিয়ান নং- ৭,৭৪৮, ১৪৩২,১৪২৪। দাগ নং- ৭৫০, ১৪২৫, ২০৪০, ২০৪১, ২০৪৩, ২০৪৪, ২০৫১।
বর্তমানে ১২ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মে সমালোচিত এ প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেনের নিকট আবেদন করেছেন সাধারণ সদস্যরা।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্মারক নং ০৫.৪৪.৮৭০০.০১০.৬৫.০০৬.১৮/৪৬০ সদস্যদের অভিযোগ, বিতরণকৃত লিফলেট ও জেলা দায়রা জজ আদালতে মিশনের পুর্ব সীমানার প্রতিবেশি মরহুম আব্দুল গণির ওয়ারেশ উত্তরাধিকারীগণের পক্ষে আবু ছালেক’র দায়েরকৃত জি.আর মামলা নং-১৫৪/১৭ এবং জিআর ১৬৪/১৭ সূত্রে জানা যায়, যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ ও আদালতের আদেশ ছাড়াই সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিনের নির্বাহী আদেশ বলে সাবেক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাষীস চৌধুরী ও সাবেক ইউএনও নূর হোসেন সজল ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আজিজুল হক সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ (রাস্তা) বন্ধ করে আবু ছালেকের স্বত্ব দখলীয় গাছগাছালিসহ বসতভিটার জমিতে সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের সম্পত্তির দখল বুঝিয়ে দেন (ভিডিও, ছবি ও তথ্য সংরক্ষিত)।
সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের ২০১৬ সালের ১৭ জুন ম্যানেজিং কমিটির সভায় প্রতিষ্ঠানের ভূমি জরিপ, সীমানা নির্ধারণ ও প্রাচীর নির্মাণ সংক্রান্ত ৮ (আট) সদস্য বিশিষ্ট সাব কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহবায়ক ছিলেন শেখ তহিদুর রহমান ডাবলু ও সদস্য সচিব শেখ আজিজুল হক। এছাড়া অন্যান্য সদস্যরা হলেন সেলিম রহমান, নজরুল ইসলাম, আব্দুল মাসুদ, গোলাম মোস্তফা, আজিজ হাসান ও কাজী আমিরুল হক আহাদ।
প্রতিষ্ঠানের পূর্বের কমিটির ‘মাল্টি কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করার পরিকল্পনা ও অনুমোদিত নকশা করেন। কিন্তু বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আজিজুল হক কোন প্রকার সাধারণ সভা না করে মসজিদ ভেঙে মাল্টি কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নির্মাণ কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি ও নি¤œ মানের নিমাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ মুসুল্লি ও সাধারণ সদস্যদের। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজন মোল্যা বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্তকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্মারক নং- ০৫.৪৪.৮৭০০.০১০.৬৫.০০৬.১৮/৪৬০ সূত্রে আরো জানা যায়, আবু সোয়েব এবেল তার নিজ দোকান ঘরটি ডাবল ও উন্নত মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করলেও অন্য দোকানগুলিতে ব্যবহার করা হয়েছে নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী। যা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়তে পারে। অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হকের নামেও রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ’র অভিযোগ। এর আগে শেখ আজিজুল হক একাধিকবার ব্যক্তিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন (কপি সংরক্ষিত)। কিন্তু নতুন মাল্টি কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় ২০১৮-১৯ নির্বাচনে আবারও সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন তিনি। এ বিষয়ে মুসুল্লিদের অভিযোগ তিনি পদত্যাগ নাটক করেছেন। না হলে আবারও কেন নির্বাচন করছেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ২১ আগষ্ট থেকে সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক হজব্রত পালনকালীন সময়ের জন্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের জন্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হককে দায়িত্ব প্রদান করেন। আর এ সময়ে আহ্ছানিয়া মিশন আদর্শ আলিম মাদ্রাসার একজন আরবী প্রভাষক নিয়োগে ১২লক্ষ টাকার দেন-দরবার হয়েছে বলে জানা যায়। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ ফিরোজ কামাল শুভ্র, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর লিয়াকত পারভেজ, সহ সভাপতি শেখ তহিদুর রহমান ডাবলু, যুগ্ম সম্পাদক কাজী সিরাজুল হক, সদস্য কাজী আমিরুল হক আহাদ, সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আজিজুল হকসহ কয়েকজনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড’র নীতিমালা’র তোয়াক্বা না করে নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন করেন- ২০১৩ সালে দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর গাছকাটা, রাস্তাকাটা, নাশকতাসহ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবিএম মামুন হত্যা মামলার আসামী। বার বার কারাবরণকারী শীর্ষ জামাত নেতা অধ্যক্ষ মাও. আব্দুল মজিদ। তিনি জামাত-শিবিরের তান্ডবলীলায় ‘মিনি