সাড়ে ৬ কোটি টাকার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে সাতক্ষীরা পিডিবি #প্রশাসন ও পৌরসভার কাছে বকেয় সাড়ে ৫ কোটি টাকা

আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরাঃ জনবল সংকট ও বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কারণে নাজুক অবস্থায় রয়েছে সাতক্ষীরা ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (পিডিবি)। চলতি মাস পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির সাড়ে ৬ কোটি টাকার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল অনাদায়ী রয়েছে মুষ্টিমেয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে হাতেগোনা সরকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। বার বার চিঠি দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না সাতক্ষীরা পিডিবি কর্তৃপক্ষ। ফলে কর্মচারীদের বেতন ও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারী এ কোম্পানিটি। এতে পডিবির যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসি। র্লোডশেডিং এর কবলে পড়ছে পৌরসভার ৩২ হাজার ৮শ গ্রাহক।
সাতক্ষীরা ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (পিডিবি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদুল ইসলাম খান এর অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ইংরেজি তারিখ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় পিডিবির বকেয়া বিল রয়েছে ৬ কোটি ৬২ লক্ষ ৬ হাজার ৭৯৫ টাকা। এসব অনাদায়ী বকেয়া বিলের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে সরকারী প্রতিষ্ঠান, পৌরসভা ও রাজনৈতিক ব্যক্তির নামে।
সূত্র জানায় সাতক্ষীরা পিডিবির অধীনে ৩২ হাজার ৮৭৪টি গ্রাহক রয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিদিনের গড় চাহিদা ১৪ মেগাওয়াট। জেলাতে মোট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৮৬ মেগাওয়াট। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ এ ৩ লক্ষ ৩৭ হাজার গ্রাহকের জন্য চাহিদা রয়েছে ৭৪ মেগাওয়াট। ৮৮ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৮৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা জানান বিনেরপোতা উপকেন্দ্রের উপসহকারী। পিডিবিতে বিদ্যুৎ এর কোন ঘাটতি না থাকলেও লোর্ডশেডিং রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে বিদ্যুত বিভাগের সব কাজ সময় মত করা সম্ভব হয়না বলে পিডিবি কর্তৃপক্ষ জানান। ৬৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত আছে ৪৩ জন। ফলে একদিকে জনবল সংকট অন্য দিকে বকেয়া বিল আদায়ে প্রতিষ্ঠানটি হিমশিম খাচ্ছে। অফিস সময়ের বাইরেও কর্মকর্তা কর্মচারী গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
পিডিবি অফিস সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারী ২০১৮ পর্যন্ত বকেয়া বিলের মধ্যে সাতক্ষীরা পৌরসভার রয়েছে, ৩ কোটি ৫ লক্ষ ১৫ হাজার ২৩৫ টাকা জেলা দায়রা জর্জ আদালতের রয়েছে ২৫ লক্ষ ৪ হাজার ৬৬৬ টাকা, চিপ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রয়েছে, ৭ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯২৫ টাকা জেলা শিল্পকলা একাডেমির ৫ লক্ষ ১২ হাজার ৯২৩ টাকা,এসপি অফিস সাতক্ষীরার প্রায় ৪০ লক্ষ, সরকারী বালিকা বিদ্যালয় ৭ লক্ষ ৬২ হাজার, কুলিয়া ইুউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর প্রতিষ্ঠান আসাদুল মাকের্টে ২টি বিলে ৪ লক্ষ ৭৩ হাজার,পুরাতন সাতক্ষীরার ডাঙ্গীপাড়ার মদীনা আইস ফ্যাক্টরী এর মালিক বজলুর রহমানের কাছে ৫লক্ষ ৩৮ হাজার ২৯২ টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া ইরি মৌসুমে কৃষকদের কাছে বিদ্যৎ চালিত মটরের বকেয়া রয়েছে ৬৫ লক্ষ ১৭ হাজার ৭৪২ টাকা। ধান উঠার সাথে সাথে কৃষকরা তাদের বকেয়া বিল পরিশোধ করবে বলে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ১৪টি হিসাবের অনুকুলে ৩ কোটি ০৫ লক্ষ ১৫ হাজার ২৩৫ টাকা পিডিবির বিদূুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। যার মধ্যে মার্চ ১৫ হতে ফেব্রুয়ারী ১৮ পর্যন্ত শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক সংলগ্ন পানির পাম্প পরিচালনা বিদ্যুৎ এর বকেয় রয়েছে ১ কোটি ২০ লক্ষ ৯৩ হাজার ৯৭৩ টাকা,পানির পাম্প পলাশ পোল বাবদ ১ কোটি ১৬ লক্ষ ১ হাজার ৩২১ টাকা, খড়িবিলা পানির পাম্প বাবদ ১৯ লক্ষ ৬৮ হাজার ২৭ টাকা,কাটিয়া আমতলা ১৭ লক্ষ ৮২ হাজার ২৫৫ টাকা ,পৌরসভা বাকাল ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার ৮৫৩ টাকা,সাতক্ষীরা নিউমার্কেট দ্বিতীয় তলা আগষ্ট ১৭ হতে ফেব্রুয়ারী ১৮ পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার ৯৫৭ টাকা,বাসটার্মিনাল সাতক্ষীরা বাবদ ৫ লক্ষ ৪২ হাজার ২৮৯ টাকা সহ পৌরসভার নিজস্ব নামে শহওের ১৪টি হিসাবের অনুকুলে পিডিবির এসব বকেয়া টাকা রয়েছে।
এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারি কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড ১০ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋন গ্রহণ করেছে সরকারের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বলে সূত্র জানায়। সারা দেশে থেকে বকেয়া বিল আদায় করতে পারলে ঋণ পরিষোধ করতে পারবে কোম্পানিটি বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
সাতক্ষীরা পৌর মেয়ার আলহাজ্ব তাসকিন আহম্মেদ চিশতি জানান,বকেয়া বিল পরিশোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। টাকা পেলে পরিশোধ করা হবে।
ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (পিডিবি) সাতক্ষীরা এর আবাসিক নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, বকেয়া বিল আদায়ে জোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েক দফায় চিঠিও দিয়েছি। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর পর ও সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মোটা অংকের বকেয়া বিল বাকি রয়েছে। তিনি আরো জানান, বকেয়া বিল আদায় করতে পারলে প্রতিষ্ঠানটি জনগণের মাঝে আরো বেশি সেবা দিতে পারবো।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।