পাকিস্থান’ নামে খ্যাত আগরদাঁড়ী ইউনিয়নের গোদাঘাটা গ্রামের মৃত শহর আলীর ছেলে। আর এসব টাকা প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে মাত্র ৫০ হাজার টাকা জমা দেয়। বাকিটাকাগুলো এসব কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। আবার একজন ইসলামের ইতিহাস প্রভাষক নিয়োগের পায়তারা চালাচ্ছে অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ। বর্তমানে ওই পদটি খালি রয়েছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, শেখ আজিজুল হকের ছেলে সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের দোকান ঘর (২৫*২২ বর্গফুট) মেসার্স ফ্যান্সি ক্লথ স্টোর’র ভাড়াটিয়া শেখ জাহিদ আনোয়ার ১২লক্ষ টাকায় দোকানের পজিশন বিক্রি করে দেন। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কাজী আমিরুল হক আহাদ’র ভাই জাহাঙ্গীর আদিলের নামে দাকান ঘরটি পজিশন নিয়ে দারুল কোরান প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। অত:পর সাতক্ষীরা ০২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ভাই মীর মাহমুদ হাসান (লাকী) ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কাজী আমিরুল হক’র নিকট থেকে ১৬ লক্ষ টাকায় দোকানটি পজিশন নেন। তার কিছুদিন পরে ইউনাইটেড প্রিন্টার্স’র স্বত্বাধিকারী আবু সোয়েব এবেল’র নিকট ২০১৭ সালের ২৯ জুন তারিখে ডার্চ বাংলা ব্যাংক লি. সাতক্ষীরা শাখার ৯৯৫২৫৬৫ নং চেকের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা, ০২ জুলাই তারিখে ৯৯৫২৫৬৬ নং চেকের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা, ১২ জুলাই তারিখে ৯৯৫২৫৬৭ নং চেকের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে ৯৯৫২৫৬৮ নং চেকের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন মীর মাহমুদ হাসান লাকী এবং ০৩ জুলাই ২০১৭ সালে ৯৯৫২৫৬৯ নং চেকের মাধ্যমে ১লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শেখ আজিজুল হক। যাহার ব্যাংক এস্টেটমেন্ট-এ উল্লেখ আছে (সকল প্রমাণ সংরক্ষিত)। অথচ, মিশনের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক একই সময়ে চুক্তিপত্র সম্পাদনে স্বাক্ষর করেন। স্থানীয় মুসুল্লিদের দাবী এই ২১ লক্ষ টাকা গেল কোথায়?
আহ্ছানিয়া মিশন জামে মসজিদের ভাড়াটিয়া দোকানঘরগুলো নিয়ে চলতে থাকে এ ধরনের নানা অভিযোগ! দোকানঘর বরাদ্দের শর্তাবলীর ১১ নং এ বলা হয়েছে, ২য় পক্ষ দোকান ঘরটি ভাড়াটিয়া স্বত্ব গোপনে/প্রকাশ্যে অন্য কাহারও নিকট ভাড়া বা সাবলেট দিতে পারিবেন না। কিংবা কাহারও সহিত পার্টনারশীপে ব্যবসা করিতে পারিবেন না। করিলে সয়ংক্রিয়ভাবে চুক্তিপত্র বাতিল বলিয়া গন্য হইবে। স্বেচ্ছায় দোকানঘরটি ছাড়িয়া দিতে চাহিলে ১ম পক্ষ (মিশন কর্তৃপক্ষ) বরাবর হস্তান্তর করিতে বাধ্য থাকিবেন।
এদিকে মিশনের কোন প্রকার সাধারণ সভা না দিয়ে এবং পরিকল্পিতভাবে চাঁদা না নিয়ে কিছু সদস্যের ভোটাধিকার বাতিল করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত সেই আরবী প্রভাষক নাসির উদ্দিন জানান, টাকা ছাড়া কি চাকরি হয়? তবে লেন দেনের কথা অস্বিকার করেন তিনি।
অধ্যক্ষ মাও. আব্দুল মজিদ বলেন, এব্যাপারে সদর এমপি মহোদয়ের সুপারিশ ছিল। আর্থিক লেন দেনের বিষয়টি অস্বিকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে শেখ আজিজুল হক বলেন, ‘মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক নিয়োগে ১২ লক্ষ টাকা লেনদেনে আমি জড়িত নয়। আমি তখন হজ পালনের জন্য মাদিনায় অবস্থান করছিলাম। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাজী সিরাজুল হক। উনি টাকা-পয়সা নিয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে আমি প্রার্থী না হলে আমাকে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে সহ-সভাপতি শেখ তহিদুর রহমান ডাবলু। বর্তমানে মিশনের আবু সোয়েব এবেল তার একটি ঘরের বিপরীতে ২টি নেয়ার পায়তারা করছে। এ ধরনের বর্মকান্ড অব্যহত রাখতে মিশনের বর্তমান কমিটির কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে নিয়মিতভাবে তাদের পিছনে অর্থ যোগান ও প্রতিদিন ভুড়ি-ভোজের আয়োজন করছে। যেটা মুসুল্লি ও সাধারণ সদস্যদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রীয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাধারন সদস্যরা জানান, এবেল মিশনের কোন সাধারণ সদস্য না হয়েও এই মাল্টি কমপ্লেক্স নির্মাণে এককভাবে তদারকি করছে। এতে স্থানীয় মুসুল্লি ও সুশীল সমাজের মধ্যে চরম অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি এবেল এহেন কর্মকান্ড চাপা দিতে তার মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

Please follow and like us:

Check Also

রাজাপুর আল- হেরা জামে মসজিদের কমিটি গঠন

সাদী হাসান, চাম্পাফুল প্রতিনিধিঃ কালীগঞ্জ উপজেলা রাজাপুর আল- হেরা জামে মসজিদে নতুন কমিটি গঠন করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।